শহরের অনেকেরই সুপ্ত বাসনা, অন্তত মাসে দুই দিনের সবজি আর খাবারের যোগানটা যদি নিজে ফলানো যেত, তবে বেশ হতো। ছাদের পুরোটা জুড়ে বাগান করতে পারলে সবজির দাম নিয়ে অন্তত আর ভাবতে হতো না। সেই সঙ্গে যদি কয়েকটা ডিম পাড়া লেয়ার মুরগি পালন করা যায় তো কথাই নেই। ডিমের ডজন তখন ২০০ টাকা হলেই বা কী। আমরা সবাই যদি কোনো না কোনোভাবে একটু কৃষি বিষয়ক জ্ঞান অর্জন করে দিনের একটা সময় এর পেছনে দেই, তাতে প্রায় নিখরচায় পুষ্টিকর কিছু যেমন পেটে পড়বে, তেমন বাজারের বাজেটের ওপরও খানিকটা চাপ কমবে।
কিন্তু নিজে ছাদবাগান বা বারান্দায় সবজি ফলানোর মিশনে যারা বার বার ব্যর্থ বা দিশেহারা বোধ করছেন তাদের করণীয় কী? আসলে একটি লেখায় বা একদিনে এ বিষয়ে সমস্ত কিছু জানার চেষ্টা করার দরকার নেই। ছাদবাগান বলুন আর বারান্দার টবের বাগান কিংবা বাড়ির আঙ্গিনা.. বাগানের মূল সূত্র সবখানেই এক। সব গাছের জন্যই দরকার পর্যাপ্ত আলো, সার ও মাটি।
শহরের ছাদ বা ব্যালকনির বাগানের জন্য টুকিটাকি কিছু টিপসের প্রথম পর্ব আজ। বাকি পর্বগুলোর জন্য মাটিনিউজের এই কৃষি সেকশনে চোখ রাখুন। আজ শুধু দৈনন্দিন কিছু রুটিনের কথা বলা যাক। যেগুলো আপনার ছাদবাগান বা বারান্দার বাগানের টবের মাটির উর্বরতা ঠিক রাখবে এবং বাড়তি সার কেনার হাত থেকে বাঁচাবে। আবার এগুলো অনুসরণ করলে টবের মাটি বদলানোরও প্রয়োজন হবে না।
ছাদবাগানের মার্টির উর্বরতার টিপস ১
ডিমের খোসা: ডিম তো প্রতিদিন খাওয়া হয়। ডিমের খোসা কিন্তু ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের ভালো উৎস। গাছের জন্য এ দুটোই খুব দরকারি। বিশেষ করে বারান্দায় টবে যারা লেবু চাষ করতে চান, তাদের জন্য। ডিমের খোসা ধুয়ে, সেটা জমিয়ে গুঁড়ো করে… ইত্যাদি করতে করতে অনেকের ক্লান্তি আসতে পারে। তাই সহজ রুটিনটা হলো, প্রতিদিন ডিম ফাটানোর পর খোসাটা সামান্য ধুয়ে সোজা টবের ওপর রেখে দিন। সঙ্গে সঙ্গে সব কাজ করতে যাবেন না। পরে যখন অনেকগুলো খোসা জমবে তখন খোসাটা ভেঙেচুরে মাটি খুঁড়ে ভেতরে ঢুকিয়ে দেবেন। নিয়মিত পানি দিতে থাকলে একসময় সেই খোসা টবে মিশে যাবে।
টবে দিন কলার খোসা
একই ব্যাপার কলার খোসার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কলার খোসা টবে কীভাবে ব্যবহার করবেন, এ নিয়ে অনেক ভিডিও আছে, টিপস আছে। তবে লাইন টু লাইন সব টিপস ফলো করার দরকারই নেই। কলা খাবেন, খোসাটা ছুড়ে দেবেন টবে। ব্যস। এমনিতেই ওটা শুকিয়ে মিশে যাবে মাটিতে। পানি দেওয়ার সময় এক ফাঁকে সেটাকে টবের মাটি খুঁড়ে ভেতরে চালান করে দিলে ক্ষতি নেই। এ কাজের জন্য টবের মাটি খোঁড়ার বেলচা জাতীয় বস্তুটা সবসময় গাছের আশপাশে রাখবেন। তখন ওটা খুঁজতে গিয়ে আর সময় নষ্ট করতে হবে না।
