কবুতর পালার কিছু নিয়ম আছে। শুধু পালার খাতিরে পালেন। একজন খামারি ১০০ কবুতর পাললে তাকে খামারি বলা যাবে না। যদি না তিনি সঠিক ভাবে খামারের পরিচর্যা করেন অথবা এই ব্যাপারে সঠিক পদক্ষেপ না নেন। কিন্তু আপনি যদি অল্প কবুতর সফল ভাবে পালেন তবেই আপনাকে একজন আদর্শ খামারি বলা যাবে। আর এটাই একজন খামারির সার্থকতা ও আনন্দ। কবুতর অসুস্থ হলে জবাই করে ফেলা বা কাওকে দিয়ে দিয়া অথবা অপেক্ষা করা কবে মারা যাবে এটা কখনই একজন সত্যিকার কবুতর প্রেমির কাজ হতে পারে না। তিনি যতই দাবি করেন না কেন!
যাই হোক প্রসঙ্গে ফিরে আসি। কথাই আছে প্রতিকার থেকে প্রতিরোধ ভাল, আর সেই প্রতিরোধ টা সঠিক হতে হবে। প্রথমে খেয়াল রাখতে হবে যেন আপনার খামারে ধুলা না থাকে। কারন সকল রোগের সুত্রপাত হয় এখান থেকে। এর পর খেয়াল রাখতে হবে যেন সাল্মনিল্লার প্রতিরোধ কোর্স ঠিকমত করান হচ্ছে। কারন সাল্মনিল্লা কবুতরের অন্যতম সমস্যা আর যা থেকে অনেক রোগের সুত্রপাত হয়। মানুষের ক্ষেত্রে আছে যে যদি আমাশয় হয় তাহলে টা নির্মূল তাড়াতাড়ি করতে হয়। কারন আমাশয় হল ৯০ টি রোগের জন্মদাতা। তেমনি বলা হয় সাল্মনিল্লা হল কবুতরের জন্য ১০০ টা রোগের জন্মদাত্রী বা জননী । তবে এই সাল্মনিল্লা নিয়ে অনেকের ভুল ধারনা পোষণ করে থাকেন। কারন সাল্মনিল্লা যেকোনো জিবিত প্রাণীর মধ্যে কমবেশি থাকবেই। আর এটা ১০০% নির্মূল সম্ভব না,তবে এটাকে নিয়ন্ত্রন এ রাখাতাই বুদ্ধিমানের কাজ।
যেমন সবুজ পায়খানা শুরু করলে অনেকে অস্থির হয়ে যায়। কিন্তু সবুজ পায়খানা করলেয় যে সাল্মিনিল্লা আক্রান্ত টা সঠিক নয়। তবে যদি দেখা যায় যে সবুজ পায়খানার সাথে সাথে খাওয়া দাওয়াও যদি বন্ধ করে দেয় তাহলে অনতিবিলম্বে কবুতরের অ্যান্টিবায়টিক চিকিৎসা শুরু করা উচিত। তবে মনে রাখতে হবে, যা অনেক বার অনেক পোষ্ট এ বলেছি যে, প্রতিরোধ মুলক হিসাবে কখনই অ্যান্টিবায়টিক আদর্শ হতে পারে না। যদিও অনেকে সেটাই করে থাকেন। কবুতরের ৩ নম্বর যে সমস্যা যা নিরব ঘাতক হিসাবে কাজ করে টা হল। এক্সটারনাল(শরীরের পোকা) ও ইন্টারনাল প্যারাসাইট (ক্রিমি) নির্মূল করা। ক্রিমির ক্ষেত্রে অনেকেই মানুষের ঔষধ ব্যাবহার করতে পছন্দ করেন। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে ক্রিমির ঔষধ একটি খুবই উচ্চ ক্রিয়াশীল যা, কবুতরের শরীরে খুবই মারাত্মক প্রভাব পরে ও স্ট্রেস তৈরি করে। আর এই স্ট্রেস অনেক রোগের কারন হতে পারে। যা আমার স্ট্রেস এর পোষ্ট এ বিস্তারিত লিখা হয়েছে। অনেকে হয়ত ভাবতে পারেন যে,এত কিছু কিভাবে বুঝবো? কবুতর ত আর কথা বলতে পারে না। হা ভাই পারে কিন্তু আমরা অনেকেয় টা বুঝতে পারি না। একজন বোবা মানুষও আকার ইঙ্গিতে তাঁর কথা জানাই,তেমনি আপনার কবুতর আপনাকে নানা ভাবে বুঝাবে তাঁর অসুবিধার কথা। কিন্তু দুর্ভাগ্য বশত অনেকেই তা বুঝতে পারেন না। যেমন কিছুক্ষণ আগে আমাকে একজন জানালেন যে টার কবুতর কাল পায়খানা করছে ও খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। খুবই আশ্চর্য হলাম! উনাকে লিভার টনিক দিতে বললাম তিনি আবার জানালেন যে এটা ধরে খাওাবেন কিনা? আমার সন্ধেহ হল,উনাকে আবার জিজ্ঞাস করলাম যে পায়খানা টা কাল না ঘন সবুজ? এরপর তিনি ভাল করে পরীক্ষা করে জানালেন যে হা এটা গাড় সবুজ সাথে আমাশয় ভাব আছে……। আমার এটা বলার উদ্দেশ্য হল যে আপানর কবুতর কে যখন আপনি পর্যবেক্ষণ করবেন তখন ঠিকমত খেয়াল করবেন। কারন আপনার একটা ছোট ভুল সিধান্ত আপনার কবুতরের জীবনহানির জন্যই যথেষ্ট।
কবুতরের যে শুধু এই সব রোগই হয় তাই নয়, পেটে ব্যাথার মত কিছু সাধারন ক্রনিক সমস্যাও দেখা দেয়। কিভাবে বুঝবেন? যেমন দেখবেন…যে গুজ হয়ে বসে আছে বা পা টা একটু ছরিয়ে হাঁটছে। পিছনের পড় একটু ভিজার মত হয়ে আছে। এই এই সবই আপনাকে তাঁর চলাফেরা দেখে বুঝতে হবে। শুধু তাই নয় আপনি যদি কারও উপদেশ নেন, তাহলে তাকে ব্যাপারটা একটু ভালমত বর্ণনা করবেন। কারন আপনার বর্ণনার উপর তিনি আপনাকে ঔষধ দিবেন। তাই আপনার ভুল বর্ণনার খেসারত হয়ত আপনার নিরিহ প্রাণীটির কেই দিতে হতে পারে। এমন সব ছোটখাটো অথচ সাধারন পর্যবেক্ষণ আপানকে এক অসাধারন সাফল্য এনে দিবে। তবে তার আগে কিছু নিয়ম আপনাকে মেনে চলতে হবে। যেমনঃ
১) প্রথমে রোগ নির্ণয় করুন।
২) রোগ নির্ণয়ের সাথে সাথে ওষুধ নির্বাচন করুন ও প্রয়োগ করুন। হোক না তা রাত বা দিন।
৩) অ্যান্টিবায়টিক প্রয়োগ করলে অবশ্যই স্যালাইন দিতে ভুলবেন না।
৪) রোদের মধ্যে ভিটামিন বা ঔষধ রাখবেন না।
৫) অনেকে অমনে করেন অসুখ হলেই রোদে দেওয়া উচিত। কিন্তু কথাটা আসলে ঠিক না। আর এই ব্যাপারটা একটু খেয়াল রাখবেন।
৬) কিছু ঔষধ আছে যেগুলো পুরতা মিক্স করতে হয় নিয়ম অনুযায়ী, যেমনঃ সাসপেনসান ধরনের ঔষধ। আর এই ঔষধ ১ সপ্তাহ পর ফেলে দিতে হয়।
