class="post-template-default single single-post postid-20541 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

কবুতর টিপস : কবুতর পালনের টুকিটাকি ও কবুতরের জাত

কবুতর পালনের কবুতর পালন কবুতরের রোগ kabutorগৃহপালিত সব পাখিদের মধ্যে বাংলাদেশের সর্বত্র জনপ্রিয় একটি পাখি ‘কবুতর’। বিগত কয়েক দশক আগেও কবুতর পালনের প্রচলন ছিল গ্রামে। তবে ইট-পাথরে ঘেরা জনবহুল শহরের ছাদে বা জানালার কার্নিশে এখন কবুতর পালনের দৃশ্য খুব স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। বর্তমানে এটা পরিবারের পুষ্টি সরবরাহ, সমৃদ্ধি, শোভাবর্ধনকারী এবং বিকল্প আয়ের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

কবুতর পালনের ইতিবিত্ত, পালনের উপকারিতা, আর্থিক সমৃদ্ধির সম্ভাবনা, পালন পদ্ধতি, কবুতরের জাত, থাকার ঘর, কবুতরের খাবার, রোগব্যাধি- চিকিৎসা ও পালনের সতর্কতাসহ নানা দিক নিয়ে কবুতর খামারিদের সঙ্গে কথা বলে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ থাকছে প্রথম পর্ব।

কবুতর পালনের অর্থিক সমৃদ্ধির সম্ভাবনা
কবুতর প্রতিপালন এখন শুধু শখ ও বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই বরং শহর-গ্রাম সর্বত্র এটি লাভজনক একটি ব্যবসা হিসেবে পরিণত হয়েছে। দেশব্যাপী মানুষের অর্থনৈতিক অভাব পূরণে সহযোগিতা করছে। শহর কিংবা নগরের বহুসংখ্যক পরিবার এখন অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে কবুতর পালনে উৎসাহী হয়ে উঠেছেন। সুষ্ঠু পরিচর্যা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সঠিকভাবে কবুতর পালন করে আর্থিক উন্নয়ন ও বেকারত্ব লাঘব করতে পারে যেকোনো বেকার যুবক।

বর্তমানে আমাদের দেশে অনেকেই বাণিজ্যিকভিত্তিতে কবুতর পালনের কাজ শুরু করেছেন। বাণিজ্যিকভাবে কবুতর পালনের মাধ্যমে অনেকেই স্বল্প সময়েই লাভজনক ব্যবসা হিসেবে পরিণত করতে পেরেছেন। উন্নত জাতের কবুতর পালন করে অনেকের নিজ ভাগ্যকে পরিবর্তন করতে পেরেছেন। এক তথ্যসূত্র বলছে, রাজধানী ঢাকায় আনুমানিক ৪-৭ হাজার কবুতর পালনকারী আছে, যারা অনেক উন্নত জাতের কবুতর পালন করছেন। বেকারত্ব ও চাকরির পাশাপাশি সোশ্যাল নেটওয়ার্ক-এর মাধ্যমেও অনেকেই কবুতর বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন।

pigeon কবুতরের

বর্তমান বাজারে ভালো জাতের কবুতরের মূল্য অনেক। ম্যাগপাই জোড়া ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা। বুডারবল ৭ থেকে ১০ হাজার। লক্ষ্যা ১ থেকে ৭ হাজার টাকা। লালসিরাজী ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা। সিলভার সিরাজী ৭ থেকে ১০ হাজার টাকা। এছাড়া বিভিন্ন দেশি কবুতর ২০০ টাকা থেকে শুরু করে নানা প্রজাতির কবুতর ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হতে দেখা যায়।

