Monday, December 23
Shadow

ছাদ বাগানের ভালো ফলনের জন্য ১০টি পরামর্শ

জমির স্বল্পতার কারণে আজকাল অনেক বাগানপ্রেমীরা-ই নিজেদের মনমতো করে বাগান করতে পারছেন না। তবে তাদের জন্য উপায় হিসেবে আছে বাড়ির ছাদ। ছাদকৃষি এখন অনেক প্রকৃতিপ্রেমীর কাছেই স্বস্তির জায়গা। ছাদ কৃষিতে টবে,ড্রামে গাছ লাগানো হয়ে থাকে। কেউ ফল,ফুল, কেউবা সবজির গাছ লাগান। গাছের অনেক যত্ন নেবার পরও অনেকে সফল হতে পারেন না কিছু ছোট ছোট ভুলের কারনে। এখানে সফল ছাদকৃষির কিছু পরামর্শ দেয়া হলোঃ 

ছাদবাগানের ভালো ফলন
১. মাটির সাথে অবশ্যই কিছু কোকোপিট (নারকেলের ছোবড়ার গুড়া) মেশাতে হবে। গাছের গোড়া স্যাতস্যাতে হতে দেয়া যাবে না।গাছের গোড়া স্যাতস্যাতে হলে গাছের রোগ হবার সম্ভাবনা থাকে অনেক। মাটি ভেজা রাখতে হবে তবে খেয়াল রাখতে হবে মাটি স্যাতস্যাতে যেন না হয়। কেকোপিট মেশালে পানি কম দিলেও হবে কারণ কোকোপিট পানি ধরে রাখে। অতি বৃষ্টি হলে গোড়ায় পানি জমতে দেয় না। হালকা হওয়ায় ছাদে ওজনের চাপ পড়ে না। এছাড়া কোকোপিটে কিছু পুষ্টি উপাদান আছে। যা গাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কোকোপিটে চারা দ্রুত গজায়, বড় হয়। মাটির চেয়ে কোকোপিটে চারা ভালো হয়। 
২. টবে বা ড্রামে গাছ লাগালে অবশ্যই তাকে খাবার দিতে হবে, কারণ প্রকৃতিতে থাকা গাছের মতো সে খাবার সংগ্রহ করতে পারে না। গাছের রোগ বালাই হচ্ছে কি না সে বিষয়ে খেয়াল করেও সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। এবং ছাদকৃষির ফলের জন্য ধৈর্য রাখা অনেক জরুরি। 
৩. ছাদ বাগানে গাছ মারা যাওয়ার অন্যতম কারণ পানি বেশি বা কম দেয়া। পানি অত বেশি বা কম দেয়া যাবে না। যতটুকু লাগে ঠিক ততটুকু পানি দিতে হবে। কোন গাছের কি চাহিদা, রোগ এসব আগে থেকে জেনে সেই অনুযায়ী গাছের যত্ন নিতে হবে। 
৪. ছাদকৃষি তে টাটকা সবজির জন্য ডাটা, পুইশাক, লালশাক, ধনেপাতা এসব রোপন করে সঠিক পরিচর্যা করলে মাত্র ২৫ দিনে শাক বেড়ে উঠবে। লালশাক লাগালে নেট দিয়ে ঘিরে দিতে হবে। পুইশাক গাছের পাতায় দাগ হলে পাতা কেটে দেয়াই ভালো। এবং সাথে ছত্রাকনাশক স্প্রে করবেন। অথবা গাছ উঠিয়ে আবার লাগান। পুইশাক উৎপাদনের জন্য ইউরিয়া সার ব্যবহারে পুইশাক দ্রুত বৃদ্ধি পায়।আর শশা গাছের বৃদ্বির জন্য ডিএপি সার ব্যবহার করলেও ভালো ফল পাওয়া যাবে। শশা গাছে ছাড়া ছাড়া ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হয়।অতিরিক্ত গরমে গাছ ভালো ফলন দেবে না, তাই খুব গরমের জন্য গাছের গোড়ায় মালচিং করে দেয়া উচিত। ফলে গাছের বৃদ্ধি যথাযথ ভাবে হতে পারবে। মালচিং হলো গাছের গোড়ায় বিশেষ পলিথিন কিংবা শুকনো পাতা, খড় দিয়ে ঢেকে দেয়ার পদ্ধতি। 
৫. ছাদে মাচা দেয়া সমস্যা সম্ভব হয় না, বা দিলেও ঘুঁটি থাকে না। এ ক্ষেত্রে ফলের ক্রেটের চারপাশে লাঠি বেঁধে সহজে মাচা দেয়া যায়। লতাপাতা জাতীয় গাছ লাগানোর পাত্র বা ড্রাম একটু গভীর হলে বেশি ভালো। গাছের জন্য সবচেয়ে বেশি ভালো জৈব সার হলো পাতা-পচা সার, ভার্মি কম্পোস্ট, এবং গোবর সার। সাধারণত পাতা-পচা সার সহজলভ্য না, এবং এই সারের দাম বেশি। কিন্তু ভার্মি কম্পোস্ট সহজলভ্য। আর মাটির সঙ্গে মিনিমাম ৪০% জৈব সার দিলে ভালো ফলন হবে। 
৬. মাটিতে অসংখ্য ক্ষতিকর ছত্রাক থাকে। যা গাছকে মেরে ফেলে বা ভালো ফলন দেয় না। তাই মাটি প্রস্তুত করার সময় কিছুটা বায়োডামা সলিট দিতে হবে। বায়োডামা উপকারী ছত্রাক, এটি মাটিতে ক্ষতিকারক ছত্রাকগুলো মেরে ফেলে। আবার জৈব সারের কাজও করে। গাছের জন্য মাটি প্রস্তুত করতে হবে ঝুরঝুরে, হালকা করে। 
৭. ক্ষতিকারক পোকা-মাকড়ের সংক্রমণ থেকে গাছকে বাচাঁতে নিম কিটনাশক খুব উপকারী।এটা ব্যবহার করলে পোকামাকড় গাছে বাসা বাঁধতে পারে না। প্রতি সাত দিনে একবার সব গাছের পাতায় নিম কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। এবং মাসে একবার ইপসম সল্ট স্প্রে করে দেয়া উত্তম। একইভাবে মাসে একবার পানির সাথে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড মিশিয়ে স্প্রে করা ভালো।
৮. রসুন আর লবঙ্গ বেটে সেই পানি গাছে স্প্রে করলে পোকা কম আসবে। মরিচ গাছের সাথে নেপথলিন বেঁধে দিলে গাছে পোকা আসবে না। পাতা কোকড়ালে ভার্মিটেক কিংবা এবোম কীটনাশক দিতে হবে।এবং বেশি কোকড়ানো পাতা ছাটাই করে দেয়াই ভালো। মরিচ গাছে দশ দিন পর পর ডায়মেথট গ্রুপের (যেমন টাফগর) কীটনাশক দিলে উপকার হবে। এগুলি করার পরও গাছের আশানুরূপ বৃদ্ধি না পেলে, এক্ষেত্রে গাছের জায়গা বদল করতে হবে, গাছ উঠিয়ে অন্যত্র রোপন করুন। 
৯. গাছে ফুল আসার পরে প্রানোফিক্স অথবা মিরাকুরান গাছের পাতায় শেষ বিকালে স্প্রে করতে হবে। বাসায় ম্যানসার আর মেটারিল দুইটি গ্রুপের ছত্রাকনাশক রাখলে ভালো।এগুলি ১৫ দিনে একবার স্প্রে করতে হয়। অতিরিক্ত গরম, বৃষ্টি, খাদ্যের অভাব, গাছ রোগাক্রান্ত, আবহাওয়া দ্রুত পরিবর্তন ইত্যাদি কারণে গাছের ফুল ঝরে পড়তে পারে।তাছাড়া গাছের পরাগায়ন না হলেও ফুল বা ফল ঝরে পড়তে পারে। এ জন্য হাতের মাধ্যমে পরাগায়ন করতে হবে। পুরুষ ফুলের পরাগদণ্ড নারী ফুলে গর্ভে ঘষে দিতে হবে। 
১০.  গাছ বেশি তো ফলন বেশি- এটা অনেকের ভুল ধারণা। অল্প জায়গায় বেশি গাছ লাগানো যাবে না। গাছ লাগাতে হবে পাতলা করে। একসাথে বেশি গাছ লাগালে কোন গাছ-ই সঠিক পরিমাণে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে না। তাই একটি ফলের ক্রেটে দুটি গাছ লাগানো উচিত। আর একটি টবে একটি গাছ। এতে গাছের ফলন ভালো হবে।গাছের জন্য ক্রেট, ড্রাম বা টবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাও রাখতে হবে। 
আরো পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!