ছোট্ট লাতিন শব্দ ‘ক্লক্কা’। বাংলা তর্জমা করলে যার মানে দাঁড়ায়‘ঘণ্টি’। সাধারণত, সময়ের সঙ্গেই এই শব্দের যোগ। লাতিন ক্লক্কা থেকেই ‘ক্লক’ শব্দকে অভিধানে ঠাঁই দিল ইউরোপীয়রা। ধরে নেওয়া হয়, প্রথম ঘড়ির মডেলও তৈরি হয় ইউরোপেই। সেও প্রায় ৭০০ বছর আগে। কিন্তু ভেবে দেখেছেন কি পুরনো হোক বা আধুনিক, যে কোনও প্রকার কাঁটাই কেন বাঁ দিক থেকে ডান দিকে ঘোরে?
আধুনিক প্রযুক্তির ঘণ্টা, মিনিট, সেকেন্ডের কাঁটাওয়ালা ঘড়ি আসার অনেক আগেই সূর্য ঘড়ির ব্যবহার শুরু। মিশরীয়রাই প্রথম প্রকৃতিনির্ভর এই ঘড়ি নির্মাণ করেছিলেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের চলনের উপর নির্ভর করে সূর্যঘড়ির দণ্ডের ছায়ার দৈর্ঘ্যে ও অবস্থানের উপর নির্ভর করেই সময় গুনতেন পুরনো যুগের মানুষ। তাতে কিছু ভুলচুক থাকত বইকি! পরে কাঁটা-সমেত ঘড়ি এলে নির্ভুল পরিমাপ সম্ভব হয়।
কিন্তু এই ঘড়ির কাঁটা তো ডান দিক থেকে বাম দিকেও ঘুরতে পারত, কিন্তু ঘোরে না কেন? ভেবে দেখেছেন কখনও?
আগেই বলেছি ইউরোপে প্রথম তৈরি হয় ঘড়ির মডেল। তার আগে সূর্যঘড়ির উপরই নির্ভর করতে হত। ইউরোপ যেহেতু পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত, তাই ভৌগোলিক নিয়মেই সেখানে সূর্য হেলে থাকে দক্ষিণ আকাশে। তাই সূর্যঘড়ি ব্যবহারের সময় তাতে যে দণ্ড থাকত, তার ছায়া বাঁ দিক থেকে ডান দিকে সরত। সেই চলন অনুযায়ীই নির্ধারিত হত সময়। সূর্যঘড়ির কাঁটা বাম দিক থেকে ডান দিকে সরায়, ঘণ্টা-মিনিট-সেকেন্ডের কাঁটা দেওয়া উন্নত প্রযুক্তির ঘড়ির কাঁটাও ঘুরতে থাকল বাম দিক থেকে ডান দিকে। এ ভাবেই সূর্যঘড়িতে সময় দেখার অভ্যাসেরও বদল ঘটল না।
সূর্যঘড়ি অবলুপ্ত হলেও এখনও সেই উত্তর গোলার্ধে সূর্যের চলনের উপর নির্ভর করেই আমরা ঘড়ি দেখি নিয়মিত। মজার বিষয়, যদি ঘড়ির প্রথম মডেলটি অস্ট্রেলিয়া বা নিউজিল্যান্ডে তৈরি হত, তা হলে ঘড়ির কাঁটা বাঁ দিকে ঘুরত। কারণ, দক্ষিণ গোলার্ধে সূর্যঘড়ির ডান দিক থেকে বাঁ দিকে ঘোরে!