class="post-template-default single single-post postid-52925 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

আমাদের টু ডু লিস্ট

রাস্তায় ‘সন্দেহভাজন’ গাড়ি আটকে অবৈধ আয়ের টাকা লুকানোর পাঁয়তারা ঠেকানোর কাজ এখন যেভাবে শিক্ষার্থীরা চালাচ্ছে সেভাবে দুয়েকটা সাফল্য দেখা গেলেও বেশিরভাগ রাঘববোয়াল তাতে আটকা পড়বে না। তারা তো ছেঁড়া শার্ট আর লুঙ্গি পরে চটের ব্যাগে লোকাল বাসে উঠেও টাকার বস্তা এদিক-ওদিক নিয়ে যেতে পারবেন। মূলত এ কাজে নজর দেওয়ার দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দিষ্ট বিভাগের। তারা খুব সহজে সেক্টর ধরে ধরে কর্মকর্তাদের পরিবারিক ব্যাংক হিসাব তলব করবেন, তাদের গত এক বছরের বিদেশ সফরের হিসাব নেবেন। প্রশাসন এখন বলতে পারে, অবৈধ ও কালো টাকা এখন আর সাদা করা যাবে না, তবে এ ধরনের সম্পদ সরকারের তহবিলে হ্যান্ডওভার করার বিনিময়ে শাস্তি মওকুফের প্রস্তাব দেওয়া যেতে পারে।

ঢাকার কোন কোন ট্রাফিক সার্জেন্ট বা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর ৫ বছর চাকরি না করতেই ৮০ লাখ টাকার ফ্ল্যাট কিনেছেন সেটা বের করা খুব কঠিন নয়। দুচারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই বেরিয়ে আসবে। কোন সার্জেন্ট কেমন ঘুষ খেয়েছেন, এই তথ্যের একটা বড় সোর্স হলো বাস চালকরা। যেমন আজ একজন জানালেন, কল্যাণপুরের কোন এক ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের নাকি ২১টা ‘সাদা সিএনজি’ আছে, সেটার তথ্য বের করা তো কঠিন কাজ নয়। কয়েকটা সাদা সিএনজির চালককে ধরে কড়া করে জিজ্ঞেস করলেই বেরিয়ে আসবে থলের বনবিড়াল। শুধু এক সাদা সিএনজি ধরে টান দিলেই পুলিশের কোন বড়কর্তা কত সম্পদের মালিক, বেরিয়ে আসবে সেটাও।

ভূমি অফিসগুলোয় থাকা বিশেষ ‘আলমারি’তে অভিযান চালানো দরকার, টাকার বস্তাগুলোয় ঘুণে ধরার আগেই। সেই সঙ্গে এনবিআর সার্কেল অফিসগুলোয় যে টাকার লেনদেন বস্তার ওজন ধরে হয়, সেটা নিয়েও কিছু অঙ্ক করা যায় যাইলে। যেমন- এক বস্তা হাজার টাকার নোটের ওজন ১০ কেজি হলে সেখানে কত টাকা আছে.?

একটি বন্ড লাইসেন্স করার জন্য উত্তরার কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের রাজস্ব কর্মকর্তা নাছির উদ্দিন মোল্লার (সাবেক ছাত্রলীগ ক্যাডার, ঢাবি) ছত্রছায়ায় প্রতিটি লাইসেন্স প্রদান ও অডিট ছাড় দেওয়ার বিনিময়ে ১০-২০ লাখ টাকার লেনদেনের অভিযোগ আছে সেটাও খতিয়ে দেখা যায়। ওই অফিসের বহিরাগত ২০+ লোকের মাধ্যমে ওই অফিসে যে অবৈধ লেনদেন সংঘঠিত হয়, সেটা নিয়েও অভিযোগ আছে বিস্তর। এদের ও সংশ্লিষ্টদের সম্পদের হিসাব (স্ত্রী-পুত্র-কন্যাসহ) নিতে গেলে সুরসুর করে বেরিয়ে আসবে অনেক তথ্য।

