Monday, December 23
Shadow

দ্য লিভার সেন্টারের পরিচালক ডা. মবিন খান বললেন, নবজাতকের লিভারে প্রদাহ ও সমাধান

নবজাতকের লিভারে প্রদাহ

নবজাতকের লিভারে প্রদাহ

নবজাতকের অনেক ধরনের লিভার রোগ হতে পারে। এ রোগগুলো জিনগত ত্রুটির কারণে মা-বাবা থেকে সন্তানে হয়। লিখেছেন দ্য লিভার সেন্টার, ঢাকা, বাংলাদেশের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মবিন খান

নানা ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও প্রোটোজোয়ার মাধ্যমে নবজাতকের ইনফেকশন হয়। এই ইনফেকশনের অংশ হিসেবে নবজাতকের লিভারে প্রদাহ হয়। সংশ্লিষ্ট জীবাণু মায়ের শরীর থেকে নবজাতকের রক্তে প্রবেশ করে জন্ডিস দেখা দেয়। এতে শিশুর জন্মের সাত দিন থেকে লিভার প্রদাহের পাশাপাশি অন্যান্য অঙ্গও আক্রান্ত হতে পারে।

 

কারণ

যেসব ভাইরাসের কারণে নবজাতকের প্রদাহ হতে পারে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—রুবেলা, হার্পিস সিমপ্লেক্স, সাইটোমেগালো ভাইরাস, এইচআইভি এবং হেপাটাইটিস ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’। সাইটোমেগালো ভাইরাস, হার্পিস সিমপ্লেক্স ও রুবেলা নবজাতকের লিভারে প্রদাহ সৃষ্টি করে বিভিন্ন মাত্রার জন্ডিস তৈরি করতে পারে। এই রোগীদের একটি বড় অংশের কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না এবং একটি অংশের জন্ডিস হয় ও লিভার বড় হয়ে যায়। এদের আরোগ্য লাভের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ৩০ ভাগ রোগীর লিভার সিরোসিস হতে পারে, যাতে লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টেশনের প্রয়োজন হতে পারে।

এইচআইভি ভাইরাস নবজাতক পর্যায় পেরিয়ে ছয় মাসের শিশুর লিভারে প্রদাহ সৃষ্টি করে। তা অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করাতে হয়। হেপাটাইটিস ‘এ’, ‘বি’ এবং ‘সি’ ভাইরাস সাধারণত নবজাতকের লিভার প্রদাহ ও জন্ডিস তৈরি করে না। কিন্তু ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাস দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ সৃষ্টি করে লিভার সিরোসিসের কারণ হতে পারে।

 

বংশগত লিভার রোগ

নবজাতকের অনেক ধরনের বংশগত লিভার রোগ (হেরেডিটরি লিভার ডিজিজ) হতে পারে। এ রোগগুলো জিনগত ত্রুটির কারণে বংশগতভাবে মা-বাবা বা মা থেকে সন্তানে সঞ্চার হয়। অনেক সময় জিনগত ত্রুটির কারণে লিভারের কোষ ও পিত্তনালির বিভিন্ন অংশের অসম্পূর্ণতা দেখা দেয়। তখন শিশুর লিভার প্রক্রিয়াজাত বিলিরুবিনসহ পিত্তরস ঠিকমতো ক্ষুদ্রান্ত্রে নিঃসরণ করতে পারে না। ফলে রক্তে প্রক্রিয়াজাত বিলিরুবিন বেড়ে যায়। এতে জন্ডিস, প্রস্রাবের হলুদ রং, মলের ফ্যাকাসে রং ও ক্ষুধামান্দ্য জাতীয় লক্ষণ প্রকাশ পায়।

 

চিকিৎসা

হার্পিসজনিত প্রদাহে শিরাপথে গ্যানসাইক্লোভির ওষুধ প্রয়োগে চিকিৎসা করতে হয়। রুবেলাজনিত লিভার প্রদাহ নিজে নিজেই ভালো হয়ে যায়। ব্যাকটেরিয়াজনিত প্রদাহের মধ্যে অন্যতম প্রধান হলো—সিফিলিস ইনফেকশন, যা চিকিৎসা করতে হয় পেনিসিলিন দিয়ে। টক্সোপ্লাজমা নামক প্রোটোজোয়ার চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয় স্পাইরামাইসিন।

 

পরামর্শ

নবজাতকের জন্ডিস দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। তবে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম। এ জন্য মায়ের যাতে এ রোগগুলো না হয় অথবা মায়ের রোগ হয়ে থাকলে চিকিৎসার আগে যেন সন্তান না নেওয়া হয়।

গর্ভবতী মায়ের শরীরে হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাস সুপ্তাবস্থায় থাকলে অথবা মায়ের হেপাটাইটিস ‘বি’জনিত দীর্ঘমেয়াদি লিভার প্রদাহ থাকলে লিভার বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিতে হবে। সন্তান জন্মের সময় ইমিউনোগ্লোবিউলিন প্রয়োগ করে হেপাটাইটিস ‘বি’ প্রবেশের আশঙ্কা কমিয়ে আনা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!