যারা ছড়াচ্ছিলো ব্যাংক দেউলিয়া হলে আমানতকারিরা যতো টাকাই রেখেন না কেনো, মাত্র এক লাখ করে ফেরত পাবেন, তাদের জ্ঞাতার্থে।
=======
ব্যাংক আমানতের বিপরীতে ১ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রসঙ্গে :
# “অনেকেই উদ্বিগ্ন হয়ে ফোন করে বিষয়টি জানতে চেয়েছেন। তাই বিষয়টি নিয়ে লিখার প্রয়াস। সহজ ভাষায় বিষয়টি লিখার চেষ্টা করেছি।
# ধরা যাক, আমি ‘ক’ নামক একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ৫ লাখ টাকা আমানত রেখেছি তিন বছরের জন্য। তিন বছর শেষে আমি প্রতিষ্ঠানটির নিকট মুনাফাসহ ৭ লাখ টাকা প্রাপ্য। এর মধ্যে হঠাৎ করে ‘ক’ আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি অবসায়ন বা বন্ধ ঘোষণা করা হলো। এখন স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসে আমার আমানতের কী হবে?
# রেগুলেটরি অথরিটি কর্তৃক আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির সমস্ত সম্পদ বিক্রয় করে ক্যাশ টাকায় রূপান্তর করা হবে। সাধারণ আমানতকারীকের পাওনা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পরিশোধ করা হবে।
# ধরুন, আমার মতো আমানতকারীর সংখ্যা ১০০ জন। সবাই ৫ লাখ টাকা করে আমানত রেখেছেন। তাহলে সাধারণ আমানতকারীদের আমানতের পরিমাণ ৫ কোটি টাকা। তিন বছর শেষে ‘ক’ প্রতিষ্ঠানটির নিকট সাধারণ আমনতকারীদের প্রাপ্য ৭ কোটি টাকা।
# আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির সমস্ত সম্পদ বিক্রয় করার পর ক্যাশ টাকার পরিমাণ দাঁড়ালো ৭ কোটি টাকা। তাহলে সাধারণ আমানতকারীরা পুরো টাকাই ফেরত পাবেন মুনাফাসহ।
# যদি ক্যাশ টাকার পরিমাণ ৭ কোটি টাকার কম হয় সেক্ষেত্রে কী হবে? ধরুন, ৬ কোটি টাকা হলো। সেক্ষেত্রে আমানতকারীরা আনুপাতিক হারে টাকা পাবেন। এক্ষেত্রে ১০০ জন আমানতকারী ৬ লাখ টাকা করে পাবেন।
# আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির কাছে আমার প্রাপ্য ৭ লাখ টাকা। কিন্তু আমি পাচ্ছি ৬ লাখ টাকা। তাহলে বাকি ১ লাখ টাকার কী হবে?
# আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের সাধারণ আমানতকারীগণ এতদিন বীমার আওতায় ছিলেন না। সম্প্রতি সরকার আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের আমানতকারীদের বীমা সুরক্ষা দেওয়ার চিন্তা করছেন যা “আমানতকারী সুরক্ষা আইন, ২০২০” নামে ইতোমধ্যেই মন্ত্রীসভার নীতিগত অনুমোদন লাভ করেছে এবং সংসদে আইনটি পাশ হলেই বিষয়টি কার্যকর হবে।
# এ সুরক্ষা আইনে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগকারী সাধারণ আমানতকারীগণ সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা পর্যন্ত বীমা সুরক্ষা পাবেন। আমি যেহেতু এ সুরক্ষা আইন কার্যকর হওয়ার আগে আমানত রেখেছি, সেহেতু এ আইনে আমি সুরক্ষা পাবো না। আইনটি কার্যকর হওয়ার পর থেকে যারা এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানত রাখবেন, তারা এ আইনের আওতায় সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা পর্যন্ত বীমা সুরক্ষা পাবেন।
# ব্যাংকসমূহের ক্ষেত্রে সাধারণ আমানতকারীদের জন্য এ সুরক্ষাটি ১৯৮৩ সালের অর্ডিন্যান্সে পাস করা হয় এবং পরবর্তীতে “ব্যাংক আমানত বীমা আইন, ২০০০” (২০০০ সনের ১৮নং আইন) নামে পাস করা হয়।”
লিখেছেন
- মনিরুল হায়দার।
যুগ্ম পরিচালক,
বাংলাদেশ ব্যাংক, চট্টগ্রাম।