এ কাজে একটা সিস্টেম অনুসরণ করা যায়। একটা সাধারণ ঘোষণা দেওয়া যায়—যারা একটি নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে তাদের অবৈধ উপার্জন সম্পদের বিবরণী সরকারের কাছে হ্যান্ডওভার করবেন, তারা শাস্তি থেকে অব্যাহতি পেতে পারেন। সরকার শুধু তাদের সম্পদটা ক্রোক করবে।

এবার আসি শিক্ষার্থীদের স্বেচ্ছাশ্রম প্রসঙ্গে। ট্রাফিক কন্ট্রোল ও ঢাকার পলিথিন পরিষ্কারের জন্য বেতনভুক্ত যে কর্মীরা আছে এবার তারা কাজ শুরু করুন। তারা ঠিকঠাক কাজ করছেন কিনা সেটা মাঝে মাঝে দেখবেন শিক্ষার্থীরা। একটি সিগনালের জন্য ১০-২০ মিলে ঘাম ঝরানোর আপাতত দরকার নেই। কারণ অতি দ্রুত সময় নষ্ট না করে পড়াশোনার পাশাপাশি আপনাদের আরও কাজ বাকি আছে।

রাজধানী ও জেলাশহরের শিক্ষার্থীদের এখন আরও কিছু বড়সড় অরাজনৈতিক বিপ্লব ঘটাতে হবে। কিছু আইডিয়ার হাইলাইটস দেওয়ার চেষ্টা করছি। এগুলো নিয়ে যখন তখন বিস্তারিত পরামর্শ ও কর্মপরিকল্পনা (যাকে বলে অ্যাকশন প্ল্যান) কিংবা আইডিয়ার আদান-প্রদান সেশনে অংশ নিতে আমি তৈরি আছি।

সবার আগে চাই একতা। মাঝারি আকারের অনেকগুলো গ্রুপ তৈরি করুন। অনলাইন ও অফলাইনে। ওয়ার্ডপ্রেসে ব্লগ সাইট থাকতে পারে নোটিশ বোর্ড হিসেবে। সেখানে টু ডু লিস্ট ও আপডেট অ্যাকশন প্ল্যান থাকবে।

একটি গ্রুপ একেক ধরনের মনিটরিং করবে। সিটি করপোরেশন ঠিকঠাক কাজ করছে কিনা, কোথায় কী বানাতে হবে, কোথায় ডাস্টবিন দরকার, কোথায় কোন খাল দখল করে কে কী বানিয়ে ফেলল, কোথায় কারা নিয়মিত ময়লা ফেলছে, কোথায় কী উৎখাত করতে হবে, কোথায় সন্দেহভাজন পরিবেশ নষ্টের কাজ হচ্ছে, কোথায় কোন কারখানা বুড়িগঙ্গায় বা অন্য কোথাও আবর্জনা ফেলছে, পুরান ঢাকার কোন বাড়িতে কেমিক্যাল বিক্রি হচ্ছে ইত্যাদি পরিবেশ সংক্রান্ত যাবতীয় নজরদারি করবে একাধিক গ্রুপ।

একাধিক গ্রুপ প্রতি সপ্তাহে একদিন ঢাকার সবুজায়নে নজর দেবে। তাদের সবার ও অন্যদের বাড়ির ছাদে গাছ লাগানো, রাস্তার আইল্যান্ডে মানুষের উপকার হয় এমন গাছ লাগানো ও সেগুলোর তদারকি করা। যেমন: ঢাকার আইল্যান্ডগুলোতে পুঁই শাকের গাছও যদি লাগানো যায় তো নিম্নবিত্তের লোকজন কয়েক বেলার তরকারির নিশ্চয়তা পাবে। এতে কার লাভ হলো কার হলো না সেদিকে তাকানো যাবে না। বিশেষ করে শাক-সবজির বীজ রোপণ, পানি দেওয়া, নিজেরা কম্পোস্ট সার তৈরি করে সেটা ব্যবহার করা, এগুলো সহজেই করা সম্ভব। কারও ছাদে বাগান না থাকলে গ্রুপের সদস্যরা গিয়ে বাগান করে দিয়ে আসবে। খরচ দেবে বাড়িওয়ালা।

