Monday, April 29
Shadow

এসেছে নতুন নায়িকা…

নায়িকা ঐশী
মাত্র ছয় মাসে বদলে গেছে ঐশীর জীবন। চেনা জগৎ ছেড়ে ব্যস্ত হয়েছেন লাইট, ক্যামেরা আর অ্যাকশনের দুনিয়ায়। মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ খেতাব জিতে ঘুরে এসেছেন মিস ওয়ার্ল্ডের চূড়ান্ত আসর থেকে। সম্প্রতি চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন মিশন এক্সট্রিম নামের নতুন একটি চলচ্চিত্রে। তাহলে জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী এখন নায়িকা। কেমন নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন ঐশী?

মিশন এক্সট্রিম–এর শুটিং চলছে। এই ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী। চলচ্চিত্র অভিনেতা আরিফিন শুভর বিপরীতে নায়িকা তিনি। প্রথম ছবিতেই এমন অভিনেতাকে সহশিল্পী হিসেবে পেয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত ঐশী। শুরুতেই সেই উচ্ছ্বাস ঢেলে দিলেন কথায়। ‘শুভ ভাইয়া অসাধারণ মানুষ। কখনো বুঝিয়ে দেন, কখনো আদর করেন, কখনো পরামর্শ দেন, কখনো বকাও দেন। তাই প্রথম ছবিতে ভাইয়াকে সহশিল্পী হিসেবে পেয়ে আমি মুগ্ধ।’

তাঁর কোনো ছবি দেখেছেন? ঐশী মনে করার চেষ্টা করেন। তারপর একনাগাড়ে বেশ কয়েকটা নাম বলেন, ‘ঢাকা অ্যাটাক, কিস্তিমাত, নিয়তি, প্রেমী ও প্রেমী, ছুঁয়ে দিলে মন—এসব দেখেই ভাইয়ার ভক্ত হয়েছিলাম আর ভাগ্যচক্রে এখন সহশিল্পী।’

আমি হব…

ঐশীর চলচ্চিত্রে যুক্ত হওয়ার ব্যাপারটি যেন ধরাবাঁধাই ছিল। মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতা থেকে ফিরে আসার পর অনেকেই প্রস্তাব নিয়ে গেছেন ঐশীর কাছে। কিন্তু সেই চেনা সংলাপ— ‘ব্যাটে বলে মেলেনি’। এবার মিলেছে। ঢাকা অ্যাটাক চলচ্চিত্রের সফলতার পর নতুন ছবি মিশন এক্সট্রিম শুরু করতে যাচ্ছেন কাহিনিকার সানী সানোয়ার। এ বছরের পয়লা ফাল্গুনে সেই ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব পান ঐশী। ‘ফাগুন এসেছে এ ধরায়’–এর মতো ছবি করার সুযোগ এসেছিল ঐশীর কাছে। বিনা বাক্যে এমন প্রস্তাব লুফে নিয়েছেন। কয়েকটা ধাপ অবশ্য পার হতে হয়েছে। কিন্তু যেদিন সত্যি সত্যি নায়িকা হিসেবে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করছিলেন, তখন কেমন লেগেছিল ঐশীর? ‘খুবই নার্ভাস ফিল করছিলাম। রীতিমতো আমার হাত কাঁপছিল। কলম হাতে নিয়ে ভাবছিলাম কয়েকবার, করব কি করব না! সবাই এটা দেখে বেশ মজা পেয়েছে।’ নিজের দুর্বলতার গল্প বলে হাসতে থাকেন ঐশী। আগামীর নায়িকার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। জানতে চাই, ‘নায়িকা তো হয়ে যাচ্ছেন। তো কেমন নায়িকা হওয়ার ইচ্ছা?’

মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ ২০১৮–এর চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ঐশীপ্রশ্ন শুনে একটুও ঘাবড়ান না তিনি, যেন সব প্রশ্নের উত্তর দেবেন বলেই বসেছেন। এখন শুধু লিখবেন উত্তরপত্রে। ‘আমার কাছে নায়িকার মানে আগে যা ছিল, এখনো তাই। ছোটবেলা থেকেই নায়িকাদের নিয়ে, বিশেষ করে এই জগৎ নিয়ে সবার মতোই একটা অন্য রকম ভাবনা ছিল। যখন এই জগতে পা রেখেছি, তখন অনেক ধারণাই বদলে গেছে। আমি নায়িকা বলতে বুঝতাম যিনি আসলে একটি ছবির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করবেন, প্রধান চরিত্রই বলা যায়, তাঁকে। এখন আমি নিজেই সেই জায়গায়। অনেক বড় চ্যালেঞ্জ এটা আমার জন্য।’

