ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্যান্সারের মধ্যে ফুসফুসে ক্যান্সার অত্যন্ত প্রাণঘাতী। কারণ, দীর্ঘদিন পর্যন্ত ফুসফুসে হওয়া ক্যান্সারের উপসর্গগুলিকে ঠিক মতো চেনাই যায় না। তাই তার চিকিৎসা শুরু করতেও অনেকটা দেরি হয়ে যায়। ফলে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীকে বাঁচানো খুবই মুশকিল হয়ে পড়ে।
আমাদের অধিকাংশেরই একটা বদ্ধমূল ধারণা হল, কারও ফুসফুসে ক্যান্সার হয়েছে মানেই তিনি ধূমপায়ী। জানেন কি, ধূমপান না করলেও ফুসফুসে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কিন্তু থেকেই যায়! ধূমপান ছাড়াও কিছু বদঅভ্যাস বা অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসের কারণে ফুসফুসে ক্যান্সার হতে পারে। আসুন জেনে নেওয়া যাক তেমনই কয়েকটি কারণ যেগুলি ফুসফুসে ক্যান্সারের ঝুঁকি ক্রমশ বাড়িয়ে দিচ্ছে…
১) ধূমপান করলে ক্যান্সারে আক্রান্তের সম্ভাবনা বাড়ে সে কথা আমরা সকলেই জানি। একটি মার্কিন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, সে দেশের ৯০% ফুসফুসের ক্যান্সারের জন্য দায়ী ধূমপানের অভ্যাস। কিন্তু পরোক্ষ ধূমপান আপনার ফুসফুসেরও সমান ক্ষতি করছে। কারণ, ধূমপান যারা করেন এবং যারা ধুমপায়ীদের আশেপাশে থাকেন ও ধোঁয়ার সংস্পর্শে আসেন, তাদেরও ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যায়।
২) যে কোনও ধরনের ক্যান্সার হতে পারে ‘জেনেটিক মিউটেশন’-এর (বংশগত পরিব্যক্তি) কারণে। এই যাঁদের পরিবারে ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী রয়েছেন বা ছিলেন (বিশেষ করে ফুসফুসে ক্যান্সারে আক্রান্ত) তাঁদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির থেকেই যায়। এ ক্ষেত্রে পরিবারের সকলেরই চিকিত্সকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত চেকআপ করানো উচিত।
৩) আর্সেনিক, নিকেল, অ্যাসবেস্টোস, ক্রোমিয়াম বা এই জাতীয় মৌলগুলির সংস্পর্শে অতিরিক্ত আসার ফলে ফুসফুসে ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশ কয়েকগুণ বেড়ে যেতে পারে। যাঁরা বিভিন্ন রাসায়নিক কল-কারখানায় কাজ করেন, তাঁদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই বেশি।
৪) যাঁদের পেশাগত কারণে বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক যুক্ত ধোঁয়ার আশেপাশে দিনের অধিকাংশ সময় কাটাতে হয়, তাঁদেরও ফুসফুসে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি অন্যান্যদের তুলনায় অনেকটাই বেশি। যেমন, যাঁরা ডাইং-এর কারখানা কাজ করেন, ট্যানারিতে কাজ করেন বা রাস্তায় পিচ ঢালাই করেন তাদেরও ফুসফুসের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই বেশি।
৫) বর্তমানে পরিবেশ দূষণের পরিমাণ অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে এবং এই দূষণই ফুসফুসের ক্যান্সারের একটি অন্যতম কারণ। যাঁরা দৈনিক রাস্তাঘাটে ধুলোবালি, গাড়ির ধোঁয়ার মধ্যে চলাফেরা করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি অনেকটাই বেশি! গ্রামের তুলনায় শহরাঞ্চলে বাতাসে দূষণের মাত্রা অনেকটাই বেশি। তাই শহরাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে ফুসফুসের ক্যান্সারের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই বেশি।