শিনচিয়াংয়ের ‘চাঁদের ফুল’ ড. আন ইয়োংশিয়া - Mati News
Friday, December 5

শিনচিয়াংয়ের ‘চাঁদের ফুল’ ড. আন ইয়োংশিয়া

উত্তর-পশ্চিম চীনের সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের বোরতালা মঙ্গোলিয়ান স্বায়ত্তশাসিত প্রিফেকচারের বায়ারবুলাগ গ্রামে আছেন ডাক্তার আন ইয়োংশিয়া। গত তিন দশক ধরে হাসিমুখে সেবা দিয়ে আসছেন গ্রামের মানুষদের। স্থানীয়রা ভালোবেসে তাকে ডাকে ‘চাঁদের ফুল’।

১৯৯৫ সালের গোড়ার দিকে যখন ডা. আন এই গ্রামে আসেন, তখন এলাকাটিতে ছিল একটি জরাজীর্ণ ক্লিনিক আর উইগুর ভাষার মানুষজন, যে ভাষার কিছুই বুঝতেন ডা. আন। শুরুতে তাই বেশ হতাশায় কাটতো তার দিন। তবে তিন দশকে যেমন বদলে গেছে তার ক্লিনিক, তেমনি ডা. আনও এখন অনর্গল বলতে পারেন উইগুর ভাষা।

ডা. আন ইয়োংসিয়ার ভাষ্যে, ‘যখন প্রথম আসি, তখন বয়স ছিল মাত্র ২১। ১৯৯৫ সালে গ্রামের ক্লিনিকটি ছিল গ্রামকমিটির মালিকানাধীন এক জীর্ণ কাদামাটির ঘরে। ভেতরে ছিল একটি ভাঙা কাঠের ওষুধের আলমারি, চার পায়ার একটি কাঠের খাট আর ছোট চেয়ার-টেবিল। শুরুতে যাতায়াতের অসুবিধা দেখে মন খারাপ হয়েছিল। প্রচণ্ড শীতে কয়েক কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে যেতে হতো। হাত-পা জমে যেত ঠান্ডায়। নিজেকেই চুলা জ্বালাতে হতো। একবার তো ভুল করে কয়লার স্তূপে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলাম।’

এদিকে, চিকিৎসা দিতে হলে তো ভাষার বাধা দূর করতেই হবে। তাই স্থানীয় উইগুর ভাষা শিখতে শুরু থেকেই কোমর বেঁধে নামেন ডা. আন।

আন আরও বললেন, ‘দুই গ্রামে হাজারেরও বেশি মানুষ। এদের সবাই উইগুর। একবর্ণও মান্দারিন জানতেন না। তাই নিজেই শেখা শুরু করলাম। মাথা, হাত, পা, পেট এসবের মতো অন্যান্য অঙ্গের নাম শিখলাম সবার আগে। এখন রোগীদের সঙ্গে সাবলীলভাবে কথা বলতে পারি।’

গ্রামের মানুষের আন্তরিকতায় গভীরভাবে আপ্লুত ডা. আন। বললেন, ‘এখন গ্রামবাসী আমাকে তাদের নিজেদের একজন মনে করে। কেউ কেউ আমার জন্য লাগমান নুডলস রান্না করে দেয়। এটা তাদের ভালোবাসার নিদর্শন। এক টুকরো নান কিংবা এক বাটি নুডলস—সবকিছুতেই তাদের ভালোবাসা অনুভব করি।’

সেবার ব্যাপারে ডা. আন যে কতটা নিবেদিত এবং কত রোগীর যে সেবা দিয়েছেন, সেটার প্রমাণ পাওয়া গেল ২০টি সুবিশাল হিসাবের খাতায়, যেখানে কিনা গত তিন দশকে দেখা রোগীদের তথ্য ও ডাক্তারি ফি’র হিসাব লিখে রেখেছেন তিনি।

গ্রামের মানুষ এখন ডা. আনকে স্নেহভরে ডাকে ‘আইশেম গুল’ নামে।  উইগুর ভাষায় যার অর্থ চাঁদের ফুল। তবে ঠিক কবে থেকে সবাই তাকে এ নামে ডাকতে শুরু করেছে, ডা. আন তা নিজেও জানেন না।

সূত্র: সিএমজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *