উচ্চভিলাষী জীবন থেকে রাস্তার খাবার, শপিং মল থেকে নৌ বিহার, ‘লায়ন সিটি’ সিঙ্গাপুরে গিয়ে এর প্রেমে পড়তে আপনার জন্য দুটো দিনই যথেষ্ট।
একটি স্মৃতিময় ফ্লাইট শেষে সবে মাত্র সিঙ্গাপুর চ্যাংগি বিমানবন্দরে নামলেন এবং ৪৮ ঘণ্টার কিছু বেশি সময় হাতে আছে আশপাশে ঘুরে দেখার জন্য। তো কী করবেন আপনি? দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বহুমাত্রিক সংস্কৃতির ধারক এ শহরতলীর উল্লেখযোগ্য জায়গাগুলো চষে বেড়াতে যেন সুবিধা হয়, এ জন্য জানিয়ে দিচ্ছি একটি দ্রুত দিনলিপি।
সিঙ্গাপুরে প্রথম দিন
বিকাল ৪টা: যেহেতু মাত্র এসে পৌঁছেছেন, তাই অত ব্যস্ত হওয়ার কিছু নেই। আয়েশ করে অর্চার্ড রোডে খানিকটা হেঁটে নিন। ২ দশমিক ২ কিলোমিটার দীর্ঘ এ প্রশস্থ বীথিকাকে বলা হয় সিঙ্গাপুরের কেনাকাটা আর বিনোদনের প্রাণকেন্দ্র। অগণিত বিলাসি দোকানপাট, কফি চেইন, কাফে, নাইটক্লাব আর হোটেলে ভরপুর এটি। সিঙ্গাপুরের স্থানীয় খাবারের স্বাদ কোপিটিয়াম নামের বিশালাকার ফুড কোর্টে একটা কিছু চেখে দেখতে পারেন।
সন্ধ্যা ৭টা: মেরিনা সেন্টারে অবস্থিত সানটেক সিটিতে যেতে একটা এমআরটি (সাবওয়ে পরিবহন) নিয়ে নিন। সেখানে পাবেন অতিকায় শপিং কমপ্লেক্স, যা কি-না সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে বড় মলের একটি। মলে ঢুঁ মারা শেষ হলে পাশের এসপ্লানেডে চলে যান। জলের সামনে থাকা এ জায়গাটি পারফরমেন্স আর্ট প্রদর্শনের জন্য বিখ্যাত। এখান থেকে সিঙ্গাপুর রিভার দেখা যায় এবং এটি সিঙ্গাপুর ফ্লায়ার ও মারলিয়ন পার্কের মাঝামাঝিতে অবস্থিত।
রাত ৯টা: সময় হয়েছে স্ট্যামফোর্ড হোটেল সুইসসোটেল-এর ৭০ তলায় জান-এ রাতের খাবার খাওয়ার। ফরাসি পাচক জুলিয়াঁ রয়্যার পরিচালিত রেস্তরাঁটিকে বলা যায় ভোজনরসিকদের স্বর্গ। এর প্রতিটি খাবারই মুখরোচক, তাজা, নতুনত্বে ভরপুর এবং দারুণ সব ওয়াইনের সঙ্গে পরিবেশন করা হয়। তাদের রন্ধনশৈলী বেশ বিলাসবহুল ও প্রাকৃতিক, আছে মাশরুমের চা ও বার্লির সঙ্গে ব্রিজ পায়রার পায়ের রোস্ট।
সিঙ্গাপুরে দ্বিতীয় দিন
