সদ্য সমাপ্ত চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা শীর্ষ সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের দেওয়া উদ্বোধনী মূল বক্তৃতাটি আফ্রিকান বিশেষজ্ঞ মহলে দারুণ প্রশংসিত হয়েছে। তাদের মতে, সি’র দেওয়া বক্তব্য চীন ও আফ্রিকার মধ্যে যৌথ আধুনিকীকরণ প্রচেষ্টার একটি নকশার রূপরেখা দিয়েছে এবং শান্তি, নিরাপত্তা, বৈশ্বিক অগ্রগতির প্রতি অভিন্ন প্রতিশ্রুতিকেও শক্তিশালী করেছে।
ভাষণে সি বলেছিলেন, ৭০ বছরের ধারাবাহিকতায় চীন-আফ্রিকা সম্পর্ক এখন ইতিহাসের সেরা অবস্থানে রয়েছে। তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ব্যক্ত করেছেন, আধুনিকীকরণের জন্য এই দুই অঞ্চলের যৌথ প্রচেষ্টা সমগ্র গ্লোবাল সাউথে অগ্রগতি নিয়ে আসবে।
তুর্কিয়ের ফাউন্ডেশন ফর পলিটিক্যাল, ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল রিসার্চের গবেষক ডেনিজ ইস্তিকবাল বলেছেন, সি’র ভাষণে চীন-আফ্রিকা সম্পর্কের গভীরতা প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি বলেন, আফ্রিকান দেশগুলোর সাথে চীনের সম্পর্ককে কৌশলগত সম্পর্কের দিকে উন্নীত করার প্রস্তাব করার মাধ্যমে এবং নতুন যুগের জন্য একটি ভাগ করা ভবিষ্যতসহ একটি দীর্ঘমেয়াদী, স্থিতিস্থাপক এবং বহুমুখী চীন-আফ্রিকা সম্পর্কের ওপরই জোর দিয়েছেন সি।
গাম্বিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মামাদু টাঙ্গারা বলেছেন, প্রেসিডেন্ট সি যে ১০টি পয়েন্ট উল্লেখ করেছেন, তা আফ্রিকা মহাদেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ার মূল বিষয়। আফ্রিকার বাসিন্দারা চীন-আফ্রিকার একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে বলেও জানান টাঙ্গারা।
কেনিয়ার-আফ্রিকা পলিসি ইনস্টিটিউটের চীন-আফ্রিকা কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক ডেনিস মুনেনে বলেছেন, সি’র বক্তব্য আন্তরিকতা, বাস্তব ফলাফল, বন্ধুত্ব ও সৎ বিশ্বাসের উদাহরণ হয়ে থাকবে।
সির প্রস্তাবিত পদক্ষেপ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে ভবিষ্যত নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন চীনে উগান্ডার রাষ্ট্রদূত অলিভার ওয়ানেখা। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট সি ১০টি ব্যবস্থায় আফ্রিকার সঙ্গে জড়িত হতে চলেছেন সেগুলো খুব উৎসাহব্যাঞ্জক। এগুলোর আফ্রিকার উজ্জ্বল ভবিষ্যত ইঙ্গিত করে বলেও মনে করেন ওয়ানেখা।
কেনিয়ার আফ্রিকা পলিসি ইনস্টিটিউটের চীন-আফ্রিকা কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক ডেনিস মুনেনে বলেছেন, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও অভিন্ন সুবিধার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে, সি’র দেওয়া বক্তৃতাটি আফ্রিকান নবজাগরণের স্বপ্নকেই পুনরুজ্জীবিত করেছে।
কেনিয়ার ইউনিভার্সিটি অব নাইরোবির বিজনেস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সেস অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক এক্স এন ইরাকি বলেছেন, সি চিনপিংয়ের বক্তব্যের সারকথা হলো আধুনিকীকরণ সবার অবিচ্ছেদ্য অধিকার, এবং এটি সম্পদ ও আধ্যাত্মিক অগ্রগতির ভারসাম্য তৈরি করে। তিনি আরও বলেন, সি’র বক্তব্যে এটিও পরিষ্কার যে চীন আফ্রিকাকে বোঝে।
লন্ডন এক্সপোর্ট কর্পোরেশনের সিইও জ্যাক পেরি বলেন, বৈশ্বিক দারিদ্র্য মোকাবেলা ও টেকসই উন্নয়নের সাপেক্ষে সি’র বক্তব্যটি ভবিষ্যত পরিকল্পনাগুলোর জন্য নতুন উদ্ভাবনের তরতাজা উদ্দীপনা হিসেবে কাজ করবে।
কেপ টাউনের নেলসন ম্যান্ডেলা স্কুল অফ পাবলিক গভর্ন্যান্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কার্লোস লোপেস বলেছেন, সি’র বক্তৃতার তাৎপর্য বহুপাক্ষিকতার সুরক্ষায় চীন-আফ্রিকান স্বার্থকে একীভূত করার মধ্যে নিহিত।
তথ্যসূত্র : সিএমজি বাংলা