কবুতরের মাংস পুষ্টিকর
কবুতরকে খেলার পাখি বা সংবাদবাহক হিসেবে ব্যবহার করার গল্প প্রচলিত আছে। শোনা যায়, প্রাচীনকালে কবুতরের মাধ্যমে চিঠি আদান-প্রদান করা হতো। প্রাচীনকালে রাজা-বাদশাহ তাদের বিভিন্ন ধরনের বার্তা প্রেরণের জন্য বেছে নিতেন কবুতরকে। কবুতর পালনের মাধ্যমে কবুতর উড়ানোর প্রতিযোগিতা প্রাচীনকাল থেকে অদ্যাবধি প্রচলিত আছে। এসব কারণেই কবুতর পাখি হলেও মানব সমাজের ভরসার জায়গা কেড়ে নিয়েছে সেই প্রাচীনকাল থেকেই। তবে এখন আর কবুতর সেসব কাজের জন্য ব্যবহার করা হয় না বরং পুষ্টিকর খাবার হিসেবে ব্যবহারের চাহিদাই বেশি। কবুতরের মাংস মানুষের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়, ফলে কবুতর পরিবারের পুষ্টি সরবরাহের ভূমিকা রাখে।

কবুতরের মাংস অত্যন্ত সুস্বাদু এবং বলকারক হিসেবে সদ্যরোগমুক্ত ব্যক্তির জন্য অত্যন্ত উপযোগী। রোগীর পথ্য হিসেবে কবুতরের মাংস ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কবুতরের মাংসে সাধারণ অন্যান্য পাখির মাংসের তুলনায় প্রোটিনের পরিমাণ অনেক বেশি। যার ফলে আমিষের পাশাপাশি প্রোটিনের বাড়তি চাহিদা পূরণের জন্য-ও কবুতরের মাংস খাওয়া হয়ে থাকে।

কবুতরের জাত
সমগ্র পৃথিবীতে ২০০ প্রজাতির কবুতর থাকলেও বাংলাদেশে সচরাচর দেখা যায় প্রায় ৩০ প্রজাতির কবুতর। কবুতর কীভাবে মানুষের বশে এসেছে? কীভাবেই বা অগণিত বাঙালির গৃহপালিত পাখিতে পরিণত হলো? এর সঠিক উত্তর জানা নেই। তবে জানা যায়, গৃহপালিত কবুতরের উদ্ভব হয়েছে বুনো কবুতর (Columba livia) থেকে। গৃহপালিত এসব কবুতরের বৈজ্ঞানিক নাম Columba livia domestica।

বাংলাদেশে নানা জাতের কবুতর দেখা যায়। তবে বাংলাদেশে কবুতরের জাতের মধ্যে গিরিবাজ গ্রাম-শহরে সর্বত্র জনপ্রিয়। তবে কিছু বিদেশি কবুতরও এখন আমাদের দেশে চোখে পড়ে। বিদেশি সেই জাতগুলো এখন বাংলাদেশে নানা নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে। সেসব জাতের মধ্যে রয়েছে  গোলা, গোলি, ময়ূরপঙ্খী, ফ্যানটেল, টাম্বলার, লোটান, লাহরি, কিং, জ্যাকোবিন, মুকি, সিরাজী, গিরিবাজ, চন্দন ইত্যাদি। আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্যর কারণে এসব কবুতর বাংলাদেশেও জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

জাত বা ধরনগুলো নির্দিষ্ট নয়। বিভিন্ন গুণাগুণ, বৈশিষ্ট্য, রং, চোখ ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে কবুতরের জাত নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া ক্রস ব্রিডিং-এর মাধ্যমেও নতুন জাত তৈরি হয়ে থাকে।

বহুবিচিত্র ধরনের নানা জাতের কবুতরের মধ্যে নিচে কবুতর পালনের প্রধান কয়েকটি জাত নিয়ে লেখা হলো-

* হোমার : হোমিং পিজিয়ন থেকে হোমার শব্দটি বাংলাদেশে বিস্তৃতি পেয়েছে। খুব দ্রুত বেগে উড়তে পারে বলে উড়াল প্রতিযোগিতায় এই কবুতরটি ব্যবহার হয়। দুটি কবুতর পাশাপাশি ছাড়া হলে এরা নিজেরা প্রতিযোগিতা করে উড়ে আবার ঘুরে আগের জায়গায় চলে আসে।

* গোলা (দেশি কবুতর) : এই জাতের কবুতরের উৎপত্তিস্থল ভারত উপমহাদেশ। আমাদের দেশে এ জাতের কবুতরই বেশি এবং খাবারের মাংসের জন্য এটার যথেষ্ট জনপ্রিয়তা রয়েছে। ঘরের আশেপাশে খোপ নির্মাণ করে দিলে এ জাতের কবুতর এমনিতেও এসে বসবাস শুরু করে। এদের বর্ণ সাদা কালো এবং ধূসর যেকোনো রঙের হতে পারে।

