Sunday, December 22
Shadow

আরও দু’টি চাঁদ আছে পৃথিবীর! মিলল একটির হদিশ

চাঁদশুধুই একটা নয়, আরও দু’টি চাঁদ আছে আমাদের। আর সেই দু’টি চাঁদ আমাদের কাব্য, কল্পনা, ভালবাসার চাঁদের মতো আদৌ পাথুরে নয়। তারা আসলে জমাট বাঁধা অত্যন্ত ঘন মেঘ। যে মেঘের শরীর গড়া মহাজাগতিক ধুলোবালি দিয়ে।

এই দু’টি চাঁদও আমাদের পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে নির্দিষ্ট সময়ের অন্তরে। সূর্যের আলো পিঠে পড়লে তারাও ঝকমক করে ওঠে। আমাদের অতি পরিচিত চাঁদের মতোই তারা পিঠে পড়া সূর্যের আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। এই দু’টি চাঁদেরও শুধুই একটি পিঠ দেখতে পাই আমরা। অন্য পিঠটি কোনও দিনই আমাদের চোখে ধরা দেয় না, আমাদের অতি পরিচিত চাঁদের মতোই। বিজ্ঞানের পরিভাষায়, যার কারণ, ‘টাইডাল এফেক্ট’।

 ছয় দশকের খোঁজ-তল্লাশের পর…!

গত ৬ দশক ধরে আঁতিপাতি খোঁজ-তল্লাশের পর সেই দু’টি চাঁদের একটিকে শেষমেশ দেখতে পেয়েছে হাঙ্গেরির জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের নেতৃত্বে একটি আন্তর্জাতিক গবেষকদল। গবেষণাপত্রটির শিরোনাম- ‘নিউ এভিডেন্স ফর দ্য এক্সিসটেন্স অফ দ্য কোর্দিলিউস্কি ডাস্ট ক্লাউড’। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হবে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘মান্থলি নোটিসেস অফ দ্য রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি’-র হালের সংখ্যায়, শনিবার। যে গবেষকদলে রয়েছেন এক অনাবাসী বাঙালি জ্যোতির্বিজ্ঞানীও।

পৃথিবী থেকে সেই দূরত্বটা অঙ্কের হিসেবে গড়ে মাত্র ৪ লক্ষ কিলোমিটার হলেও, সেই আরও দু’টি চাঁদ সূর্য আর পৃথিবীর মধ্যে রয়েছে এমন একটা দুরূহ, দুর্জ্ঞেয় দূরত্বে, যে তাদের ঠিকানা বের করাটা এত দিন বিজ্ঞানীদের কাছে ছিল খড়ের গাদায় সূচ খোঁজার সমতুল্য। কারণ, সূর্য ও অন্যান্য ভারী ও বড় গ্রহ, উপগ্রহগুলির অত্যন্ত জোরালো মহাকর্ষ বলের জন্য সেই দূরত্ব বা অবস্থান প্রায় প্রতি মুহূর্তেই বদলে যায়।

