ক্যান্সার মুক্ত জীবন গড়তে আমাদের করণীয় - Mati News
Saturday, December 13

ক্যান্সার মুক্ত জীবন গড়তে আমাদের করণীয়

ক্যান্সার

ক্যান্সার শব্দটি শুনলে সবাই আঁতকে ওঠেন। কিন্তু আমরা অনেকেই হয়তোবা জানি না এই বহুল আলোচিত রোগটি প্রতিরোধ যোগ্য। ‘আমি আছি, আমি থাকব’ এই প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে গত ৪ই ফেব্রুয়ারি ২০১৯ পালিত হলো বিশ্ব ক্যান্সার দিবস। ক্যান্সার রোগ সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং এই রোগ প্রতিরোধে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগকে উৎসাহিত করাই ছিল দিবসটি পালনের উদ্দেশ্য। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, ক্যান্সারের সাথে জীবনযাত্রার যোগসূত্র রয়েছে। আপনার খাবার, পানীয়, বায়ু গ্রহণ এবং ধূমপানের মতো অভ্যাসের সাথে রয়েছে ক্যান্সারের নিবিড় সম্পর্ক এবং আপনার প্রতিদিনের জীবনযাত্রার পরিকল্পনাই আপনাকে ক্যান্সারমুক্ত জীবনের সুসংবাদ দিতে পারে। ক্যান্সার হওয়ার আগেই একে প্রতিরোধ করা প্রয়োজন।

 

ক্যান্সার মুক্ত জীবন গড়তে আমাদের করণীয়ঃ

১। সুষম খাবার গ্রহণ, পর্যাপ্ত পরিমাণে আঁশ ও এন্টি-অক্সিডেন্টযুক্ত খাবার খাওয়া, তাজা মৌসুমি ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়া, চর্বিজাতীয় ও তৈলাক্ত খাবার কম খাওয়া, প্রিজারভেটিভ বা কেমিকেলযুক্ত খাবার বর্জন, ফাস্টফুড ও কোমল পানীয় বর্জন ইত্যাদি ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক।

২। মোটা মানুষের অন্ত্র, জরায়ু, পিত্তথলি ও স্তন ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা বেশি। তাই শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন। প্রতিদিন নিয়মিত ব্যায়াম এবং ৩০/৪০ মিনিট হাঁটাহাঁটি ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

৩। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে সিগারেট বা তামাকে চার হাজার রাসায়নিক দ্রব্য রয়েছে। তার মধ্যে ৪৩টিই ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। ধুমপান শুধু ধুমপানকারীর শরীরেই ক্যান্সার সৃষ্টি করে না, পরোক্ষভাবে ধুমপায়ীর আশপাশের লোকদের মধ্যেও ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। ক্যান্সার প্রতিরোধে ধূমপান সম্পূর্ণভাবে ত্যাগ করা এবং অন্যান্য তামাক জাতীয় দ্রব্য যেমনঃ সাদাপাতা, জর্দা ইত্যাদির ব্যবহার বন্ধ করার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিতে হবে।

৪। মদপানে বিরত থাকুন। লিভার ক্যান্সারের প্রধান কারণ মদপান। শিরায় ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে মাদক গ্রহণ এবং অন্য সব ধরনের নেশা জাতীয় দ্রব্য পরিহার করুন।

৫। সূর্যের অতি বেগুনী রশ্মি ত্বকের ক্যান্সার সৃষ্টিতে অনেকাংশে দায়ী এজন্য দীর্ঘসময় সরাসরি সূর্যের নিচে থাকা উচিত নয়। প্রয়োজনে ছাতা বা হ্যাট ব্যবহার করা ভালো।

৬। ক্যান্সারের প্রতিরোধে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপায় পরিবেশ দূষণ, বিশেষ করে বায়ু ও পানিদূষণ বন্ধ করা। কর্মক্ষেত্রে ক্যান্সারের তৈরিকারী রেডিয়েশন বা কেমিক্যালের সংস্পর্শ পরিহার করা।

৭। বেশ কিছু জীবাণুর বিরুদ্ধে টিকা নিয়ে ক্যান্সারের প্রতিরোধ সম্ভব, যেমনঃ হেপাটাইটিস বি-ভাইরাস, হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের টিকা ইত্যাদি।

৮। ক্যান্সারের ৭টি সতর্ক লক্ষণ সবাইকে জানতে হবে।

• পায়খানা-প্রসাবের অভ্যাসের পরিবর্তন
• কোন ক্ষত না শুকানোর প্রবণতা
• অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ
• স্তনে কোন শক্ত দলা অথবা শরীরের অন্য কোন জায়গায় শক্ত পিন্ড দেখা দেয়া
• পেটের অজীর্ণতা কিংবা ঢোক গিলতে অসুবিধা
• আঁচিল বা তিলের অস্বাভাবিক কোন পরিবর্তন
• ঘনঘন কাশি কিংবা গলা বসে যাওয়ার প্রবণতা।

 

শরীরে কোনো সমস্যা অবহেলা না করে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নেওয়া, ক্যান্সারের লক্ষণ নিয়ে পড়াশোনা করে জানা, বিশেষজ্ঞ পরামর্শ অনুযায়ী পরিবারের সুষম খাদ্য নিশ্চিত করা, কোনোভাবেই এসব দায়িত্ব এড়ালে চলবে না। আসুন সবাই মিলে সচেতন হই, অন্যকে সচেতন করি, আর সমাজ থেকে রোগটিকে নির্মূলের সর্বাত্মক চেষ্টা করি।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *