Friday, March 29
Shadow

এবার কী হবে নবাবের নাতির! শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন বদনখানি

নবাবের নাতিসিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে তাঁর বাবার অংশীদারি রয়েছে। ওই হাসপাতালে ৭০০ নার্স নিয়োগ করা হবে। বিনা খরচে এসব লোককে বিদেশে পাঠানো হবে। নিজেকে ঢাকার নবাব পরিবারের বংশধর অর্থাৎ স্যার সলিমুল্লাহ খানের বংশধর হিসেবে পরিচয় দিয়ে আলী হাসান আসকারী নামের সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্রের এক দলনেতার বিরুদ্ধে সোয়া তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফেনীর চার শতাধিক দরিদ্র লোকের কাছ থেকে তিনি এই টাকা হাতিয়ে নেন। ভুক্তভোগী লোকজন এখন পথের ফকির। তাঁদের কেউ কৃষক, কেউ সবজি বিক্রেতা, আবার কেউ কারখানার শ্রমিক। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ধার করে টাকা নিয়ে একটু সুখের আশায় তাঁরা বিদেশ যেতে চেয়েছিলেন। এখন তাঁরা পথের ফকির। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ ও গোয়েন্দা তদন্ত বিভাগের সামনে এসব ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া যায়।

এসব ভুক্তভোগীর পক্ষে এ বিষয়ে কথা হয় ফেনীর বিখ্যাত রাশিদীয়া মাদরাসার সহকারী শিক্ষক আব্দুল আহাদ সালমানের সঙ্গে। তিনি গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, চলতি বছরের মার্চ-এপ্রিল মাসে আসকারীর সঙ্গে ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয় হয় তাঁর। এরপর আসকারী প্রথমে নিজেকে ধনাঢ্য ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দেন। সেই সঙ্গে তাঁর ফেসবুক প্রফাইলে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে ছবি দেখে সহজেই বিশ্বাস করে ফেলেন। পরিচয়ের এক পর্যায়ে তাঁদের মধ্যে মোবাইল ফোনে কথা হয়। আসকারী তাঁকে তাঁদের মাদরাসায় স্থায়ীভাবে বিপুল অঙ্কের টাকা দান করতে চান। এসব নিয়ে আলোচনার মধ্যেই আসকারীর কথামতো তিনি এলাকার যাঁরা সিঙ্গাপুর যেতে চান, এ রকম প্রায় ৪০০ লোক সংগ্রহ করেন। তাঁদের পাসপোর্ট হাতে নিয়ে বিষয়টি আসকারীকে জানালে আসকারী তাঁদের প্রত্যেককে মেডিক্যাল করতে হবে বলে জানান। এ জন্য প্রত্যেকের সাড়ে আট হাজার টাকা করে খরচ হবে। মেডিক্যালের কথা বলে তাঁদের দুই দফায় মোহাম্মদপুরের ঢাকা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে প্রায় ৩৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন আসকারী। এখান থেকে শুরু তাঁর প্রতারণা। পরে প্রত্যেকের একটি করে নার্সিং সার্টিফিকেট জোগাড় করতে বলেন তিনি। নার্সিং সার্টিফিকেট ম্যানেজ করতে না পেরে তিনি এ বিষয়ে আসকারীর কাছে সহযোগিতা চান। এ সময় আসকারী বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) একজন কর্মকর্তার নাম্বার দিয়ে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। আসলে বিএমডিসির কথিত ওই কর্মকর্তা ছিলেন আসকারীর প্রতারণার সহযোগী রাজু ওরফে রাশেদ। রাশেদকে ফোন দেওয়ার পর তিনি কাজটি গোপনে করে দিতে পারবেন জানিয়ে এ জন্য প্রত্যেক সার্টিফিকেটের বিপরীতে ৭৫ হাজার টাকা করে দাবি করেন জানিয়ে সালমান বলেন, প্রথমে বিষয়টি নিয়ে তাঁর সন্দেহ হলেও পরে রাজি হয়ে যান তিনি। বিদেশগামী চার শ ব্যক্তির কাছ থেকে ৭৫ হাজার টাকা করে নিয়ে তিনি ছয় দফায় মোট সোয়া তিন কোটি টাকা আসকারী ও রাশেদের হাতে তুলে দেন। এর পর থেকেই আসকারী টালবাহানা শুরু করেন। পরে বুঝতে পারেন, তিনি আসলে প্রতারিত হয়েছেন।