সকাল ৯টা: একটি মানচিত্র জুটিয়ে নিন এবং সিঙ্গাপুরে ঐতিহ্যবাহী এলাকাগুলোতে হেঁটে বেড়ান। র্যাফলস ল্যান্ডিং সাইট দিয়ে শুরু করতে পারেন। ধারণা করা হয়, ১৮১৯ সালে ওখানেই প্রথম স্যার স্ট্যামফোর্ড র্যাফলস প্রথম সিঙ্গাপুরে পা রাখেন। এখান থেকে চলে যান ঐতিহাসিক ফুলারটন হোটেলে। বোট কোয়ের ভেতর দিয়ে পাড়ি দিন। একসময় এটাই ছিল বণিকদের মূল পোতাশ্রয়। এখন অবশ্য পানশালা ও রেস্তরাঁতে পরিপূর্ণ। সেন্ট অ্যান্ড্রুজ ক্যাথেড্রাল ও সুপ্রিম কোর্টে যেতে ডানে মোড় নিয়ে চলে যান নর্থ ব্রিজ রোডে। এ ছাড়া, অতিপ্রাচীন চীনা ঔপনিবেশিকদের অতীত সম্পর্কে জানতে ঘুরেফিরে দেখে নিন আর্মেনিয়াম স্ট্রিটের পেরানাকান যাদুঘর।
দুপুর ১২টা: এমআরটি’তে চড়ে চলে যান বুগিসে। কেনাকাটা ও দর কষাকষি যাদের পছন্দ, তাদের জন্য এটা তীর্থস্থান। রাস্তা ধরে খানিকটা এগোলেই পড়বে হাজি গলি। এখানটায় পাবেন ছোটখাট ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠা ফ্যাশন বুটিক ও মধ্যপ্রাচ্য ঘরানার কাফে। সুলতান মসজিদটা যেন বাদ না পড়ে, ১৮২৪ সালে নির্মিত হয়েছিল এটা।
বিকেল ৪টা: বাসে চড়ে চলে যান চায়নাটাউনে। ওখানেই দেখা মিলবে দ্বীপদেশটির প্রথাগত চাইনিজ অংশের। ইতস্তত ঘুরে ফিরে দেখে নিন বুদ্ধা টুথ রেলিক মন্দির ও চায়নাটাউন হেরিটেজ সেন্টারের যাদুঘর। আপনাকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য এখানে প্রচুর পরিমাণে চাইনিজ খাবারও রয়েছে।
সন্ধ্যা ৭টা: ক্লার্ক কোয়েতে চলে যান। অসংখ্য রেস্তরাঁ আর নাইটক্লাব আছে সেখানে। পানিতে ভাসমান বেশ কিছু চাইনিজ ভাসমান নৌকা আছে (যার আরেক নাম টংক্যাং)। এগুলোকে কিছুটা পরিমার্জিত করে ভাসমান পানশালা ও রেস্তরাঁর রূপ দেওয়া হয়েছে। নৌ-বিহার কিংবা সিঙ্গাপুর নদীতে চলাচলের জন্য রিভার-ট্যাক্সিতে উঠতে হবে এখান থেকেই। ভোজনরসিকরা যেটা কিছুতেই মিস করবেন না সেটা হলো, সিঙ্গাপুরের বিশুদ্ধ ঐতিহ্যবাহী খাবার- রিভারসাইড পয়েন্টে থাকা জাম্বো সি-ফুডের চিলি ক্র্যাব।
সিঙ্গাপুরে তৃতীয় দিন
সকাল ৯টা: বাড়ি ফেরার ফ্লাইট ধরতে যেহেতু দিনের এক চতুর্থাংশ সময় হাতে আছে, তাই চটজলদি হাঁটতে থাকুন আঁকাবাঁকা সিঙ্গাপুরে বোটানিক গার্ডেনে এবং ৬০,০০০ ভিন্ন প্রজাতির অর্কিডের ঘ্রাণে মাতোয়ারা হয়ে যান। অর্কিডের এই সম্ভার রয়েছে বোটানিক গার্ডেনের ভেতরে থাকা ন্যাশনাল অর্কিড গার্ডেনে।
দুপুর ১২টা: সিঙ্গাপুরে চ্যাংগি বিমানবন্দরে ফেরার পথ ধরুন। আপনার যদি কেনাকাটা খুব ভাল লাগে তবে এখানে বাছাই করতে গিয়ে হিমশিম খাবেন। বিলাসি পণ্য ও স্যুভেনির থেকে শুরু করে খুচরা মূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের পসরা সাজিয়ে রাখা আছে এখানে।