Thursday, December 5
Shadow

ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি: মার্কিন ডলারের আধিপত্য রক্ষায় কঠোর ব্যবস্থা

value of dolar after trump

মার্কিন প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, মার্কিন ডলারের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া দেশগুলোর ওপর তিনি “১০০ শতাংশ শুল্ক” আরোপ করবেন।

সোমবার ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে ট্রাম্প বলেছেন, “যেসব দেশ নতুন ব্রিকস মুদ্রা তৈরি করবে বা ‘মহান মার্কিন ডলারের’ জায়গা নেবে, তাদের কঠোরভাবে শাস্তি দেওয়া হবে।”

ব্রিকস হলো ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার একটি জোট, যা সম্প্রতি ইরান, মিশর, ইথিওপিয়া এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। তবে ট্রাম্পের এই মন্তব্য এমন এক সময় এসেছে, যখন ডলারের আধিপত্যে তাৎক্ষণিক কোনো হুমকি দেখা যাচ্ছে না। ডলার কয়েক দশক ধরে বৈশ্বিক রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে।

ডলারের প্রভাব কি কমছে?

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) তথ্য অনুযায়ী, বৈশ্বিক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ৫৮ শতাংশ ডলারে সংরক্ষিত, যা ২০০০ সালে ছিল ৬৭ শতাংশ।

তবে, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ৭৪ শতাংশ লেনদেন এখনো ডলারে হয়। ১৯৪৪ সালের ব্রেটন উডস চুক্তি ডলারের বৈশ্বিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছিল। এই চুক্তিতে সই করা দেশগুলো তাদের মুদ্রাকে ডলারের সঙ্গে স্থির করেছিল।

বছরের পর বছর ধরে এই ব্যবস্থা বদলেছে, এবং অনেক দেশ তাদের মুদ্রাকে ডলারের সঙ্গে সংযুক্ত রাখা বন্ধ করেছে। তবুও, ডলার বৈশ্বিক রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে অটুট রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নীতি এবং বিশ্বে সবচেয়ে বড় ভোক্তা বাজার হিসেবে তাদের ভূমিকা ডলারের আধিপত্য ধরে রেখেছে। ৮ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি সরকারি ঋণ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে থাকা সত্ত্বেও ডলারের শক্তি কমেনি। এমনকি ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটেও ডলারের প্রভাব অক্ষুণ্ণ ছিল।

করনেল ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতি বিষয়ক অধ্যাপক এসওয়ার প্রসাদ বলেছেন, “ডলার আজও বৈশ্বিক অর্থনীতির কেন্দ্রে রয়েছে। আন্তর্জাতিক লেনদেন, তহবিল এবং রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে এটি অপরিহার্য।”

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্সের সিনিয়র ফেলো বেন স্টিল বলেছেন, “ডলার ছাড়া বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থা কার্যত অচল হয়ে পড়বে, যা বিশ্ব অর্থনীতিকে অনেক কম দক্ষ করবে।”

ডলার কি হুমকির মুখে?

ট্রাম্পের মন্তব্য এসেছে অক্টোবরের রাশিয়ার কাজানে অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলনের পর, যেখানে সদস্যরা ডলারের বাইরে লেনদেন বাড়ানো এবং স্থানীয় মুদ্রা শক্তিশালী করার বিষয়ে আলোচনা করেছে।

ফরেক্সলাইভের প্রধান মুদ্রা বিশ্লেষক অ্যাডাম বাটন বলেছেন, “ব্রিকস এখন সেই অবস্থানে নেই যে তারা ডলারের বিকল্প কোনো ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারবে।”

চীন ও রাশিয়ার মধ্যে স্থানীয় মুদ্রায় লেনদেন সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেড়েছে, বিশেষত রাশিয়ার উপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার পরে। তবে ব্রিকস এখনো একটি একক মুদ্রা চালু বা মুদ্রায় একীভূত হওয়ার চেষ্টা করেনি।

বাটন আরও বলেন, “এই দেশগুলোর কেউই তাদের আর্থিক স্বাধীনতা ছাড়তে প্রস্তুত নয়। এটা fringe ধারণা, এবং ট্রাম্প কেন এটা গুরুত্ব দিলেন তা স্পষ্ট নয়।”

চীন ও ভারত বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ হলেও তাদের মুদ্রা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় না। ট্রাম্প ইউরো সম্পর্কে কিছু বলেননি, যা ইউরোজোনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে এটি কখনোই বৈশ্বিক আধিপত্যের লক্ষ্য নির্ধারণ করেনি।

ট্রাম্পের মন্তব্য কি ডলারের ওপর প্রভাব ফেলবে?

ডলারের প্রভাব এতটাই গভীর যে এর মান ওঠানামা অনেক দেশের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করে। ডলার শক্তিশালী হলে অন্যান্য দেশগুলোকে পুঁজিপ্রবাহ ঠেকাতে তাদের সুদের হার বাড়াতে হয়।

প্রসাদ বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্র ডলারের আধিপত্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে, যেমন আর্থিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং রিজার্ভ ফ্রিজ করা।”

বস্টন কলেজের রাজনৈতিক বিজ্ঞানী জোনাথন কির্শনার মনে করেন, ট্রাম্পের মন্তব্য আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তেমন প্রাসঙ্গিক নয়।

তিনি বলেন, “ডলার ব্যবহারে কাউকে বাধ্য করা যায় না। এটি জনপ্রিয় কারণ মানুষ ডলার রাখতে চায়। এই ধরনের চাপ উল্টো ফল দেবে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!

error: Content is protected !!