Saturday, June 14

চীনের তেছিংয়ের মুক্তা চাষের ঐতিহ্য পেল বিশ্ব স্বীকৃতি

সম্প্রতি জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ঘোষণা করেছে, চীনের চ্যচিয়াং প্রদেশের তেছিং ফ্রেশওয়াটার পার্ল মাসেল কম্পোজিট ফিশারি সিস্টেমটিকে ২০২৫ সালের গ্লোবালি ইম্পরট্যান্ট অ্যাগ্রিকালচারাল হেরিটেজ সিস্টেমে বা জিআইএএইচএস-এ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। চীনের প্রথম বিশ্বমানের জলচাষ-সম্পর্কিত কৃষি ঐতিহ্য প্রকল্প হিসেবে স্বীকৃতি পেল এটি। আর এ নিয়ে চীনের এ ধরনের প্রকল্পের সংখ্যা দাঁড়াল ২৫-এ। যার মধ্যে ছয়টিই চ্যচিয়াংয়ে।

প্রায় ৮০০ বছর আগে দক্ষিণ সোং রাজবংশের সময় তেছিংয়ে কৃত্রিম মিঠা পানির মুক্তা চাষের সূচনা হয়। প্রকৃতি ও মানব-প্রজ্ঞার সহাবস্থানের অনন্য নিদর্শন এই তেছিং পার্ল সিস্টেম। মাছ ও শামুকের পারস্পরিক সহায়তার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে এই বহুমাত্রিক জলজ বাস্তুতন্ত্র—যেখানে একসঙ্গে বাস করে শামুক, মাছ, প্ল্যাংকটন, নীচতলের জীব ও জলজ উদ্ভিদ।

তেছিংয়ের ফুশি স্ট্রিটের শিয়াওশানইয়াং এলাকাটি এই প্রথাগত পদ্ধতির মূল সংরক্ষিত এলাকা, যেখানে ঝকঝকে পানিতে মাছ সাঁতার কাটে আর শামুকেরা আশ্রয় খোঁজে। এখানকার এক প্রবীণ মুক্তাচাষি চাং কুওইয়িং চার দশকেরও বেশি সময় ধরে মুক্তা চাষ করছেন। তার খামারটি ২,০০০ একরেরও বেশি জায়গা জুড়ে বিস্তৃত।

চাইনিজ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস-এর সহযোগী গবেষক ইয়াং লুন জানান, এই সহমিলিত উৎপাদন পদ্ধতি একদিকে পরিবেশবান্ধব, অন্যদিকে এটি জীববৈচিত্র্য রক্ষারও দৃষ্টান্ত।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার বিশেষজ্ঞ আইচা বামমুন বলেন, ‘তেছিং মুক্তা ব্যবস্থা কৃষি-প্রজ্ঞা ও আধুনিক সংরক্ষণশীল পদ্ধতির সম্মিলন—যা চীনা কৃষি সভ্যতার টেকসই প্রাণশক্তিকে তুলে ধরে।’

সাম্প্রতিক বছরগুলোয়, তেছিং ‘পার্ল+’ শিল্প মডেল চালু করেছে। শুধু অলংকার নয়, মুক্তার ব্যবহার এখন ছড়িয়ে পড়েছে রূপচর্চা, স্বাস্থ্যসেবা ও সাংস্কৃতিক পর্যটন শিল্পেও। ‘শিল্প+শিক্ষা+গবেষণা+পর্যটন’ ভিত্তিক এই মডেল থেকেই বছরে প্রায় ৭০০ কোটি ইউয়ান আয় হয়, যা চীনের মোট মুক্তা শিল্পের এক-দশমাংশ। এখানকার প্রক্রিয়াজাত শিল্পে কাজ করেন প্রায় ২০ হাজার মানুষ।

১৯৭০-এর দশকের শেষ দিকে, তেছিংয়ে মিঠা পানির মুক্তা চাষের ইতিহাস নিয়ে গবেষণা শুরু হয়। দীর্ঘ ৩০ বছরের গবেষণা ও মাঠ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বেরিয়ে আসে “প্রাচীন চীনে কৃত্রিম মুক্তা চাষের প্রমাণ” শীর্ষক গবেষণাপত্রসহ আরও অনেক প্রামাণ্য নথি।

২০১৭ সালের জুনে, তেছিং মুক্তা ব্যবস্থা চীনের কৃষি ও গ্রামীণ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে ‘গুরুত্বপূর্ণ কৃষি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য’ স্বীকৃতি পায়। ওই বছরই শুরু হয় জিআইএএইচএস তালিকাভুক্তির জন্য আবেদন। ২০১৯ সালে এটি প্রস্তুতিমূলক তালিকায় যায়, এবং ২০২৫ সালে সংস্থাটির আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পায়।

চীনের কৃষি ও গ্রামীণ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জিআইএএইচএস বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রধান মিন ছিংওয়েন বলেন, ‘দেশের প্রথম জলচাষ ভিত্তিক জিআইএএইচএস প্রকল্প হিসেবে তেছিং মুক্তা ব্যবস্থা একটি নতুন সেতু গড়ে তুলেছে—যার মাধ্যমে চীনা কৃষি ঐতিহ্য বিশ্বমঞ্চে আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠতে পারবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই স্বীকৃতি শুরু মাত্র। তেছিং তার মুক্তার মতোই, এ সংস্কৃতির আরও গভীরে অনুসন্ধান চালিয়ে ঐতিহ্য তুলে ধরবে বিশ্বের কাছে।’

সূত্র: সিএমজি বাংলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!