Monday, December 23
Shadow

কাকে প্রধানমন্ত্রী বানাতে মাঠে নেমেছেন, ড. কামাল ?

প্রভাষ আমিন: সংলাপের জন্য আওয়ামী লীগের সভানেত্রীকে চিঠি পাঠানোর ১৮ ঘণ্টার মধ্যে সিদ্ধান্ত পেয়ে গেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন। আমার ধারণা এত দ্রুত জবাব পাবেন, এমনটা হয়তো ড. কামালও ভাবেননি। বৃহস্পতিবারের সংলাপে পাল্টে যেতে পারে রাজনীতির হিসাব-নিকাশ। তবে সংলাপের পাশাপাশি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দিকেও নজর দিতে হবে। ঐক্যফ্রন্ট ১১ দফা লক্ষ্যে পৌঁছতে ৭ দফা দাবি দিয়েছে। কিন্তু ঐক্যফ্রন্টের অনেকগুলো বিষয় এখনও পরিষ্কার নয়। সরকার যদি ৭ দফা দাবি না মানে তাহলে তারা নির্বাচনে যাবেন কিনা, গেলে কীভাবে যাবেন, আসন ভাগাভাগি কী হবে, ঐক্যফ্রন্ট জিতলে তাদের সরকারের ধরন কী হবে, কে প্রধানমন্ত্রী হবেন? এমন অনেকগুলো প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই। এসব প্রশ্ন ঐক্যফ্রন্ট বা বিএনপি এড়িয়ে যায়। এতসব প্রশ্ন কার্পেটের নিচে রেখে তারা দ্রুত এগিয়ে যেতে চাইছেন। তাদের মধ্যে তাড়াহুড়োর ভাব। যেন ক্ষমতায় আসা সময়ের ব্যাপারমাত্র। ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সাথে বৈঠকে কূটনীতিকরাও জানতে চেয়েছেন, ঐক্যফ্রন্ট জিতলে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন? ড. কামাল জানিয়েছেন, সেটা সংসদ ঠিক করবে। ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্ব কার হাতে এ প্রশ্নেও কৌশলী ড. কামাল, ঐক্যফ্রন্ট নাকি যৌথ নেতৃত্বে চলছে। আমরা জানি, কোনো দল বা জোট নির্বাচনে যায় একজন নেতাকে সামনে রেখে। সেই নেতাকে দেখেই জনগণ রায় দেয়। আওয়ামী লীগ জিতলে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হবেন, সেটা নিশ্চিত। ঐক্যফ্রন্ট জিতলে কে প্রধানমন্ত্রী হবেন, তা অনিশ্চিত।

যখন ড. কামাল হোসেন এবং বি চৌধুরী এক সাথে ছিলেন; তখন শোনা যাচ্ছিল বি চৌধুরী রাষ্ট্রপতি হবেন আর ড. কামাল হবেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু বি চৌধুরীকে বাইরে রেখেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হওয়ায় এই সমীকরণ ভেঙ্গে গেছে। আর ড. কামাল হোসেন গণফোরাম সভাপতি হিসেবে এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, তিনি আগামী নির্বাচনে অংশ নেবেন না। কোনো পদের ব্যাপারেও তার আগ্রহ নেই। তার এই বক্তব্য শোনার পর আমার মনে একটা প্রশ্ন এসেছে, ঐক্য তবে কেন করলেন?

এই প্রশ্নের উত্তর পরে জানবো। তার আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে লাগা কিছু জটের দিকে একটু আলো ফেলতে চাই। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে আছে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া, বিএনপি, জেএসডি এবং নাগরিক ঐক্য। এছাড়া দুজন দলবিহীন ব্যক্তি এই ঐক্যের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিলো। সরকারের পতন নিশ্চিত করতে সরকারবিরোধী একটি বৃহত্তর জোট গড়তে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আর ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের তাড়াই ছিলো বেশি। কিন্তু এই দুইজনই এখন ঐক্যফ্রন্টের বোঝা।

