চীনের চ্যচিয়াং প্রদেশের তোংসিয়াং শহরে আধুনিক প্রযুক্তি আর জনসম্পৃক্ততার মাধ্যমে গড়ে উঠছে সবুজ উন্নয়নের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এখানে একদিকে ড্রোন দিয়ে সার ছিটানো হচ্ছে, আরেকদিকে রয়েছে স্বয়ংক্রিয় সেচ ব্যবস্থা। কৃষকদের পরিবেশবান্ধব অভ্যাসের জন্য চালু হয়েছে পয়েন্ট সিস্টেম, যাতে করে বাড়তি আয়ও হচ্ছে গ্রামবাসীর। এতে করে শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয়, গড়ে উঠছে পরিচ্ছন্ন ও বাসযোগ্য গ্রাম।

তোংসিয়াংয়ে এখন নিয়মিত ড্রোন দিয়ে জমিতে সার ছিটানো হচ্ছে, যা এখানকার কৃষি উৎপাদনের দক্ষতা বাড়াচ্ছে এবং কৃষকদের শ্রম কমাচ্ছে।
কৃষক সিয়া মিংতাও জানালেন, ‘ড্রোন দিয়ে এক ব্যাগ সার ছিটাতে দুই মিনিট লাগে। হাতে করলে বারবার ব্যাগ টেনে নিয়ে যেতে হয়—ভাবতেই ইচ্ছে করে না।’
এদিকে স্মার্ট ব্যবস্থায় এখানে ২৪ ঘণ্টাই সেচ থাকে চলমান। এ কারণেও ফসলের ফলন বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে।
সিয়া আরও বললেন, ‘এই সেচ ব্যবস্থা চালুর পর কাজ অনেক সহজ ও কার্যকর হয়েছে, এজন্য আমরা সত্যিই কৃতজ্ঞ’
২০১১ সাল থেকে চীন কৃষিকে আধুনিকায়নের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। মাটির সেন্সর, জিপিএস-নিয়ন্ত্রিত ট্রাক্টরসহ নানা স্মার্ট প্রযুক্তি চালু হয়েছে, যা পানি সংরক্ষণ এবং উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করছে। এখন পর্যন্ত ৬ কোটি ৬০ লাখ হেক্টরের বেশি আবাদি জমি আধুনিক প্রযুক্তির আওতায় এসেছে।
তোংসিয়াংয়ের সিয়াওইয়ুয়ানথৌ গ্রামের পার্টি সেক্রেটারি চাং সোংছিং বললেন, ‘আগে এক মু জমি থেকে ৪৫০ থেকে ৫৫০ কেজি ধান পেতাম। এখন তা বেড়ে ৭৫০ কেজি পর্যন্ত হয়েছে।’
স্থানীয়দের কাছে পরিবেশের গুরুত্ব ফসলের মতোই সমান। ধানক্ষেত এখন শুধু খাদ্যের উৎস নয়, বরং গ্রামীণ জীবনের অংশ আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পটভূমি।
চাং সোংছিংয়ের মতে, ‘শুধু ধনী হওয়া নয়—ভালোভাবে বাঁচাটাও জরুরি। তাই ফলন বাড়ানোর পাশাপাশি আমরা ফাঁকা জমিতে দৃষ্টিনন্দন ধানক্ষেত তৈরি করেছি, যাতে রাতের খাবারের পর গ্রামের মানুষ হাঁটাহাঁটি করে বিশ্রাম নিতে পারে।’
এখানকার পরিবেশকে সবুজ ও পরিচ্ছন্ন রাখতে স্থানীয় প্রশাসন একটি পয়েন্ট সিস্টেম চালু করেছে। এতে গ্রামবাসীরা দৈনন্দিন পরিবেশবান্ধব অভ্যাসের জন্য পুরস্কৃত হন—যেমন বর্জ্য আলাদা করে ফেলা, বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখা, এবং গৃহস্থালি বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা।
তবে এই পয়েন্ট কেবল দেখানোর জন্য নয়, চাইলে এটি ব্যবহার করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারেন গ্রামবাসীরা। এমন পরিবেশের কারণে তোংসিয়াংয়ে আবার ফিরে এসেছেন অনেকে।
স্থানীয় ক্যাফে মালিক লু ইউপিং জানালেন, ‘শহরের জীবন খুব চাপের। এখানে বন্ধুদের সঙ্গে প্রকৃতিতে বাইক চালানো শহরের তুলনায় অনেক বেশি মুক্তির অনুভূতি দেয়। এখানে ব্যবসা শুরু করেছি। চাইলে যখন খুশি ফিরে আসতে পারি।’
তোংসিয়াংয়ের এ গল্প স্থান পেয়েছে ‘ডিসকভারিং গ্রিন চায়না’ নামের বিশেষ ধারাবাহিকে। সিজিটিএন-এ সিরিজে দেখানো হবে দুই দশক ধরে চীনের ‘স্বচ্ছ জল ও সবুজ পাহাড়’ দর্শন কী করে একটি সবুজ ভবিষ্যৎ গড়ে তুলছে।
তথ্যসূত্র: সিএমজি বাংলা


















