Sunday, September 8
Shadow

চীনে জেগে উঠছে ঘুমের অর্থনীতি

ফয়সল আবদুল্লাহ, সিএমজি বাংলা

১৯৯৫ সাল থেকেই করপোরেট চাকরি করছেন চাং মিন। গত তিন বছর ধরে ভুগছেন মারাত্মক নিদ্রাহীনতায়। তবে ঘুম সংক্রান্ত নানা পণ্যের কারণে চাং তার ঘুম ফিরে পেতে শুরু করেছেন।

তিনি বললেন, ”ঘুমের জন্য কার্যকর অনেক পণ্যই আমি ব্যবহার করেছি।  চোখের মাস্ক, ইয়ারপ্লাগ, ঘুমের অ্যারোমাথেরাপি, এসেনশিয়াল অয়েল এবং মেলাটোনিন।  গত বছর আমি ঘুমের জন্য বিশেষভাবে তৈরি ম্যাট্রেস ও মেমোরি ফোম বালিশও কিনেছি।  দুই বছরে এসব পণ্যের জন্য আমার ব্যয় হয়েছে ১০ হাজার ইউয়ানেরও বেশি।

গত মার্চে চায়না স্লিপ রিসার্চ সোসাইটির গবেষণায় দেখা যায়, চীনের বেশিরভাগ মানুষ সাধারণত রাত ১২ টার পরে  ঘুমাতে যান এবং  গড়ে ৬ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট করে ঘুমান।

এ বিষয়ক গবেষণার জন্য ২০ বছর থেকে ৭০ বছর বয়সী ১০ হাজার মানুষের  সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। ৩০ শতাংশ জানান, তারা ঘুম বিষয়ক সমস্যায় ভুগছেন। সমস্যার মধ্যে রয়েছে সকালে তাড়াতাড়ি উঠতে না পারা, ঘুমাতে না পারা, নাক ডাকা, দুঃস্বপ্ন দেখা, ঘুমের সময় ব্যথা ও অস্বস্তি অনুভব করা।

গ্লোবাল কনসালটেন্সি সংস্থা ফ্রস্ট অ্যান্ড সুলিভান বলছে, ২০২৫ সাল নাগাদ শুধু চীনেই নিদ্রাহীনতায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দাঁড়াবে ৩০ কোটিতে।

অন্যদিকে ঘুম বিষয়ক সমস্যা যত বাড়ছে, ততই বাড়ছে এসবের সমাধানের চাহিদা। আর তাই ঘুমের জন্য প্রয়োজনীয় স্লিপ-এইড পণ্যেরও উত্থান ঘটেছে।

china sleeping pillow

চীনের বিখ্যাত ই-কমার্স তাওবাও এবং জেডি ডট কমের মতো ই-কর্মাস প্লাটফর্মগুলোতে “স্লিপ-এইড” লিখে সার্চ করলেই পাওয়া যাচ্ছে ভুরি ভুরি পণ্য। বেশি বেশি উৎপাদনের কারণে মেলাটোনিন, স্লিপ মনিটর, স্লিপ প্যাচ, এসেনশিয়াল অয়েল, স্মার্ট ম্যাট্রেসের মতো পণ্যগুলোর দামও এখন হাতের নাগালে এসেছে।

বাজার গবেষণা সংস্থা টুমিডিয়ার গবেষণা অনুসারে, ২০২৩ সালে চীনে নিদ্রা বিষয়ক অর্থনীতির বাজারের মূল্য ছিল ৫০০ বিলিয়ন ইউয়ানের কাছাকাছি। এ বাজার বছরে সাড়ে ৮ শতাংশ হারে বাড়ছে।  ধারণা করা হচ্ছে , ২০২৭ সালের মধ্যে এ বাজার সাড়ে ছয় শ বিলিয়ন ইউয়ান ছাড়াবে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে হবে ১ ট্রিলিয়ন ইউয়ান।

বেইজিং একাডেমি অফ সোশ্যাল সায়েন্সের সহযোগী গবেষণা ফেলো ওয়াং পেং এ বিষয়ে বলেছেন, “ভোক্তা হিসেবে ঘুমের সমস্যায় আক্রান্তরা ঘুমকে অনেক গুরত্ব দিচ্ছে  এবং তারা ঘুমের জন্য সহায়ক পণ্য কিনতেও আগ্রহী। এতে সমস্যার সমাধান হবে আবার এ সম্পর্কিত অর্থনীতিরও উন্নয়ন হবে।’

ব্যবসায়িক তথ্য সরবরাহকারী সংস্থা কিচাচা জানায়, চীনে এখন মোট ৯০৯৬টি প্রতিষ্ঠান ঘুম-সম্পর্কিত পণ্যের ব্যবসা করছে।

মে মাসের ৩১ তারিখে নানচিংয়ের সিমসিয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল গ্রুপ লিমিটেড জানিয়েছে, নিদ্রাহীনতায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য চাইনিজ ফেইজ থ্রি নামে একটি গবেষণা করা হচ্ছে। এর লক্ষ্য হলো নিদ্রাহীনতায় আক্রান্তদের জন্য অভিনব সমাধান নিয়ে আসা। প্রতিষ্ঠানটির ডুয়াল অরেক্সিন রিসেপ্টর এন্টাগোনিস্ট নামের একটি নতুন ওষুধ ইতোমধ্যেই এসেছে ইউরোপের বাজারে।

বাসা বাড়িতে “স্লিপ-এইড” পণ্য পৌঁছে দিতেও হোম অ্যাপ্লায়েন্স কোম্পানিগুলো প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

২০২০ সালে চেচিয়াংয়ের প্রতিষ্ঠান স্লিমন বাজারে এনেছিল স্মার্ট ম্যাট্রেস। ওতে এখন যুক্ত হয়েছে আরও উন্নত প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। ব্যবহারকারীর ঘুম সংক্রান্ত নানা তথ্য প্রক্রিয়া করে ওই ম্যাট্রেস কাস্টমাইজড সমাধান দেবে।

কোম্পানিটি ঘুমজনিত পণ্যের উন্নয়নে ১০০ কোটি ইউয়ানেরও বেশি বিনিয়োগ করেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু পণ্য নয়, চীনে ঘুম বিষয়ক পরামর্শ সেবাও চালু হবে। এমনকি নতুন করে শুরু হতে পারে ঘুম-পর্যটন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!

error: Content is protected !!