মেহগনির বিরুদ্ধে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঘোষণা করুন। এ গাছ পরিবেশের ক্ষতি করে। মানুষ ও পাখি কারওরই কাজে আসে না। অথচ ঢাকার এক রেসিডেনশিয়াল কলেজের চারপাশেই দেখলাম কয়েক শ মেহগনি। যাই হোক, মেহগনি গাছ কমাতে হবে। ফলদ গাছ বাড়াতে হবে। যত্রতত্র ফল গাছের চারা রোপণের ইচ্ছা ছিল আমার। একা একা ভয় লাগে বলে সেটা করতে পারি না, তাই অন্যদেরকে মাঝে মাঝে ফলগাছের চারা উপহার দেওয়ার চেষ্টা করি। এখন শিক্ষার্থীরা চাইলে দ্রুত এ ব্যাপারে কাজ শুরু করতে পারে। মেহগনী, অ্যাকাশিয়া, ইউক্যালিপ্টাস গাছ কেন আমাদের জন্য অপকারী এবং কেন ফলদ গাছ আরও বেশি করে লাগাতে হবে সেটা জানতে হবে আগে এবং প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস করতে হবে পথেঘাটে, মাঠেঘাটে, যেখানে সেখানে (যেখানে মাটি আছে)। ফলদ গাছের আন্দোলন নামে দেশে কিছু গ্রুপ আছে। তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে বিভিন্ন গ্রামে, মফস্বলে, সরকারি অফিসের সামনে (যেখানে সেখানে) এ ধরনের গাছ লাগান। আমার ধারণা জুস, পানি ও নাস্তার মতো চারাগাছের স্পন্সরের অভাব হবে না। আমি নিজেও চারা দিতে তৈরি।

ঢাকার রাস্তার আইল্যান্ডগুলোতে গাছ লাগানো যায়—জামরুল, পেয়ারা, অ্যালোভেরা, পুঁই শাক, লেবু এবং প্রয়োজনে কাঁঠাল গাছও। এ সংক্রান্ত পরামর্শ দিতে পারে কৃষি কর্মকর্তা। কম দামে চারা সরবরাহ করবে সরকারি হর্টিকালচার সেন্টারগুলো (আসাদ গেটে একটা আছে)।

ঢাকার শত কিলোমিটারের রোড ডিভাইডার নেটওয়ার্কে লাখ লাখ পাতাবাহার গাছের পাতা তো ছাগলেও চাবায় না। আমাদের দরকার এখন বেশি বেশি সবজি, দেশি ফল। বনবিভাগের মতো ফার্নিচার তৈরির জন্য অ্যাকাশিয়া, মেহগনি আর ইউক্যালিপ্টাসের মতো বিষাক্ত গাছের দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না।

সেই সঙ্গে প্রচার মাইকিং করতে হবে মানুষ যেন নিজের মতো করে গাছগুলো যত্নআত্তি নেয়। শাক জাতীয় গাছে যেন নিয়ম করে বাসাবাড়ির অর্গানিক আবর্জনা (সবজির খোসা) এনে ঢেলে দেয়। এসব হরো বায়োডিগ্রেবেল সার। পরিবেশের ক্ষতি করবে না।

এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা ভার্মি কম্পোস্ট বা সুভাষ পালেকারের জীবন্মৃত সার তৈরির ফর্মুলা শিখে ফেললে আরও একটা বিরাট কাজ হয়ে যাবে। তখন আমাদের আর রিজার্ভের ডলার ব্যয় করে ইউরিয়া ও অন্য সার নিয়ে টেনশনে পড়তে হবে না। ভার্মি কম্পোস্ট তৈরির খরচ কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ ৫-৬ টাকা। আর ‘সুভাষ পালেকার মেথডে’ তৈরি জৈব উপাদানের কেজিপ্রতি খরচ ২টাকার মতো। নেটে সার্চ করলেই বের হবে এ দুটোর যাবতীয় তথ্য।

সেই সঙ্গে আমাদের নতুন কারিকুলামে (আগেরটা তো বাদ) কৃষিকে গুরুত্ব দিতে হবে। কৃষি এখন মোটেও ‘অপশনাল’ সাবজেক্ট নয়। আলু ভাজি কী করে করে সেটা জানার চেয়ে বস্তায় ভার্টিকেল পদ্ধতিতে আলু চাষ কীভাবে করে, তাতে কীভাবে পানি ও মাটি দিতে হবে সেটা জানা জরুরি।

