গলায় ব্যথা হলেই আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বলে দিই, ‘নিশ্চয়ই টনসিল হয়েছে।’ তো এই টনসিল জিনিসটা কী? এটা হলো আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার একটা অংশ। আমাদের মুখের ভিতরেই চারটি ভাগে তারা অবস্থান করে। লিঙ্গুয়াল, প্যালাটাইন, টিউবাল ও অ্যাডেনয়েড। এর মধ্যে কোনও একটির প্রদাহ হলেই তাকে ‘টনসিলাইটিস’ বলা হয়।
ঋতু পরিবর্তনের সময় এলেই দুশ্চিন্তা শুরু হয় অঙ্কিতের বাবা-মায়ের। দুশ্চিন্তার কারণ হল বছর দশেকের অঙ্কিতের গলা ব্যথা বা টনসিল। কোনও ভাবেই তা ঠেকানো যাচ্ছে না।
অঙ্কিতের মতো অনেক শিশু আছে যাদের মুখ থেকে দুর্গন্ধ যেন কিছুতেই দূর করা যায় না। আবার অনেক সময়ে দেখা যায় বেশ কিছু শিশুর কথা ক্রমশ অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কারণ বুঝতে না-পেরে হতাশ হয়ে পড়ছেন পরিবারের লোকজন। কিন্তু তাঁদের কেউ আন্দাজ করতে পারছেন না যে, এর পিছনে আছে টনসিল আর এডিনয়েড গ্রন্থির সংক্রমণ। টনসিলের ব্যথা প্রধানত দুই ধরনের। তীব্র বা অ্যাকিউট টনসিলাইটিস এবং দীর্ঘমেয়াদি বা ক্রনিক টনসিলাইটিস।
গলায় ব্যথা হলেই আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বলে দিই, ‘নিশ্চয়ই টনসিল হয়েছে।’ তো এই টনসিল জিনিসটা কী? এটা হলো আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার একটা অংশ। আমাদের মুখের ভিতরেই চারটি ভাগে তারা অবস্থান করে। লিঙ্গুয়াল, প্যালাটাইন, টিউবাল ও অ্যাডেনয়েড। এর মধ্যে কোনও একটির প্রদাহ হলেই তাকে ‘টনসিলাইটিস’ বলা হয়।
অ্যাকিউট টনসিলাইটিসের ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন গলার টনসিলের পাশাপাশি এডিনয়েড গ্রন্থিটাও কেটে বাদ দেওয়ার জন্য। তাতে অনেক অভিভাবক ভয় পেয়ে যান, পিছিয়ে আসেন। ভাবেন, “এইটুকু বাচ্চা। অস্ত্রপচার করা কি ঠিক হবে?” আমার মতে, অস্ত্রোপচার করে বাদ দেওয়াটাই সঠিক সিদ্ধান্ত। কারণ, এই সংক্রমণ যদি কোনও ভাবে স্থায়ী আকার নেয় তা হলে সমস্যা গুরুতর হতে পারে। এমনকি হৃদপিণ্ডের ভালবও খারাপ হতে পারে।
টনসিল মানব দেহের একটি সাধারণ অঙ্গ। শূন্য থেকে পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়তে এটি সাহায্য করে। থাকে গলার দুই দিকে। আর একটা গ্রন্থি একই কাজ করে, তা হল এডিনয়েড গ্রন্থি। যা নাকের পিছন দিকে থাকে। টনসিলের পাশাপাশি এই গ্রন্থিও বড় হয়ে যেতে পারে।
তার জন্য বাচ্চা নাকের বদলে মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস নিতে শুরু করে। ঘুমের সময় নাক ডাকে, দিনের বেলা ঝিমিয়ে থাকে, কর্মক্ষমতা কমতে থাকে। বাচ্চা সাইনাসের সংক্রমণে ভুগতে পারে। সর্বক্ষণ মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়ার ফলে তার গলায়ও সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। এতে বাচ্চার মুখে দুর্গন্ধ হয়। অনেক ক্ষেত্রে দাঁত উঁচু হয়। অনেক দিন ধরে এই সমস্যা থাকলে বাচ্চা বোকাবোকা দেখতে হয়ে যেতে পারে। একে বলে এডিনয়েড ফেসিস। টনসিল ও এডিনয়েড গ্রন্থি বড় যাওয়ার ফলে মধ্যকর্ণে জল জমে যেতে পারে। তার ফলে কানের পর্দা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
