ঘটনার শুরু গত ২৬ মে। সে দিন চার থেকে পাঁচ দিন বয়সী একটি নবজাতককে কে বা কারা ঢাকার শেওড়াপাড়ার গ্রিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের ডাস্টবিনে ফেলে যায়। এ খবর পৌঁছে যায় কাফরুল থানা-পুলিশের কাছে। পুলিশ নবজাতকটিকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করায়।
এত দিন ওই নবজাতকটি অভিভাবক শূন্য থাকলেও এর অবসান হয়েছে। ঢাকার শিশু আদালত মঙ্গলবার সুইডেন প্রবাসী এক বাংলাদেশি দম্পতির কাছে এই ছেলে নবজাতককে হস্তান্তর করার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রথম আলোকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকার আদালতের প্রবেশন কর্মকর্তা এস এম মাসুদ রানা।
এস এম মাসুদ রানা বলেন, নবজাতকে পাওয়ার জন্য মোট তিনটি দম্পতি আবেদন করেছিল। এর মধ্যে যাচাই-বাঁচাই শেষে আদালত সুইডেন প্রবাসী এই দম্পতিকে লালন-পালনের অনুমতি দেন।
কুড়িয়ে পাওয়া এ নবজাতকের নাম রেখে ব্যাংকে তার নামে ১০ লাখ টাকা জমা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে এই দম্পতিকে প্রতি মাসে নবজাতককে প্রবেশন কর্মকর্তার কাছে হাজির করতে বলা হয়েছে। সে কেমন আছে—এ ব্যাপারে তিন মাস পর পর আদালতে প্রতিবেদন দেবেন প্রবেশন কর্মকর্তা। একই সঙ্গে ওই দম্পতিকে নিজের সন্তানের মতো করে নবজাতককে লালন-পালন করতে বলেছেন আদালত।
১৬ বছর আগে সংসার শুরু করলেও সুইডেন প্রবাসী এই দম্পতি এখনো নিঃসন্তান। আদালতকে ওই নারী বলেছেন, মা হওয়ার সব চেষ্টাই তিনি করেছেন কিন্তু সফল হননি। এমনকি টেস্ট টিউব বেবির জন্য নানা চেষ্টা-তদবির চালিয়ে গেছেন। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে সুইডেনে থাকছেন বাংলাদেশি এই মুসলিম দম্পতি। ঢাকার উত্তরায় তাঁদের কোটি টাকা দামের ফ্ল্যাট আছে। মিরপুরেও আছে আরেকটি বাড়ি ও পাঁচ কাঠা জমি। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই সুইডেনে সরকারি চাকরি করেন। আদালতের কাছে দাবি করেছেন, প্রতি মাসে তাঁরা দুজন আড়াই লাখ টাকা করে বেতন পান।
প্রবাসী এই দম্পতি নবজাতককে মা-বাবার আদরে বড় করার অঙ্গীকার করেছেন আদালতের কাছে। অঙ্গীকার নামায় তাঁরা বলেন, সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য তাঁদের চেষ্টার কোনো কমতি থাকবে না। তাঁদের সব সম্পত্তির মালিক হবে এই নবজাতকই। সুইডেন প্রবাসী দম্পতির আইনজীবী হাসান তালুকদার ও চারু লিল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ১৬ বছর পর একটি সন্তানের অভিভাবক হওয়ায় তাঁরা খুব আনন্দিত। তবে নবজাতকের নতুন মা এ ব্যাপারে প্রথম আলোর সঙ্গে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
শেওড়া পাড়ায় কুড়িয়ে পাওয়া এ নবজাতককে পাওয়ার জন্য আরও যে দুই নারী আবেদন করেছিলেন তাঁদের একজন ফ্যাশন ডিজাইনার। ছয় বছর আগে বিয়ে হলেও এখনো মা হতে পারেননি তিনি।
কুড়িয়ে পাওয়া কোনো নবজাতক বা শিশুর প্রকৃত অভিভাবক পাওয়া না গেলে—সে ক্ষেত্রে যে কেউ আদালতে তার অভিভাবকত্ব নেওয়ার জন্য আবেদন করতে পারেন। পরে আদালত বেশ কিছু বিষয় পর্যবেক্ষণ শেষে কোনো ব্যক্তি বা দম্পতিকে শিশুটির অভিভাবকত্বের অনুমতি দেন। তবে শর্ত হলো, শিশু কেমন আছে তা সব সময় আদালতকে জানাতে হয়।