গ্রহাণু
গ্রহাণু

গ্রহাণু বা অ্যাস্টারয়েড ‘বেন্নু’-তেও এ বার জল পাওয়া গেল! গ্রহাণুর পিঠ (সারফেস) কী দিয়ে গড়া, তা জানতে ‘ওসিরিস-রেক্স’ নামে একটি মহাকাশযানকে ‘বেন্নু’-তে পাঠিয়েছে নাসা। গত ৩ ডিসেম্বর তা ঢুকে পড়ে বেন্নুর কক্ষপথে।

দেড়শো বছর পর এই গ্রহাণুটিই ছুটে এসে পৃথিবীকে ধাক্কা মারতে পারে বলে আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের। তাই কোনও ভাবে তাকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে দেওয়া যায় কি না বা ঘুরিয়ে দেওয়া যায় কি না তার কক্ষপথ, সেই ভাবনাও রয়েছে বিজ্ঞানীদের।

কিন্তু বেন্নুর ‘পাড়া’য় ঢুকে অন্য কিছুর তল্লাশের আগেই দিনদশেকের মধ্যে ‘ওসিরিস-রেক্স’ জানাল, প্রচুর পরিমাণে জল রয়েছে বেন্নুতে।

এ বছর উৎক্ষেপণের পর ১৪ লক্ষ মাইল পথ পাড়ি দিয়ে গত ৩ ডিসেম্বর গ্রহাণুটির পিঠ থেকে মাত্র ১২ মাইল উপরে ঢুকে পড়ে ‘ওসিরিস-রেক্স’। সেখান থেকে পাঠানো বিভিন্ন তথ্য ও ছবি বিশ্লেষণ করেই ওই গ্রহাণুতে জলের অস্তিত্বের কথা জানতে পেরেছেন নাসার বিজ্ঞানীরা।

‘ওসিরিস-রেক্স’-এর মধ্যে রয়েছে দু’টি সর্বাধুনিক স্পেকট্রোমিটার। একটি ‘ওসিরিস-রেক্স ভিসিবল অ্যান্ড ইনফ্রারেড স্পেকট্রোমিটার’। অন্যটি- ‘ওসিরিস-রেক্স থার্মাল এমিসন স্পেকট্রোমিটার’। ওই দুই স্পেকট্রোমিটারের পাঠনো তথ্য বিশ্লেষণ করে বেন্নুর মধ্যে হাইড্রক্সিল আয়নের উপস্থিতির কথা জানতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা। জল ভাঙলে তৈরি হয় হাইড্রোজেন ও হাইড্রক্সিল আয়ন। তাই বেন্নুতে প্রচুর পরিমাণে হাইড্রিক্সল আয়নের হদিশ মেলায় জলের অস্তিত্বই প্রমাণিত হল। বোঝা গেল, যে মহাজাগতিক বস্তু থেকে বেন্নুর জন্ম হয়েছিল, সেখানে জল ছিল তরল অবস্থায়।

 

নাসার বিজ্ঞানী অ্যামি সিমন বলেছেন, ‘‘বেন্নুর পিঠের প্রায় সর্বত্রই হাইড্রেটেড খনিজ পদার্থের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। যা প্রমাণ করে এই গ্রহাণু সৌরজগতের শিশু বয়সে (৫৫০ কোটি বছর আগে) তৈরি হয়েছিল। এ ব্যাপারে আরও নিশ্চিত হওয়া যাবে, বেন্নু থেকে খনিজের নমুনা নিয়ে  ওসিরিস-রেক্স পৃথিবীতে ফিরে এলে।’’

আগামী দু’বছর ধরে বেন্নুকে প্রদক্ষিণ করতে করতে নাসার মহাকাশযানটি উড়ে যাবে গ্রহাণুর উত্তর ও দক্ষিণ মেরু এবং বিষূবরেখা ও তার লাগোয়া এলাকাগুলির উপর দিয়ে। তার পর সেখান থেকে মাটি তুলে আনতে আগামী বছরের মাঝামাঝি সময় বেন্নুতে নামবে ওসিরিস-রেক্স। সেই মাটি নিয়ে নাসার মহাকাশযান পৃথিবীতে ফিরবে ৫ বছর পর। ২০২৩-এ। বেন্নুর পাড়ায় ঢুকে পড়লেও এখনও গ্রহাণুর কক্ষপথে ‘পা’ রাখেনি ওসিরিস-রেক্স। কক্ষপথে ঢুকবে ৩১ ডিসেম্বর। বেন্নুর কক্ষপথ প্রদক্ষিণ করার সময় গ্রহাণুটির ভর মাপবে নাসার মহাকাশযান। কতটা জোরে বেন্নু নিজের চারপাশে লাট্টুর মতো ঘুরপাক খাচ্ছে, সেটাও মেপে দেখা হবে। বহু দুরে থাকা বেন্নুর চেহারাটা আদতে ঠিক কী রকম, সে কতটা ভারী সে সব তথ্য ধীরে ধীরে সামনে আসবে বলে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন।