গত ২৭ মে’র শেষ সপ্তাহে পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের প্রায় ৩৬ কোটি মার্কিন ডলারের পতন ঘটেছে। এতে স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ৯.৭২ বিলিয়নে। শুধু তাই নয়, অর্থনৈতিক সংকট ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে পাকিস্তানে জ্বালানির মূল্যও বেড়েই চলছে।
শাহবাজ শরিফ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখতে একাধিক উদ্যোগ নিলেও বাস্তবে প্রতিফলন খুব একটা চোখে পড়েনি। ইমরান খানের সরকার উচ্ছেদ করতে না করতেই দেশের রিজার্ভ পতন, জ্বালানি এবং দ্রব্য মূল্যের লাগাম টানাই এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে তার জন্য।
এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবারের ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত কয়েকদিনে পাকিস্তানে পেট্রোল ও ডিজেলের দাম বেড়েছে ৩০ টাকার বেশি।
রিজার্ভ প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে এসেছে, গত আগস্টের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ কমেছে। পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতনের কারণে দুই মাসেরও কম সময়ের জন্য আমদানি পরিশোধে কম অর্থ অবশিষ্ট রয়েছে।
এ নিয়ে ব্লুমবার্গ প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের এমন ধারবাহিক পতনে দেশটির অর্থনৈতিক সংকট তীব্র থেকে আরও তীব্রতর হওয়ার শঙ্কা রয়েছে, যদি না পাকিস্তান সরকারের নীতি নির্ধারকেরা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণ নিশ্চিত না করে।
বাস্তবতটা হচ্ছে সংকট মোকাবিলায় আইএমএফ থেকে এখন পর্যন্ত ঋণ মেলার খুব একটা সাড়া মিলছে না। তারপরও অর্থনৈতিক চাহিদা মেটাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে নতুন ঋণ পেতে চেষ্টা চালাচ্ছে শাহবাজ শরিফের প্রশাসন।
খবরে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় পাকিস্তান ৩০০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ পেতে আইএমএফের দেওয়া একাধিক শর্ত পূরণের চেষ্টা করছে। এতে রয়েছে জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো।
বৃহস্পতিবারই (২ জুন) দেশটির অর্থমন্ত্রী মিফতাহ ইসমাইল পাকিস্তানে পেট্রোল, ডিজেল, লাইট ডিজেলের দাম ৩০ রূপি বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। এ নিয়ে সপ্তাহে দ্বিতীয়বার জ্বালানির দাম বাড়ানো হলো। প্রতি লিটার পেট্রলের দাম ঠেকেছে ২০৯ দশমিক ৪৬ রুপিতে। আর ডিজেলের লিটারপ্রতি দাম হয়েছে ২০৪ রুপি। আগামী ১ জুলাই থেকে বিদ্যুতের দাম পার ইউনিট ৮ রূপি বাড়ানোরও ঘোষণা দিয়েছেন মন্ত্রী ইসমাইল।
অর্থমন্ত্রী ইসমাইল স্বীকার করেছেন যে, মূল্যবৃদ্ধি মুদ্রাস্ফীতিকে আরও খারাপ করবে। এমন পরিস্থিতির জন্য সাবেক ইমরান খানের সরকারকে দুষছেন তিনি। বলেন, ‘সংকট উত্তরণে আমাকে আইএমএফের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে হবে’।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তার সরকারের অর্থমন্ত্রী শওকত তারিনকে অভিযুক্ত করে ইসমাইল আরও বলেন, ‘তারা উভয়ই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে আমাদের হাত সম্পূর্ণভাবে বেঁধে দিয়েছিলেন। চুক্তির নিয়ম লঙ্ঘনও করেছেন তারা’।
দেশটির সংবাদমাধ্যম ডনকে উদ্ধৃতি করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘চলতি মাসে (জুন) নতুন করে কর আরোপ করা হবে না। তবে ভর্তুকি প্রত্যাহার করা হবে’।
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে, বাণিজ্য ঘাটতি ইসলামাবাদের জন্য আরেকটি উদ্বেগের বিষয়। ডলারের সংকট আরও অবনতি হতে পারে, কারণ পাকিস্তান পূর্বাভাস দিয়েছে যে জুন শেষ হওয়া বছরে দেশটির বাণিজ্য ঘাটতি রেকর্ড ৪৫ বিলিয়ন হতে পারে।