class="post-template-default single single-post postid-16635 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

হান্নান বছরে দেড় লাখ ইঁদুর ধরেন

ইঁদুর১২ বছরে ২০ লাখ ইঁদুর মেরেছেন হান্নান মোল্লা। শুনে অবাক বনেছিলেন শামীম খান

২০০৭ সালে বাড়িতে সারা বছরের খাবার হিসেবে ১৫ মণ ধান রেখেছিলেন। ভ্যান-রিকশার বডি বানানোর কাজ করতেন তখন। আয় ছিল সামান্যই। হঠাৎ একদিন গোলাঘরে গিয়ে দেখেন, মজুদ করা ধানের বারো আনাই ইঁদুর নষ্ট করে ফেলেছে। ভীষণ কষ্ট পান হান্নান। রাগও হয়। তার পর থেকেই ইঁদুর নিধনের কাজে লেগে যান। প্রথমবার নিজের কারখানায়ই ইঁদুর ধরার বাক্স বানান। প্রথমে বাড়িকে ইঁদুরমুক্ত করেন। তারপর আশপাশের বাড়ি, দোকানঘর, ফসলের মাঠ ইঁদুরমুক্ত করতে হান্নান অভিযান চালাতে থাকেন। সেবামূলক মন নিয়েই এ কাজ করতে থাকেন। বিনা মূল্যে ইঁদুরের ফাঁদও সরবরাহ করতে থাকেন পরিচিতদের। তার পর থেকে এমন নাম ছড়ায় যে আশপাশের গ্রাম থেকেও ডাক পেতে থাকেন।

কাটাখালী বাজারে
মাগুরা থেকে কাটাখালী বাজার পাঁচ কিলোমিটার। এখানে হান্নানের একটি কারখানা আছে। ভ্যান-রিকশার বডি বানানোর পাশাপাশি হান্নান এখানে ইঁদুর নিধনের ফাঁদ তৈরি করেন। এগুলোর কোনোটি কাঠের, কোনোটি মাটির, কোনোটি বা তারের। ইঁদুরের জন্য বিষটোপ বানান জিংক ফসফেট, গুড় ইত্যাদি দিয়ে। হাটবাজারে হান্নান এই টোপ বিক্রি করেন। দাম ১০ থেকে ২০ টাকা। তবে কাঠ, বাঁশ, তারের জালি বা ইলেকট্রিক সার্কিট দিয়ে তৈরি ফাঁদগুলো হান্নান বিনা মূল্যে মানুষকে ব্যবহার করতে দেন। যাঁর প্রয়োজন হয়, তিনি হান্নানের দোকান থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে যান। নিধন শেষে আবার ফেরত দিয়ে যান তাঁরা।

হান্নান জানান, প্রতিবছর গড়ে এক থেকে দেড় লাখ ইঁদুর তিনি মারেন। সাধারণত ফসলি মাঠেই বেশি ধরা পড়ে। নিধন শেষে মাটিতে পুঁতে ফেলেন। রেখে দেন শুধু ইঁদুরের লেজ। এগুলো প্রতিবছর সরকারি ইঁদুর নিধন সপ্তাহে কৃষি অফিসে জমা দেন। এভাবে জমাকৃত এক লাখ ৮৮ হাজার ৪০টি ইঁদুরের লেজ দেখিয়ে ২০০৯ সালে ইঁদুর নিধনের জন্য জাতীয় পর্যায়ে দ্বিতীয় হয়েছেন হান্নান। দুই লাখ ৩০ হাজার ১০২টি ইঁদুর নিধনের জন্য ২০১৩ সালে পেয়েছেন জাতীয় পর্যায়ের প্রথম পুরস্কার। এ ছাড়া আরো অন্তত ২০টি পুরস্কার পেয়েছেন স্থানীয়ভাবে। এখন রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলা থেকে তাঁকে লোকে ইঁদুর মারতে ডেকে নিয়ে যায়।

হান্নান জানালেন, কৃষি বিভাগ মারফত জেনেছেন, প্রতিবছর ইঁদুর শতকোটি টাকার ফসল বিনষ্ট করে। এ ছাড়া ৩৩ ধরনের রোগের কারণও ইঁদুর। এরা দেশের শত্রু, জাতির শত্রু। এ কারণে এদের নিধন করা একটি মহৎ কাজ। সেই উদ্দেশ্যেই স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে তিনি কাজটি করছেন।

তিনি আরো জানান, লিকুইড-জাতীয় বিষটোপ ইঁদুর নিধনের কার্যকর উপায়। জিংক ফসফেট, গুড় মিশ্রিত এই লিকুইড বেগুন, আলুজাতীয় সবজির সঙ্গে মিশিয়ে রাখলে ইঁদুর খেয়ে দ্রুত মারা যায়। এ ছাড়া তিনি ব্যতিক্রমী একটি প্লাস্টিক ডিস্ক তৈরি করেছেন, যার ওপর কোরিয়া থেকে আনা এক ধরনের শক্তিশালী আঠা লাগিয়ে দেওয়া হয়। যার ওপর ইঁদুর হাঁটামাত্রই আটকে যায়।

 

হান্নানের ব্যক্তিগত জীবন
ব্যক্তিগত জীবনে হান্নান দুই পুত্র, এক কন্যাসন্তানের জনক। স্ত্রী মর্জিনা বেগম গৃহিণী। কাঠমিস্ত্রির কাজ করে যে আয় হয়, তা দিয়ে সংসারের ব্যয় নির্বাহ করেন হান্নান। আর ইঁদুর নিধনের কাজটি করেন বিনা মূল্যে। এ কারণে মাঝেমধ্যে ভর্তুকি দিতে হয়। তবু সেবার ব্রত থাকায় তিনি এ কাজ করে আনন্দ পান। বাবার বৃহৎ সংসারে আর্থিক টানাপড়েন থাকায় তৃতীয় শ্রেণির পর আর লেখাপড়া হয়নি হান্নানের। ইঁদুর নিধনের পাশাপাশি হান্নানের আরেকটি মানবিক দিক হচ্ছে, দুর্ঘটনাকবলিত মানুষকে বিনা মূল্যে সেবা দেওয়া। তাঁর দোকানটি মাগুরা-যশোর বিশ্বরোডসংলগ্ন হওয়ায় প্রায়শ দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হন তিনি। যখনই কোনো সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে, আক্রান্তদের নিজ খরচে হাসপাতালে পৌঁছে দেন, আত্মীয়-স্বজনকে খবর দেন। এ ছাড়া এলাকার অন্তত ২০ জন যুবককে ভ্যান-রিকশা তৈরি করে দিয়ে কর্মক্ষম করে গড়ে তুলেছেন তিনি। এ জন্য প্রাথমিক পুঁজি বিনিয়োগ করেছেন তিনি নিজে। পরে উপার্জিত অর্থ থেকে হান্নানকে শোধ করেছে তারা। এ ছাড়া অনেককে একইভাবে ছোট ছোট দোকানও করে দিয়েছেন।

ছবি : লেখক

 

https://www.youtube.com/watch?v=r0t64gzuqtg&feature=share&fbclid=IwAR2tVZLXdTFzHoJMrXzMi-J40d921nhOPGFtKSBcRbWHvAkApJKHEw7NKpU

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!