বার-বার সংক্রমণের ফলে টনসিলে ফাইব্রোসিস হয়ে যেতে পারে। বিটা হিমোলাইটিক স্ট্রেপটোকক্কাস নামে স্থায়ী ব্যাকটেরিয়া বাসা বাঁধে। যার থেকে গাঁটে-গাঁটে সংক্রমণ হয়ে ব্যথা হতে পারে। যাকে বলে রিউম্যাটিক হার্ট ডিজিজ। সঠিক চিকিৎসা না-হলে হৃদযন্ত্রের সমস্যা বাড়ে। কোনও শিশু মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস নিলে, তার মুখ দিয়ে দুর্গন্ধ বার হলে, কথা ক্রমশ অস্পষ্ট হয়ে গেলে( হট পটেটো ভয়েজ) সঙ্গে-সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। না হলে স্থায়ী সঙ্কট তৈরি হতে পারে। বিভিন্ন কারণে টনসিলের সংক্রমণ হতে পারে। যেমন১) ঠান্ডা লেগে গেলে।২) ডিপথেরিয়া হলে। ৩) রক্তের বিভিন্ন রোগ থেকে। আবহাওয়ার পরিবর্তনের সময় জীবানুঘটিত কারণে টনসিলে সংক্রমণ হতে পারে। এই সময় বাচ্চাদের সাবধানে রাখা জরুরি। টনসিলে ক্রমাগত সংক্রমণ হলে তা স্থায়ী বা ক্রনিক আকার নিতে পারে। যা থেকে রোগীর শরীরে স্থায়ী সমস্যা দেখা দিতে পারে। গলায় একটা সর্বক্ষণের অস্বস্তি, সামান্য ঠান্ডায় গলা ব্যথা হতে পারে।
প্রত্যেক মানুষের মুখগহ্বরের একেবারে পেছনে দু’পাশে দুটি লসিকাগ্রন্থি থাকে। মুখ খুললেই তা দেখা যায়। এগুলো হচ্ছে প্যালাটাইন টনসিল। অবস্থানভেদে আরও কয়েক ধরনের টনসিল থাকলেও সাধারণ মানুষ টনসিল বলতে এ অবস্থাকেই বোঝে। টনসিলের প্রদাহ বা টনসিলাইটিস সাধারণত ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং কিছু ইমিউনোলজিক্যাল কারণে হয়। বিটা হিমোলাইটিক স্ট্রেপটোকক্কাস ব্যাকটেরিয়া, অ্যাপ্সটিনবার ভাইরাস, সাইটোমেগালো ভাইরাস, এডেনো ভাইরাস- এ রোগ সৃষ্টির জন্য মীলত দায়ী। টনসিলাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির গলায় খুসখুস ভাব, খাবার গিলতে সমস্যা ও ব্যথা লাগা, কণ্ঠস্বর পরিবর্তন হওয়া, মুখে দুর্গন্ধ হওয়া, কান ব্যথা, মাথাব্যথা, জ্বর, খিঁচুনি, গলার নিচে লসিকা গ্রন্থি ফুলে যাওয়া, শরীর ব্যথা, ক্লান্তি ভাব, নাকডাকার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। অনেকের টনসিলের ওপর সাদা-হলুদ দাগ অথবা ছাই বর্ণের আবরণ দেখা যেতে পারে। এ ধরনের উপসর্গ তিন থেকে চার দিন এমনকি দুই সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে।
আক্রান্ত ব্যক্তি হালকা গরম জলে নুন মিশিয়ে কুলকুচি করতে পারেন। মুখগহ্বর পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ঠাণ্ডা পানীয় ও আইসক্রিম পুরোপুরি পরিহার করতে হবে। লেবু বা আদা চা খেতে পারেন। গলায় ঠান্ডা লাগানো যাবে না। গলায় তীব্র ব্যথা ও জ্বর থাকলে প্যারাসিটোমল জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়। ব্যাকটেরিয়াজনিত ইনফেকশন হলে চিকিৎসকের অনেক ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক খেতে দেন।
টনসিল নিয়ে অনেক ভুল ধারণাও রয়েছে। যেমন, টনসিল বাদ দিলে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এটা ঠিক নয়। কারণ, টনসিল ছাড়াও গলায় ৩০০-এর বেশি লালাগ্রন্থি বা গ্ল্যান্ড আছে যেগুলি রোগ প্রতিরোধ করে। অনেক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, টনসিলে অস্ত্রোপচার করার আগে ও পরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতায় কোনও তারতম্য হয় না।
অনেক সময় গলার বাইরের দিকে দুই পাশে দুটি দানা ফুলে উঠতে দেখা যায়। অনেকে এগুলিকে টনসিল মনে করলেও এটা টনসিল নয়। রোগী বড় করে মুখ হাঁ করলে ভিতরের দিকে যে দুটি বড় ফোলা অংশ দেখা যায়, তা-ই হলো টনসিলাইটিসে আক্রান্ত টনসিল। অ্যাকিউট ইনফেকশন থাকাকালীন টনসিলে অস্ত্রোপচার করা যাবে না। তাতে ইনফেকশন সারা শরীরে ছড়িয়ে যেতে পারে। জ্বর বা ব্যথা থাকা অবস্থাতেও অস্ত্রোপচার হবে না। উচ্চ রক্তচাপ থাকলে আগে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এনে তবে অস্ত্রোপচার করতে হবে। রোগীর ডায়াবেটিস থাকলে আগে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে এনে তবে অস্ত্রোপচার করা যাবে।




