আমার স্বপ্ন পূরণ হলো না: টয়া

সহযোগী গবেষক, আরিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় শুক্রবার ওয়াশিংটন থেকে টেলিফোনে জানিয়েছেন, সূর্য আর পৃথিবীর মধ্যে দূরত্বকে বলা হয় ‘ল্যাগরাঞ্জে পয়েন্ট’। যে দূরত্বে আমাদের আরও একটি চাঁদের অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়েছে, তাকে বলা হয়, ‘ল্যাগরাঞ্জে-ফাইভ’ বা ‘এল-৫’ পয়েন্ট। এটা সূর্য আর পৃথিবীর মধ্যে এমন একটি ‘দুর্গম’ অবস্থান যে তার কোথায়, কী লুকিয়ে রয়েছে, তা দেখা তো দূরের কথাই, বুঝে উঠতেও অনেক সাধ্য-সাধনার প্রয়োজন হয়। কারণ, সেই দূরত্ব, সেই অবস্থান সূর্য, পৃথিবী, চাঁদ, বৃহস্পতি, শনি, নেপচুনের মতো ভারী মহাজাগতিক বস্তুগুলির অত্যন্ত জোরালো মহাকর্ষ বলের জন্য প্রায়ই ‘হারিয়ে যায়’। বিছানায় টানটান চাদরে ভারী লোহার বল গড়িয়ে দিলে একটা গর্ত তৈরি হয় চাদরের মাঝখানে। আর তাতে বিছানার লোহার বলটা ওজনে যতই ভারী হয়, ততই বড় হয় বিছানার মধ্যের গর্তটা। চাদরের বিভিন্ন জায়গার দাগগুলি তখন আর আলাদা ভাবে দেখতে পাওয়া যায় না, বিভিন্ন দিক থেকে চাদরটা কুঁচকে যায় বলে। এ ক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়। সূর্য, পৃথিবী, চাঁদ, বৃহস্পতি, শনি, নেপচুনের মতো ভারী মহাজাগতিক বস্তুগুলির অত্যন্ত জোরালো মহাকর্ষ বলের জন্য ‘ল্যাগরাঞ্জে-ফাইভ’ পয়েন্ট প্রায়ই ‘হারিয়ে যায়’ বলে সেই জায়গায় থাকা আমাদের এই আরও একটি চাঁদও দেখা যায় না। এমনই আরও একটি চাঁদ লুকিয়ে রয়েছে সূর্য ও পৃথিবীর মধ্যেকার আরও একটি দূরত্ব ‘ল্যাগরাঞ্জে-ফোর’ বা ‘এল-ফোর’ পয়েন্টে। তবে সেটিকে এখনও চাক্ষুষ করতে পারেননি জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।

 

কী ভাবে ওই চাঁদের অস্তিত্বের প্রমাণ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা?

ধ্রুবজ্যোতি জানিয়েছেন, তাঁরা প্রথম তাত্ত্বিক ভাবে ওই চাঁদের অস্তিত্বের আভাস পেয়েছিলেন। তার পর তাঁরা কম্পিউটার সিম্যুলেশন করেও দেখতে পান, আমাদের পরিচিত চাঁদের মতোই আরও দু’টি চাঁদ রয়েছে পৃথিবীর। এই তাত্ত্বিক গবেষণার চাক্ষুষ প্রমাণ পেতে তাঁরা হাঙ্গেরির বিজ্ঞানী জুডিথ স্লিজ্-বালঘের নিজের অবজারভেটরির একটি খুব শক্তিশালী টেলিস্কোপের সাহায্য নিয়েছিলেন। সেই টেলিস্কোপের মাধ্যমেই এ বছর অগস্টের শেষাশেষি তাঁরা পৃথিবীর আরও একটি চাঁদের হদিশ পান ‘এল-ফোর’ পয়েন্টে।

আরও একটি চাঁদের হদিশ মিলবে শীঘ্রই, বলছেন বিজ্ঞানীরা

ধ্রবজ্যোতিবাবুর সঙ্গেই ছিলেন জুডিথ। টেলিফোনে শুক্রবার ওয়াশিটংন থেকে জুডিথ বললেন, ‘‘আমরা যা দেখেছি, সেই ধুলোর মেঘের চাঁদ (কোর্দিলিউস্কি ডাস্ট ক্লাউড)-এ আজ থেকে ৫৭ বছর আগে দেখতে পেয়েছিলেন পোলিশ জ্যোতির্বিজ্ঞানী কোর্দিলিউস্কি। আমরা নিশ্চিত, এটাই সেই চাঁদ। কারণ, অঙ্কের হিসেব আর কম্পিউটার সিম্যুলেশনের সঙ্গে তা অবিকল মিলে যাচ্ছে। এই ভাবেই ‘এল-ফোর’ পয়েন্টে লুকিয়ে থাকা আরও একটি চাঁদের হদিশ খুব শীঘ্রই মিলবে বলে আমাদের আশা।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!