পৃথিবীর নানার প্রজাতির প্রাণীতে সমৃদ্ধ একটি অন্যতম নিরক্ষীয় রেইনফরেস্ট বোর্নিও দেখতে ঘুরতে যান মালয়েশিয়া ।
মালয়েশিয়া সত্যিই এক বিস্ময়কর জায়গা। এর একদিকে রয়েছে শশব্যস্ত নগরী, ঔপনিবেশিক স্থাপত্য এবং সুদৃশ্য সমুদ্রসৈকত। আবার অন্য দিকে রয়েছে ওরাংওটাং, গ্রানাইটের চূড়া, এবং আদিম উপজাতি সমৃদ্ধ বনাঞ্চল। হ্যাঁ আমরা এখন বোর্নিওতে, বোর্নিও একটি বিশাল রুক্ষ দ্বীপ, যা মালয়েশিয়ার সাবাহ ও সারাওয়াক, ইন্দোনেশিয়ার কালিমানটান এবং ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর দেশ ব্রুনেইর সাথে সীমানা ভাগাভাগি করে নিয়েছে। বোর্নিও আকারে বেশ বড়, বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম দ্বীপ, এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে দুঃসাহসিক অভিযানের স্থানগুলোর মধ্যে একটি। আপনি এখানে ভিন্নমাত্রার স্বাদ উপভোগের দারুণ সুযোগ পাবেন।
দুঃসাহসিক রোমাঞ্চের জন্য মালয়েশিয়া
চরম দুঃসাহসিক রোমাঞ্চের জন্য এখানে ৪,০৯৫ মিটার জুড়ে সাম্রাজ্য বিস্তার করে আছে কিনাবালু পর্বত। পর্বত আরোহণের জন্য এটি দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার সর্বোচ্চ পর্বত। মোট ৮.৭২ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে চলার জন্য বেশ কষ্টসাধ্য। কিন্তু প্রতি ১০০ মিটার অতিক্রম করার সাথে সাথে প্রাকৃতিক দৃশ্যের পরিবর্তন দেখে আপনি নিশ্চিতভাবেই এর প্রেমে পড়ে যাবেন। যখন আপনি এর চূড়ায় পৌঁছাবেন আপনি জয়ের স্বাদ পাবেন। মেঘের উপর থেকে সূর্যোদয়ের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে আপনার মনে হবে আপনি পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু স্থানে আছেন। যাই হোক, হাইকিংয়ের জন্য পানিরোধী জ্যাকেট, একটি ছোট্ট রাকস্যাক, হেড টর্চ এবং বেশি বেশি শক্তির যোগানকারী খাবার নিতে ভুলে যাবেন না।
সামুদ্রিক জীবন
সিপাদান দ্বীপকে একসময় শিল্পের একটি আদিম টুকরো বলা হতো। দুনিয়ার নানান প্রান্তের ডুবুরিরা একে বিশ্বের সেরা ৫টি ডুব দেওয়ার স্থানের একটি হিসেবে ভোট দিয়েছেন। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত মালয়েশিয়ার একমাত্র সমুদ্র ঘেরা দ্বীপটি আকারে খুবই ছোট। এই দ্বীপটির চারপাশে হেঁটে আসতে বড়জোর ২৫ মিনিট সময় লাগবে। কিন্তু এর বৈচিত্র্যময় সামুদ্রিক জীবনের কারণে সারা দুনিয়ার মানুষকে আকৃষ্ট করে দ্বিপটি। টলটলে স্বচ্ছ পানি বেষ্টিত এই দ্বীপটি যেন কিছু কিছু প্রজাতির প্রাণীর জন্য একটি গুপ্তধনের মধ্যে থাকা একটি আস্ত মুকুট।