* গোলী : গোলা জাতের কবুতর থেকে গোলী জাতের কবুতর একটু ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের। পাকিস্তানের লাহোর ও ভারতের কলকাতায় এ জাতের কবুতর বেশ জনপ্রিয়। এদের লেজের নিচে পাখার ঘন ও পুরো পালক বিদ্যমান। এ জাতের কবুতরের ঠোঁট ছোট হয়। এদের বেশিরভাগ বর্ণ সাদা হয়ে থাকে।

* কিং : এ জাতের কবুতরের মধ্যে হোয়াইট কিং এবং সিলভার কিং আমেরিকাসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোতে বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। কিং জাতের কবুতর প্রদর্শনী এবং স্কোয়াব উৎপাদনে ব্যবহার হয়। এছাড়াও রয়েছে ব্লু রেড এবং ইয়েলো কিং। এই জাতের কবুতর মূলত প্রদর্শনীতে ব্যবহৃত হয়।

* ফ্যানটেল/লাক্ষা : এ কবুতরের লেজগুলো ময়ূরের মতো ছড়ানো। শখ করে পালনে এই কবুতর বেশি ব্যবহার হয়। ভারত এই কবুতরের উদ্ভব বলে জানা যায়। এ জাতের কবুতর লেজের পালক পাখার মতো মেলে দিতে পারে বলে এদের ফ্যানটেল বলা হয়। এদের রঙ মূলত সাদা তবে কালো, নীল ও হলুদ বর্ণের ফ্যানটেলও দেখা যায়। পা পালক দ্বারা আবৃত থাকে। এ জাতের কবুতর প্রদর্শনীতে ব্যবহৃত হয়।

* লাহোরী/সিরাজী : লাহোরে উদ্ভব হয়েছে বলে একে লাহোরি বলে। আমাদের দেশে এটি শিরাজী কবুতর নামেও পরিচিত। এদের চোখের চারদিক থেকে শুরু করে গলার সম্মুখভাগ, বুক, পেট, নিতম্ব, পা ও লেজের পালক সম্পূর্ণ সাদা হয় এবং মাথা থেকে শুরু করে গলার পেছন দিক এবং পাখা রঙিন হয়। সাধারণত কালো, লাল, হলুদ, নীল ও রুপালি ইত্যাদি বর্ণের কবুতর দেখা যায়।

* গিরিবাজ/টাম্বলার: এই কবুতর উড়ানোর জন্য বেশ বিখ্যাত। এসব জাতের কবুতর আকাশে ডিগবাজি খায় বলে এদের টাম্বলার বলে। আমাদের দেশে এই জাতটি গিরিবাজ নামে পরিচিত। এদের উৎপত্তিস্থল পাক-ভারত উপমহাদেশ। মনোরঞ্জনের জন্য আমাদের দেশে এদের যথেষ্ট কদর রয়েছে।

* লোটান : সাদা বর্ণের এই কবুতরের ঝুঁটি থাকে। এদের চোখের রঙ গাঢ় পিঙ্গল বর্ণের এবং সমগ্র পা লোমযুক্ত।

* জ্যাকোবিন : এই কবুতরের মাথার পালকগুলো ঘাড় অবধি ছড়ানো থাকে। এদের উৎপত্তিস্থল জানা যায়নি। তবে এদের আদি জন্মস্থান ভারতে হতে পারে বলে ধারণা করা হয়। এই কবুতর সাধারণত সাদা, লাল, হলুদ, নীল বর্ণের হয়ে থাকে। এদের দেহ বেশ লম্বাটে। আর চোখ দুটো মুক্তার মতো সাদা হয়।

* মুকি : এই জাতের কবুতরের গলা রাজহাঁসের মতো পেছন দিকে বাঁকানো থাকে। এদের ডানায় তিনটি উড়বার উপযোগী পালক সাদা হয় যা অন্য কোনো কবুতরে দেখা যায় না। সাদা, কালো এবং নীল বর্ণের এই কবুতরগুলো দেখতে খুবই সুন্দর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!