ভার্মি কম্পোস্ট তৈরি ও ‘সুভাষ পালেকার জিরো বাজেট ন্যাচারাল ফার্মিং’-এর ওপরও অধ্যায় চালু করা এখন জরুরি।

আমরা তো কৃষিপ্রধান দেশ। খাদ্য রপ্তানি যতটা সম্ভব কমাতে হবে। নামি দামি আপেল ও আঙুরের পরিবর্তে উন্নত ও সুস্বাদু পেয়ারা, পেঁপে, কলা, কাঁঠাল চাষ ও সেটার জনপ্রিয়তা বাড়ানোয় মনোযোগী হতে হবে। একটি পেয়ারায় যে আপেল বা লেবুর চেয়ে বেশি ভিটামিন সি আছে সেটা সবাইকে জানাতে হবে (এর জন্য আগে নিজেকেও জানতে হবে)। সুতরাং যারা গ্রুপে থাকবে তাদের প্রতিদিন কিছু না কিছু শিখতে হবে, শেখাতে হবে।

জমির ক্ষেত্রফল বা কর্ণের দৈর্ঘ্য বের করে বসে থাকলে চলবে না। জমিতে পার্মাকালচার কী করে করতে হয়, বীজের জার্মিনেশন কী করে করতে হয়, কাটিং থেকে চারা তৈরি, টমেটো গাছে কীভাবে ছাঁটাই করলে বেশি করে ধরবে, কীটনাশক বাদ দিয়ে ফেরোমন ট্র্যাপ কী করে ব্যবহার করতে হয়, ধানের বীজতলা কী করে বানাতে হয়, লাউ গাছে কী করে হ্যান্ড পলিনেশন বা হাতে ধরে পরাগায়ন করা যায় ইত্যাদি। সবই ইউটিউবে পাওয়া যায়। বা চাইলে গ্রুপ ধরে সরাসরি কৃষি-শিক্ষা সফরে কোনো একটা গ্রামে গিয়ে হাতেকলমে চাষীর কাছ থেকে ট্রেনিং নিয়ে নেওয়া যায়।

ডাকাত পাহারা দিয়ে ডাকাতি ঠেকানো যাবে দুয়েকদিন। কিন্তু পাড়ার সভাপতি ও সহ-সভাপতি ভাইবেরাদাররা যাদের আগে দুবেলা সিঙ্গাড়া বিরিয়ানি খাইয়ে মহড়া দেওয়াতো, চাঁদা তোলাতো; তারা এখন আক্ষরিক অর্থে বেকার। তাদের দুবেলা খাবারেরই নিশ্চয়তাই নেই। তাদের কান ধরে ওঠবস করা, মারধর ও গান গাইতে বাধ্য করে সমস্যার সমাধান হবে না। আগে তাদের তথ্য টুকে রাখুন। তাদেরকে ধরে গাছ লাগানো ও আবর্জনা পরিষ্কারসহ আরও কিছু কাজে লাগানো যায় কিনা দেখুন। এর বিনিময়ে সিঙ্গাড়া আর সেভেনআপ খাওয়ান। তাদেরকে রেস্টুরেন্ট বা অন্য কোথাও কাজে লাগানোর ব্যবস্থা করে দিন। কারণ, মারধর করে ছেড়ে দিলে সে আবার অপকর্মে জড়াবে। কাজের ভেতর থাকলে সেটার ইচ্ছা অনেকটা কমে যাবে। তবে ধরা পড়লে সবার আগে তাদের বাসার ঠিকানা, রেফারেন্স, গ্রামের বাড়ির ঠিকানা, ফোন নম্বর, আঙুলের ছাপ, ফোনের আইএমইআই নম্বর ও মা-বাবারসহ এনআইডির কপি রাখতে ভুলবেন না। প্রয়োজনে ধরা পড়ার পর ছিনতাইকারী বা চাঁদাবাজের আত্মীয়দের ফোন করে বলুন, এসব তথ্য নিয়ে তারা যেন হাজির হয়।

[লেখক ধ্রুব নীল, dhrubonil@yahoo.com]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!