কেমন রেসপন্স ‘কৃষ্ণকলি’ থেকে?
এই যে পুজোর মরসুম গেল আমাদের, দুর্গাপুজো, কালীপুজো, জগদ্ধাত্রী পুজো, আমি তো কার্তিক পুজোতেও গিয়েছিলাম। আগে সবাই শর্বরীদি বলত। এখন সবাই ‘গুরুমা’ বলে। একটা চরিত্রের এই ভয়ঙ্কর পপুলারিটি, এটা তো গ্রেট অ্যাচিভমেন্ট। এটা ৪৬ সপ্তাহ চলছে আমাদের। সব চ্যানেলের মধ্যে আমাদের হায়েস্ট টিআরপি।
গান তো এই ধারাবাহিকের অন্যতম বিষয়। আপনার কাছেও গান গাওয়ার অনুরোধ আসে?
আরো পড়ুন : মোবাইলে বুঁদ হয়ে থাকা বসিরহাটের আশিককেই খেতাব দিল ইউটিউব
আপনার এই চরিত্রের সাজটাও একেবারে অন্যরকম।
এটার একটা গল্প আছে। আমাদের প্রোডিউসার, ডিরেক্টর সুশান্ত, ওর থেকে ২০০৪ থেকে সম্পর্ক আমার। ও খুব ভাল ব্রিফ করে। যে দিন এই চরিত্রের লুক সেটের জন্য গিয়েছিলাম যে ভাবে ডিজাইনার সাজিয়ে দিয়েছিল সেটা দেখে ওর পছন্দ হয়নি। একটা বড় সিঁদুরের টিপ। আর আটপৌরে করে শাড়ি পরা ছিল আমার। চরিত্রটা তো ও মনে মনে এঁকেছে, ফলে ওর দেখাটা আলাদা। ও মেকআপ আর্টিস্টকে ডেকে বলল, আমি ভেবেছি মাথায় গাঁদা ফুল দেবে। ছোপ ছোপ আঁকবে। ডিজাইনার শাড়ি, গয়না পরবে। সে ভাবে সাজানোর পর ওর পছন্দ হল। গান গেয়ে যে পয়সাটা রোজগার হয় এই গুরুমা সেটা শো অফ করে। শ্যামাদের দারিদ্রকে ও উপহাস করে। সিরিয়ালটা শুরু হচ্ছে যখন সুশান্ত বলেছিল, দিদি অহঙ্কারটা নাকে রেখ। একটু একটু করে গুরুমা শর্বরীকে গ্রাস করে নিল, এটা বলতে পারি।
কিছুদিন আগে বড় সমস্যা ফেস করেছে ইন্ডাস্ট্রি। মুখ্যমন্ত্রীও হস্তক্ষেপ করেছিলেন। তার পর পরিস্থিতি কি কিছু বদলেছে?
আমার এমনও অভিজ্ঞতা রয়েছে, ২২ ঘণ্টা টানা শুট করেছি টানা ২২ দিন। এখন যে সময়টা ১৪ ঘণ্টায় সীমাবদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে, এতে কাজের কোয়ালিটিও ভাল হয়েছে। বিশ্রাম পাচ্ছেন শিল্পীরা। অনেক স্মুথ হয়েছে গোটা ব্যাপারটা। আমরা প্রত্যেকে মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে রেমুনারেশন পেয়ে যাচ্ছি। ১৪ ঘণ্টার বেশি খুব একটা কাজ হচ্ছে। রাত ১০টার মধ্যে বেশিরভাগ শুটিং শেষ হয়ে যাচ্ছে।
শুটিংয়ের ফাঁকে ফোটোশুট।
তা হলে তো একের বেশি ধারাবাহিকে কাজের সুযোগ বেড়েছে?
সেটা মনে হয় ঠিক নয়। এখন যা সিচুয়েশন দুটোর বেশি কাজ দুটো ডিফারেন্ট হাউজে করা যাবে না। ফুল ডেট ছাড়া কাজ করা যাচ্ছে না। ফলে দুটো করলে সবার সঙ্গেই সম্পর্কটা ভাল থাকবে। আর কাজের পর বাড়িতেও তো সময় দিতে হবে, নাকি? আমার আগে একই হাউজের ‘জয়ী’ চলছিল। সেটা এখন অফ আছে। ফলে একটা অন্য কাজের কথা ভাবছি।
টিভির পাশাপাশি আপনি তো নাটক নিয়েও খুব ব্যস্ত?
থিয়েটার আমার জীবনের চালচিত্র। আসানসোলে বাড়ি ছিল আমাদের। আমি-বাবা-মা-ভাই চারজনেই থিয়েটার করতাম। আমার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের প্রেম বাবার হাত ধরেই। অভিনয়টা করতেই হবে, এটাও বাবার হাত ধরেই শেখা। সন্ধেবেলা ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করে। আমি জানতাম সন্ধেটা রিহার্সালের টাইম। রাত্তিরে পড়ব, ভোরবেলা উঠে পড়ব। সন্ধেবেলা থিয়েটার করব। এ ভাবেই বড় হয়েছি। আমার থিয়েটার দল রয়েছে, ‘তিতাস’। আমাদের প্রথম প্রোডাকশন ছিল বাদল সরকারের সারা রাত্তির। তার পর আরও তিনটে নাটক করি। সামনেই মঞ্চস্থ হবে আমাদের পঞ্চম প্রযোজনা, ‘তবু অনন্ত জাগে’। পরিচালক আবির।
বিষয় কি রবীন্দ্রনাথ?
হ্যাঁ, রবীন্দ্রনাথ। ওঁর ব্যক্তিজীবনে পাওয়া শোক এবং সেটাকে অতিক্রম করে জীবনের জয়গান যে উনি গেয়েছেন, সেটাই বিষয়। মৃত্যু সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের ফিলজফি বদলে গিয়েছে প্রতি মুহূর্তে। ১৮ ডিসেম্বর আমাদের প্রথম শো আইসিসিআরে। ১৫টা গান রয়েছে এই নাটকে। দুটো কবিতা আবৃত্তি করবেন শিল্পীরা। এটা আদর করে করা থিয়েটার, দর্শককে এটুকু বলব।
যৌন হেনস্থা #মিটু নিয়ে বহু আলোচনা চলছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। টলিউডের ভিতরের চেহারাটা কেমন?
আমি ১৯ বছর ধরে কাজ করছি এখানে। খুব দায়িত্ব নিয়ে বলছি, আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে কখনও কোনও কিছু আমার ইচ্ছের বাইরে হতে পারে না। এটা এত দিনের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। মতের বাইরে গিয়ে কোনও কিছু করতে বাধ্য করা হয়েছে বলা হলে, সেটা সম্পূর্ণ অপপ্রচার।
কারা করেন এই অপপ্রচার?
এখানে কেউ কেউ রাতারাতি স্টার হয়ে পড়েন। আবার কেউ পারেন না। যারা পারেন না তাদের মধ্যে ঈর্ষা তৈরি হয়। সেখান থেকে বলা হয় এই কথাগুলো। আর একটা কথা বলছি, শর্টকাট যা কিছু তার মধ্যে দ্বিচারণ থাকবেই। যেটা সহজে পাইয়ে দেয়, সেটা কিছুতেই পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হতে পারে না।
অভিনয়ের পাশাপাশি আপনি তো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বও বটে। সেই জগতে #মিটু?
ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির মতো একই উত্তর হবে আমার।