আপনি সরকারের বিরুদ্ধে জোট করলে সরকারও আপনাকে বিপাকে ফেলতে চাইবে, দোষ খুঁজে বেড়াবে; এটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু সরকারকে খুঁজতে হয়নি। তারা দুজনই সরকারের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছেন। জাফরুল্লাহ চৌধুরী লাইভ টিভি টকশোতে সেনাপ্রধান সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। পরে নিজেকে অসুস্থ দাবি করে ক্ষমাও চেয়েছেন। কিন্তু ক্ষমা চাইতে গিয়ে আবারও ভুল তথ্য দিয়েছেন। যিনি কিডনির রোগী, ডায়াঅলিসিসের কারণে যার কথার ঠিক থাকে না; তাকে কথা বলতে হবে কেন। বেশি কথা বলতে গিয়ে এখন তিনি বিপাকে পড়েছেন। এখন তার বিরুদ্ধে জমি দখল, মাছ চুরির মত হাস্যকর মামলা হচ্ছে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে হামলা হচ্ছে। এসবই অন্যায়। কিন্তু সুযোগটা তো জাফরুল্লাহ চৌধুরীই করে দিয়েছেন। ব্যারিস্টার মইনুল যে বুড়ো বয়সে জেল খাটছেন, সেও তো তার দোষেই। মানহানির মামলা জামিনযোগ্য, কিন্তু লাইভ টিভি টকশোতে এক নারী সাংবাদিককে ‘চরিত্রহীন’ বলে সেই মামলার উপাদান তো তিনিই সরবরাহ করেছেন। একে তো নিজেরা বিপদে পড়েছেন, তার ওপর তারা এখন জোটকে বিপাকে ফেলতে চাইছেন। তাদের কথায় সন্দেহ-অবিশ্বাস বাড়ছে ঐক্যফ্রন্টে। ফাঁস হওয়া এক টেলিফোন কথোপকথনে ব্যারিস্টার মইনুল এক সাংবাদিককে বলেছেন, তারেক রহমানের নেতৃত্ব ধ্বংস করতেই ড. কামাল হোসেনকে আনা হয়েছে। এ কথা শোনার পর বিএনপি আর ব্যারিস্টার মইনুল বা ড. কামালকে বিশ্বাস করবে? তার পক্ষে বিবৃতি দিতে রাজি না হওয়ায় ঐক্যফ্রন্ট ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন ব্যারিস্টার মইনুল। পরে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সাথে টেলিফোন আলাপে ব্যারিস্টার মইনুল বলেছেন, ড. কামাল কোনো কাজের নয়। আর দু’জনই ড. কামালকে বারবার ‘কাওয়ার্ড’ বলেছেন। মূল নেতাই যদি কাওয়ার্ড হয়, তাহলে ঐক্যের ভবিষ্যৎ কী?

ঐক্যফ্রন্ট গঠনের আগে ঐক্য প্রক্রিয়া বলেছিল, স্বাধীনতাবিরোধীদের সাথে কোনো ঐক্য হবে না। কিন্তু বিএনপি ২০ দলীয় জোটে জামায়াতকে রেখেই ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিয়েছে। এখন ড. কামাল বলছেন, জামায়াত ও তারেক রহমানের সাথে ঐক্যফ্রন্টের কোনো সম্পর্ক নেই। জামায়াতের ব্যাখ্যাটা না হয় বুঝলাম। কিন্তু তারেক রহমানের সাথে ঐক্যফ্রন্টের কোনো সম্পর্ক নেই, এটা শুনতে হাস্যকর লাগে। তারেক রহমান যে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সে দল ঐক্যফ্রন্টে আছে, কিন্তু তারেক রহমানের সাথে নাকি সম্পর্ক নেই। কীভাবে সম্ভব? মির্জা ফখরুল, ড. খন্দকার মোশাররফ আর ব্যারিস্টার মওদুদ কি তারেক রহমানের বিএনপি ছেড়ে নতুন বিএনপি গঠন করেছেন? ঐক্য প্রক্রিয়ার সময় মাহমুদুর রহমান মান্না একাধিকবার বলেছিলেন, ‘ক্ষমতায় এলে তারা দুই বছর দেশ চালাবেন। পরের তিন বছর চালাবে বিএনপি’। কিন্তু এখন আর তিনি সেটি বলছেন না। ড. কামাল যদি নির্বাচনে অংশ না নেন, কোনো রাষ্ট্রীয় পদ না নেন; তাহলে ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতায় এলে কে প্রধানমন্ত্রী হবেন, কারা দেশ চালাবেন? কাকে প্রধানমন্ত্রী বানাতে মাঠে নেমেছেন ড. কামাল?
সংলাপের ডামাডোলে যেন এই প্রশ্নগুলো হারিয়ে না যায়।
লেখক : হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!