সবজির খোসা টবে
সবজির খোসাকে জমিয়ে, পানিতে ভিজিয়ে কম্পোস্ট তৈরি করা ঝামেলার ও সময়সাপেক্ষ। আলু, পেঁয়াজ বা শসার চামড়া ছাড়ানোর পর সেগুলো কুচি করে ময়লার ঝুড়ির বদলে রেখে আসুন টবে। অনেকগুলো গাছ ও টব থাকলে ভাগ করে দিন। তারপর একই নিয়মে ঢুকিয়ে দিন মাটিতে। উপরে ফেলে রাখলে অনেকসময় শুকিয়ে সেটা বাতাসে উড়েও যেতে পারে। তাতেও অবশ্য ক্ষতি নেই। উপকারী কিছু অর্গানিক সার মাটিতে মিশে যেতেই পারে। ব্যাপারটাকে বাতিক বানিয়ে ফেলুন। এতে করে টবের মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকবে, মাটি বদলাতেও হবে কম। আবার গাছও তার পুষ্টি পাবে ঢের।
চা পাতা যখন সার
চা পাতা উৎকৃষ্ট সার। কিন্তু সেই একই সমস্যা। ব্যবহার করা চায়ের পাতা জমাও, তারপর সেটা শুকাও… তারপর টবে দাও। এত কিছুর দরকার নেই। চা ছাঁকার পর পাতাটা সামান্য ধুয়ে নিন। যেন দুধ চিনি না থাকে। এরপর ছাঁকনিতে করে চা পাতা নিয়ে যান বারান্দায়। সোজা ঢেলে দিন টবে। কদিন পর আপনাতেই শুকিয়ে যাবে। তারপর সেই আগের নিয়মে চায়ের পাতা টবের মাটি খুঁচিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে দিন।
মাছ ধোয়া পানি
যে কোনো গাছের জন্য মাছ ধোয়া পানি একটি দুর্দান্ত সার। মাছ ধোয়ার সময় মাথায় রাখবেন, এই মাছ ধোয়া পানি কিন্তু দামি একটা সার। গাছ এটা খুব পছন্দ করে। সুতরাং এটা কষ্ট করে আমাকে গাছের গোড়া ঢেলে আসতে হবে। কিন্তু কীভাবে? পানিটাকে আরও বেশি পারিমাণে পানিতে মিশিয়ে নিন। তারপর মগ কেটে দিয়ে দিন সব গাছের গোড়ায়।
চাল ধোয়া পানি
বেলি ফুলের গাছ চাল ধোয়া পানি খুব পছন্দ করে। চাল ধোয়া পানিতে নাইট্রোজেন ফসফরাস ও পটাশিয়াম থাকে। অর্থাৎ প্রতিবার চাল ধুয়ে আপনি যে পানিটা ফেলে দিচ্ছেন, সেটা কিন্তু বেশ দামি একটা এন পি কে সার! এক পট চাল এক লিটার পানিতে প্রথমবার ধুলে যে পানিটা থাকবে, সেটাই হলো উৎকৃষ্ট সার। ওটাকে একটা বড় বোলে রাখুন। সময় করে গাছের গোড়ায় ভাগ করে দিয়ে দিন। এটা হলো অর্গানিক সার। পরিমাণে একটু কম বেশি হলে তাতে ক্ষতি হবে না।
যাদের গাছপালা সব ছাদে, তারা সারাদিনের সবজির খোসা, চা পাতা, মাছ ধোয়া পানি জমিয়ে রাখুন। তারপর চট করে ছাদে গিয়ে ঢেলে আসুন সমানভাগে।