অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজনের ফলাফল হলো ক্যান্সার। পৃথিবীতে দুইশ প্রকারের বেশি ক্যান্সার রয়েছে। এখন পর্যন্ত ক্যান্সারের কার্যকর কোনো ওষুধ আবিষ্কার করতে পারেনি বিজ্ঞানীরা। তবে এবার ক্যান্সার চিকিৎসায় নতুন এক ধরনের ডিম আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। এসব মুরগির শরীরে আছে মানব জিন। আর মুরগির ডিমে এমন কিছু প্রোটিন রয়েছে যা দিয়ে ক্যান্সারের চিকিৎসায় ওষুধ বানানো সম্ভব।
ব্রিটেনের এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসলিন টেকনোলজিসের গবেষক ড. লিসা হেরন বলেন, মুরগির জিনগত পরিবর্তন করে বিশেষ এই ডিম তৈরি করেছেন যা কিনা বাত এবং বেশ কিছু ক্যান্সারে প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে সক্ষম। এই ডিম তৈরি করতে বিজ্ঞানীরা মানুষের শরীরে প্রোটিন তৈরিকারী বিশেষ জিনকে মুরগির শরীরে ঢুকিয়ে দেন। এর ফলে মুরগির ডিমের মাধ্যমে ফিরে আসবে সেই সব প্রোটিন।
তাদের মতে, কারখানায় এসব ওষুধ উৎপাদন করতে যতো খরচ হবে, মুরগির মাধ্যমে এই একই ওষুধ তৈরিতে একশ গুণ কম খরচ পড়বে। এই পদ্ধতিতে বাণিজ্যিকভাবেও ওষুধ তৈরি করা সম্ভব। তারা জানান, ক্যান্সার প্রতিরোধী ডিম পাড়লে মুরগির স্বাস্থ্যেরও কোনো ক্ষতি হবে না।
বিজ্ঞানীরা এর আগে পরীক্ষা করে দেখিয়েছেন ছাগল, খরগোশ এবং মুরগির শরীরে জিনগত কিছু পরিবর্তন ঘটালে তাদের ডিম কিংবা দুধে এমন কিছু প্রোটিন তৈরি হয় যা ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এবার যে পরীক্ষাটির কথা বলা হচ্ছে, সেটি আগের তুলনায় অনেক বেশি কার্যকরী, উন্নত মানের এবং এই পদ্ধতিতে খরচও অনেক কম।
ড. হেরন বলছেন, এই পদ্ধতিতে যে খরচ হবে সেটা কারখানায় প্রোটিন উৎপাদনের খরচের তুলনায় ১০ থেকে ১০০ গুণ কম। খরচ কম হওয়ার পেছনে একটি বড় কারণ হিসেবে তারা বলছেন, মুরগির ঘর তৈরি করতে খুব বেশি ব্যয় হয় না, কিন্তু কারখানায় এসব প্রোটিন উৎপাদনের জন্য জীবাণুমুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়।
বিজ্ঞানীদের ভাষ্য, মানবদেহে নানা রোগের জন্ম নেয়ার পেছনে একটি বড় কারণ আমাদের শরীরে নির্দিষ্ট কোনো রাসায়নিক কিংবা প্রোটিন খুব বেশি পরিমাণে তৈরি হয় না। কিন্তু এসব প্রোটিনের ঘাটতি পূরণের মাধ্যমে অনেক রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। মানবদেহের সেই প্রোটিনের অভাব পূরণের কাজটি করবে এই ডিম। ড. হেরন এবং তার সহ-গবেষকরা মুরগির ডিএনএর ভেতরে মানুষের এমন একটি জিন ঢুকিয়েছেন যা মানবদেহের প্রোটিন তৈরি করে থাকে।
তারা পরীক্ষা করে দেখেছেন, এই ডিমের সাদা অংশের মধ্যে বিশেষ ঐ প্রোটিন পাওয়া গেছে। হেরন জানান, ডিমের সাদা অংশের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ মানব প্রোটিন রয়েছে। মানুষের রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে দুটো গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন হচ্ছে IFNalpha2a এবং macrophage-CSF, যার উপরে বিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণায় গুরুত্ব দিয়েছেন। প্রথম প্রোটিনটি ক্যান্সার প্রতিরোধী এবং দ্বিতীয়টি ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যুকে সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ওষুধের একটি ডোজ তৈরি করতে মাত্র তিনটি ডিমই যথেষ্ট এবং একটি মুরগি বছরে ৩০০টির মতো ডিম পাড়তে পারে। গবেষকরা বলছেন, প্রচুর মুরগি চাষের মাধ্যমে এসব ওষুধ বাণিজ্যিক হারেও উৎপাদন করা সম্ভব। একই সাথে এসব মুরগি থেকে প্রাণী-স্বাস্থ্যেরও জন্য উপকারী নানা ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি করা যাবে।এসব ডিম শুধু পরীক্ষার জন্যই উৎপাদন করা হয়েছে। বিক্রির জন্য এখনো বাজারে ছাড়া হয়নি।
এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হেলেন স্যাঙ বলেছেন, মুরগির ডিম থেকে আমরা এখনো মানব দেহের ওষুধ তৈরি করিনি। তবে এই গবেষণা থেকে এটা স্পষ্ট যে মানুষের শরীরে ক্যান্সারসহ নানা রোগের চিকিৎসায় এই ডিম থেকে পাওয়া প্রোটিন কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারবে।-বিবিসি।