সালমানের ভাষ্য, পরিচয়ের পর তিনি যখন আসকারীর সঙ্গে দেখা করতে ঢাকায় আসেন, তখন তাঁর সঙ্গে একবার ধানমণ্ডির একটি রেস্টুরেন্টে এবং পরে ধানমণ্ডির জাহাজবাড়ির সামনে দেখা করেন। আসকারী এ সময় তাঁকে জাহাজবাড়িটি তাঁর বাবার এবং বাবা সেটির সংস্কারকাজ করাচ্ছেন বলে সালমানকে জানান। সালমান বলেন, ‘নবাব পরিবারের বংশধর হিসেবে আমি তাঁর সব কথাই বিশ্বাস করেছি।’

রাকিবুল এহসান মিনার নামের একজন আসকরির বিরুদ্ধে লেখা চুরির আভিযোগ করে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘এই প্রতারক ২০১৭ সালে আমার লেখা ১১ টি কবিতা নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছিলো। বিষয়টি নিয়ে অনেকের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি কেউই কিছু করতে পারেননি,নবাব পরিবারের সম্মানে সাংবাদিকেরাও নিউজ করেননি। আচ্ছা, তখন যে ভাইয়েরা আমাকে নবাব পরিবারের সম্মানের দোহাই দিয়ে প্রতিবাদ করতে দেননি আজ তারা কি বলবেন? বাংলার নবাব সলিমুল্লাহ্ খানের পরিবারের একজন সদস্য হয়ে কিভাবে এতোটা নিচু কাজ করতে পারলেন? আমি তো সেদিনই আপনাকে চিনে গিয়েছিলাম যেদিন আপনার মতো মানুষ ছোটখাটো কবির লেখা চুরি করে নিজের নামে চালিয়ে দিতে দুইবার ভাবেননি,আবার ইনবক্সে নক করার পর ব্লক করে দিয়েছিলেন, আজ কোথায় গেলো আপনার সব ক্ষমতা,কোথায় গেলো নবাবী? কোথায় পুলিশ, র‍্যাব, সেনাবাহিনীর প্রটোকল? আপনি না অক্সফোর্ড ও ঢাবির সভাপতি? আপনি না ২০০+ বইয়ের লেখক? আপনার উপর না ২৫ জন পিএইচডি করেছিলো? তাহলে এতো বড় সম্মানিত ব্যক্তির চরিত্র আজ জাতির সামনে এভাবে প্রকাশিত কেন হলো? নিশ্চই মহান আল্লাহ্ সুবিচারক,আলহামদুলিল্লাহ।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আসকারী এ ধরনের প্রতারণা আরো অনেক মানুষের সঙ্গে করেছেন। প্রতারণার জন্য তিনি বহুরূপ ধারণ করতেন। তিনি কখনো নিজেকে নবাব সলিমুল্লাহ খানের বংশধর হিসেবে পরিচয় দিতেন, আবার কখনো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফুফু হিসেবে পরিচয় দেন। প্রধানমন্ত্রীর পারিবারিক আত্মীয় হিসেবে গণভবনে তাঁর অবাধ যাতায়াত রয়েছে বলে প্রচার চালাতেন। এখানেই শেষ নয় তাঁর প্রতারণা, জানান দুবাইয়ে আছে তাঁর গোল্ডের কারখানা। বাবা ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, থাকেন নিউ ইয়র্কে। সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের মালিকানায় অংশীদারি রয়েছে তাঁদের। বাবার কোটি কোটি টাকার ব্যবসা পরিচালনা করেন তিনি নিজেই। তাঁর ফেসবুক প্রফাইলে রয়েছে মন্ত্রী-এমপিসহ সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে ছবি। চলেন বডিগার্ড নিয়ে। নিজে থাকেন নেদারল্যান্ডসে। বছর পাঁচেক ধরে দেশে এসেছেন। দানবীর। এ রকম আরো অনেক পরিচয় তাঁর। কিন্তু আসলে সবই ভুয়া। সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করাই তাঁর আসল পেশা।

প্রতারণা করে এরই মধ্যে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) হাতে পাঁচ সহযোগীসহ গ্রেপ্তার হয়েছেন তিনি। গত মঙ্গল ও বুধবার টানা দুই দিনের অভিযানে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় জানিয়ে সিটিটিসির ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, নিজেকে নবাব বংশের পরিচয়ে প্রতারণার মাধ্যমে আসকারী এরই মধ্যে দেশের অনেক মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আসকারী একজন ভয়ংকর প্রতারক।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসকারী স্বীকার করেছেন, তাঁর এই প্রতারণার কাজে সার্বক্ষণিক সহযোগী ছিলেন রাজুসহ আরো বেশ কয়েকজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!

error: Content is protected !!