Monday, December 23
Shadow

ভাইরাল ‌’তেরা হিন্দুস্তান হ্যায়, মেরা পাকিস্তান হ্যায়’ (ভিডিওসহ)

ভাইরাল

ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের প্রতীক হিসেবে নিজের বাড়ির মধ্যেই দেয়াল দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। দেয়ালের দু’পাশে দু’টি রান্নাঘর। তার একটিতে রয়েছেন পাকিস্তানের এক মুসলিম নারী এবং অন্যটিতে রয়েছেন ভারতীয় হিন্দু নারী। তাদের এ ধরনের উপস্থাপনের মাধ্যমে সীমান্ত নিয়ে বিরোধের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।

তবে গানটিতে পাকিস্তানের টেলিভিশনের জনপ্রিয় অভিনেত্রী বুশরা আনসারি ঠিক কী বোঝাতে চেয়েছেন, সেটা পুরো গান শুনলেই বোঝা যাবে। গানটির কথা ভাষান্তর করলে দাঁড়ায়, শোনো আমার মিষ্টি প্রতিবেশী/চড়ুই আর কাক সীমান্ত পেরিয়ে উড়ে বেড়াই অবাধে/নিয়ে যায় আমাদের খাবার/তাদের ভিসা দেয় কোন অফিস?/বড় সাধ জাগে আমি পাখি হবো/যখন খুশি তোমায় করবো আলিঙ্গন।

গানটি এমন এক সময় প্রকাশ করা হলো, যখন ভারতের লোকসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানবিরোধী প্রচারণায় নেমেছে ক্ষমতাসীন বিজেপি। অন্যদিকে বুশরা আনসারির চার মিনিটের এই গানটি ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশেও ভাইরাল হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে নারী শিল্পীর গাওয়া গানে মডেল হিসেবে নারীই থাকার কারণে সেখানকার নারীদের কাছে বিশেষভাবে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।

দেখুন সেই ভিডিও

জানা গেছে, পাঞ্জাবে মোট ভোটারের ৪৭ শতাংশ নারী। চলতি বছরের ১৯ মে সেখানে লোকসভা নির্বাচন। হামসে মে জায়া শিরোনামের এই গানটি এবারের নির্বাচনে সেখানে প্রভাব ফেলবে বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ, বিজেপি যেখানে পাকিস্তানবিরোধী কথা বলে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন; তার বিপরীতে দাঁড়িয়ে বুশরা আনসারি বলেছেন সম্প্রীতির কথা। দেয়ালের দু’পাশে দুই নারীকে রেখে তাদের প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মানবতার কথা বলেছেন।

ওই দুই নারীর হৃদয়স্পর্শী কথোপকথন অনেকটাই বিস্ফোরকের মতো কাজ করেছে। সম্পর্ক, রাজনীতি, সীমান্ত, মানবিকতা নিয়ে কথা বলা হয়েছে গানটিতে। যেগুলো হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার মতো। সেখানে কথা বলা হয়েছে, দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করা পরিবারের ব্যাপারে, ক্ষুধার্ত শিশুর ব্যাপারে এবং খাবারের থালার ব্যাপারে; চাইলেও যেখানে দেয়ালের ওপার থেকে কোনোকিছু এপারে স্থানান্তর করার উপায় নেই।

গানটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে ব্যাপকহারে ভাইরাল হচ্ছে। বিশেষ করে ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপে ভাইরাল হচ্ছে বেশি। এছাড়া ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে গানটি।

তিন বোন মিলে গানটি দর্শকের সামনে তুলে ধরেছেন। তাদের এক বোন বুশরা আনসারি (৬১); সঙ্গীতশিল্পী এবং পাকিস্তানের টেলিভিশনের জনপ্রিয় অভিনেত্রী। তিনি বলেন, আমার বড় বোন নিলুম আহমেদ বশির (৬৬) গানটির কথা লিখেছেন। আর আমার ছোট বোন আসমা আব্বাস (৫৬) এই গানে আমার সঙ্গে অভিনয় করেছেন।

তিনি আরো বলেন, আমরা কখনো ধারণাও করিনি যে, একটি ঘরের মধ্যে দৃশ্যধারণ করা গানের ভিডিও প্রকাশের স্বল্প সময়ের মধ্যে দু’দেশ থেকে এরকম প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাবে। মূলত সেসব নারীদের জন্য এই গান, যারা গৃহে আবদ্ধ থাকে এবং বাস্তবতা এবং যুদ্ধের ভয়াবহতা সম্পর্কে জানে না। তাদেরকে জানানোর জন্যই গানটি।

গত ৩ এপ্রিল গানটি ইউটিউবে আপলোড করা হয়েছে। সেসময়ই আনসারি বলেন, ভারতের লোকসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গানটি প্রকাশ করা হচ্ছে না। বরং দু’দেশের মধ্যে বিরাজমান উত্তেজনা প্রশমনের জন্যই গানটি।

তিনি আরো বলেন, গত মাসে যখন আমার বোন এই কবিতা লেখে। তখনই আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি, যতো দ্রুত সম্ভব এটির দৃশ্যধারণ করে শান্তির বার্তা দেব। কোনোভাবেই ভারতের লোকসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নয়, বরং শান্তির বার্তা দিতেই এই পদক্ষেপ নিয়েছি আমরা।

তিনি আরো বলেন, তার পরেও যদি নির্বাচনে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে এই ভিডিও নারীদের অনুপ্রেরণা দেয়, তবে সেটা তাদের ব্যাপার। কারণ, যুদ্ধে নারীরাই সবচেয়ে বেশি বিপদের মধ্যে থাকে।

বুশরা বলেন, ভারত থেকে অনেকেই এ গানটির ব্যাপারে তাদের কাছে প্রশংসামূলক বার্তা পাঠিয়েছেন। আবার অনেকে এই বোনদেরকে ভারতের দালাল বলতেও ছাড়েননি।

অন্যদিকে পাঞ্জাবের বিজেপির প্রধান সৈয়দ মালিক বলেন, বুশরা আনসারি এবং অন্যান্য শিল্পীদের উচিত, সবার আগে পাকিস্তানের সরকার এব্ং সে দেশের সেনাবাহিনীকে এটা বলা যে, তারা যেন সন্ত্রাসীদের অর্থায়ন বন্ধ করে; যারা ভারতে হামলা চালাচ্ছে। উরি কিংবা পুলওয়ামার ঘটনা প্রমাণ করে যে, সন্ত্রাসের কারখানা হলো পাকিস্তান।  এখন পর্যন্ত তাদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটেনি। সেখানে একপাক্ষিকভাবে শান্তি ও বন্ধুত্ব সৃষ্টি করা যায় না। নারী ভোটার কিংবা যে কোনো ভোটার এ ধরনের ভিডিও দেখে প্রভাবিত হবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!