৭) অ্যান্টিবায়টিক নির্বাচনে একটু খেয়াল রাখুন, প্রথমে মধ্যম ধরনের অ্যান্টিবায়টিক আরপর উচ্চ অ্যান্টিবায়টিক ব্যাবহার করা উচিৎ। প্রথমেই উচ্চ লেভেল এর অ্যান্টিবায়টিক ব্যবহার করলে পরে সমস্যা হতে পারে।
৮) ঔষধ ব্যাবহারে ধৈর্য ধরতে হবে। ১ তা ঔষধ ব্যাবহারে যদি কাজ না হয় তাহলে কমপক্ষে ২/৩ দিন পর অন্য ঔষধে যেতে হবে।
৯) যেকোনো রোগের ঔষধ ব্যাবহারের সময় অবশ্যই চালের স্যালাইন ব্যাবহার করতে হবে।কারন অধিকাংশ কবুতর পানিশূন্যতা তে বেশি মারা যায়।
১০) অ্যান্টিবায়টিক ব্যাবহারের পর রোগ ভাল হলে অবশ্যই,প্রবায়টিক দিতে হবে। যাতে করে শরীর আবার শক্তি সঞ্চয় করতে পারে বা পুনরায় ভাল ব্যাকটেরিয়া তৈরি হতে পারে। তা না হলে সরদি,পাতলা পায়খানা,পারাল্যইসিস এর মত রোগ ফিরে ফিরে আসবে।
১১) হোমিও একটা ঔষধ প্রয়োগ এর পর আরেকটি ঔষধ দিলে পানির বাটি ভাল করে ধুয়ে ফেলতে হবে। তানা হলে অন্য ঔষধের মিস্রনে ঔষধের গুনাগুন নষ্ট হতে পারে। এমনকি আলাদা ড্রপার ও ব্যাবহার করতে হবে।
১২) কবুতরের অধিকাংশ রোগ তৈরি হয় লিভার জনিত সমস্যা থেকে তাই নিয়মিত লিভার টনিক দিতে হবে।
১৩) অসুস্থ কবুতরকে কোন প্রকার ভিটামিন দেওয়া যাবে না।
১৪) একই সঙ্গে ২ ধরনের অ্যান্টিবায়টিক ব্যাবহার করা যাবে না।
আপনি আপনার কবুতরের অভিভাবক যে যাই বলুক আপনার কবুতরের ভাল আপনি ছাড়া আর কেও বেশি ভাল বুঝতে পারবে না। কিন্তু তার জন্য আপনাকে সেই অনুভব তৈরি করতে হবে। আপনাকে সেই কবুতরের জায়গায় অনুভব করতে হবে। যেমন এক ফেসবুক বন্ধু তাঁর কবুতরের চোখে সমস্যা হয়েছিল। কারও উপদেশ না পেয়ে তিনি তাঁর ছেলের চোখ উঠার জন্য যে ঔষধ ব্যাবহার করেছিলেন,তার কবুতরের জন্য সেটাই ব্যাবহার করলেন। আর তাতেই কাজ হল। কারন তিনি তাঁর ছেলের জায়গাই তাঁর কবুতর কে অনুভব করেছিলেন। আর তাঁর ভালবাসা তাকে এই সাধারন জ্ঞান অর্জনে সাহায্য করেছিল। আর এটাই দরকার সবচেয়ে বেশি।
“সকল প্রাণী ঈশ্বরের একটি পরিবারের মত হয় এবং তার পরিবারের সবচেয়ে যারা দয়াশীল তাদের আল্লাহ্ ভালবাসেন.” এটা আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ(সঃ) এর এই হজরত আনাস (রা) দ্বারা বর্ণিত (৩:১৩৯২ বুখারী থেকে উদ্ধৃত)।
আর অসুখ ও বিপদে মাথা ঠাণ্ডা রাখা একটা বড় গুন,আর এই গুন সবায়কে অর্জন করতে হবে। অন্তত চেষ্টা করাতাই অনেক বড় ব্যাপার।
মুহাম্মদ আমিন (রা.) হতে বর্ণিত। হুজুর (সা.) বলেছেন “যে প্রাণীর প্রতি দয়া করে, আল্লাহ্ তার প্রতি দয়া করবেন।”
মূল লেখক : সোহেল রাবি