নানান জাতের গ্রীষ্মম-লীয় পাখির জন্যেও বিখ্যাত এই দ্বীপ। এসব পাখির মধ্যে রয়েছে সামুদ্রিক ঈগল, মাছরাঙা, সানবার্ড, স্টার্লিং এবং কাঠপায়রা। শক্ত খোলসযুক্ত নামকরা প্রাণীগুলোর মধ্যে এখানে আছে নারিকেল কাঁকড়া। যাদের কাজ হলো সৈকতের আশপাশের ঝোপঝাড়গুলোতে ইতি উতি ছুটে বেড়ানো। এই ছোট্ট প্রবাল দ্বীপে ডাইভিং করার সময় প্রায় নিশ্চিতভাবে আপনার সাথে দেখা হয়ে যাবে কচ্ছপ, স্থানীয় জ্যাক, বাম্পহেড প্যারটফিস এবং বারাকুডার সঙ্গে।
ওরাংওটাংয়ের সাক্ষাৎ
বোর্নিওতে প্রাকৃতিকভাবে ওরাংওটাং দেখতে পাওয়া যায়। প্রতি বছর হাজার হাজার দর্শনার্থী বিশ্বের সবচেয়ে বড় ওরাংওটাংদের প্রাকৃতিক আবাসস্থল সেপিলক পুনর্বাসন কেন্দ্রে জড়ো হন এই ছোট্ট কমলা প্রাণীটিকে একনজর দেখার জন্য। সুমাত্রা ছাড়া ওরাংওটাংদের জন্য এটিই বিশ্বের একমাত্র প্রাকৃতিক আবাসস্থল, যেখানে নিশ্চিতভাবে এই প্রাণীটির দেখা মেলে। যেকোনো বিখ্যাত চিড়িয়াখানার চেয়ে কোনও অংশে কম নয় এই কেন্দ্র। কারণ আপনি হয়তো খুব কাছ থেকেই দেখতে পারবেন খাঁচার বাইরে থাকা এই প্রাণীটাকে। তবে আপনাকে একটু শোম্যানশিপ দেখার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এর মাঝে কিছু কিছু ওরাংওটাং মানুষের এতটাই কাছাকাছি যেতে অভ্যস্ত যে তারা তাদের ভক্তদের উদ্দেশ্যে চুমুও ছুড়ে দেয়।
প্রকৃতির কোলে
বোর্নিওতে অনেকগুলো ইকো-লজ রয়েছে। আমি পরামর্শ দিব পুরষ্কার বিজয়ী সুকাউ রেইনফরেস্ট লজে থাকার জন্য। এটি বোর্নিওর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পানিপথ কিনাবাতানগান নদীর তীরে অবস্থিত। বোর্নিওর অনেক চমৎকার বন্যপ্রাণীর আবাস এটি। এখানে আপনি নিজেকে সঁপে দিতে পারে প্রশান্তিময় রেইনফরেস্ট ও এখানে বাস করা রাজকীয় সব পাখির কলকাকলি, বোর্নিওর বিখ্যাত হাতিশুঁড় বানর, ওরাংওটাংসহ সাত প্রজাতির প্রাইমেট ও ক্ষুদ্রাকৃতির হাতির পালের মাঝে। রেইনফরেস্টের ভেতরে হেঁটে চলার জন্য বা কাঠের নৌকা ভ্রমণের জন্য আপনি রিমবা ওরাংওটাং লজ বেছে নিতে পারেন।
মারি মারি
কোটা কিনাবালু থেকে মাত্র ২৫ মিনিটের দূরত্বে মারি মারি কালচারাল ভিলেজের অবস্থান। এটি এমন একটি গ্রাম যা নরশিকারিদের জন্য কুখ্যাত ছিল। এই গ্রামে আপনি সাবাহান জাতিগোষ্ঠীর বাজাউ, লুনদায়াহ, মুরুত, র্যাঙ্গাস এবং দুসুন উপজাতির পূর্বপুরুষদের বানানো এবং তাদের ঐতিহ্যবাহী নানারকম বাড়ির সাথে পরিচিত হবেন। শত অভিজ্ঞতা অর্জনের মাঝে সেখানকার ছোট্ট কুঁড়েঘরগুলোতে ঢুঁ মেরে নিবেন, কেননা সেখানে সাবাহান জীবনযাপনের দৃশ্য জীবন্ত হয়ে ওঠে। যেমন ধরুন, ব্লো-পাইপ বানানোর প্রক্রিয়া শেখা কিংবা বাঁশ দিয়ে আগুন জ্বালানো বা উল্কি আঁকা। আপনি সেখানে প্রতিটা উপজাতির কাছ থেকে সুস্বাদু সাবাহান খাবারের নমুনাও চেখে দেখতে পারেন।