তবে মিস ওয়ার্ল্ডের চূড়ান্ত আসর থেকে ঘুরে এসেও ভাবেননি নায়িকা হয়ে যাবেন তিনি। জানতেন, হয়তো এই মাধ্যমে টুকটাক কাজ করতে হবে। করেছেনও তো—মিউজিক ভিডিও, বিজ্ঞাপন, শুভেচ্ছা দূত—সবই। তবে নায়িকা হওয়ার ব্যাপারটি একটু হুট করেই সামনে এসেছে। এত কিছুর জন্য সবার আগে কৃতজ্ঞতা জানালেন পরিবারকে। কারণ পরিবারের সবার সহযোগিতা ছাড়া এত দূর আসতে পারতেন না। জানতে চাই, নায়িকাদের মধ্যে আপনার আদর্শ কে? ঠিক আদর্শ বলতে নারাজ। ঐশীর ভালো লাগে শাবানা, কবরী, ববিতার অভিনয়। এ ছাড়া বলিউডের দীপিকা পাড়ুকোনের অভিনয়ও মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করেন। তবে দেশের নুসরাত ফারিয়াকে বেশি ভালো লাগে তাঁর বহুমুখী প্রতিভার জন্য। আর শুধু অভিনয়ের কথা বললে ঐশীর পছন্দ পূজা চেরিকে। এবার দেশের প্রথম সারির পাঁচজন নায়িকার নাম বলে নম্বর দিতে বলি। ঐশী পিছিয়ে যান। ‘কোনোভাবেই এটা আমি পারব না। কারণ কাউকে নম্বর দেওয়ার মতো যোগ্যতা আমার হয়নি।’—মুখে বিনয় ঢেলে উত্তর দেন ঐশী। এটাও জানিয়ে রাখেন, তিনি অন্য কোনো নায়িকার মতো নন, হবেন ঐশীর মতোই।

চরিত্রের প্রয়োজনে…

প্রথম আলো ক্যাফে লাইভে এসে গান গেয়েছিলেন ঐশী। গানটা ভালো করেন। কিন্তু নায়িকা হতে হলে তো নাচটাও জরুরি! তার কী খবর? ‘নাচটা আমি পারি।’—এক বাক্যে বলেন তিনি। তবে বাক্যের শেষে ফুটনোট হিসেবে বললেন, ‘তবে একেবার পেশাদার নয়। একটু দেখিয়ে দিলে শিখে নিতে পারব। যেমন অভিনয়টা শিখেছি। আরও সামনে শিখব।’ জানতে চাই, চরিত্রের প্রয়োজনে আপনি কী করতে পারবেন? প্রশ্নের উত্তর যেন তৈরি ছিল ঐশীর কাছে। চরিত্রের প্রয়োজনে আমি অবশ্যই অনেক কঠিন পরিশ্রম করতে পারব। চরিত্রটা ঠিকঠাক ফুটিয়ে তোলার জন্য যতবার শট দিতে হয়, দিতে পারব। তবে যদি কেউ চরিত্রের প্রয়োজনে অনৈতিক কিছু করতে বলেন, সেটা আমার দ্বারা সম্ভব নয়।’

ঐশীচরিত্রের প্রসঙ্গ আসায় জানতে চাই, মিশন এক্সট্রিম–এররিত্র বিষয়ে। ‘না এটা বলা যাবে না। দর্শক পর্দায় ঠিকঠাক দেখবেন। শুধু এতটুকু বলতে পারি, চরিত্রটা ফুটিয়ে তোলার জন্য পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টরা আমাকে একটু ওজন বাড়াতে বলেছেন। কারণ এই অবস্থায় আরিফিন শুভ ভাইয়ার পাশে দাঁড়ালে আমাকে বাচ্চা বাচ্চা লাগে।’ বলেই হাসতে থাকেন ঐশী। ততক্ষণে চা–কফি সামনে এসেছে।

সামাজিক কাজ

মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশের মঞ্চে ঐশী বলেছিলেন, সুযোগ পেলে তিনি প্রতিবন্ধীদের জন্য কাজ করতে চান। গড়তে চান একটি ফাউন্ডেশন। সেটার কাজ এগিয়ে নিয়েছেন। তবে প্রাথমিক কাজ হিসেবে কদিন আগে গিয়েছিলেন ভোলার চরফ্যাশন আম্বিয়া খাতুন মেমোরিয়াল প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে। সামনে আরও কিছু জায়গায় যাবেন। ঐশী বললেন, ‘আমার বাবা একজন সামাজিক কাজের মানুষ। সেই বাবার রক্ত আমার শরীরে। তাই সব সময় চাই মানুষের জন্য কিছু করতে। বাকিটা সামনে সবাই দেখবেন।’ আপাতত নায়িকা চরিত্রে অভিনয় আর সামাজিক কাজ, এই দুটো সামনে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি। কতটা এগোবেন, সেটাই দেখার অপেক্ষা।

একনজরে ঐশী

নাম: জান্নাতুল ফেরদৌস

ডাক নাম: ঐশী

ভাইবোন: দুই বোন

স্কুল: হাজি আবদুল গনি মাধ্যমিক বিদ্যালয়

কলেজ: মাটিভাঙ্গা ডিগ্রি কলেজ।

গ্রাম: মাটিভাঙ্গা

উপজেলা: নাজিরপুর

জেলা: পিরোজপুর

চ্যাম্পিয়ন: মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ ২০১৮

অংশগ্রহণ: মিস ওয়ার্ল্ড ২০১৮

নায়িকা হিসেবে তিন অঙ্গীকার

১. সব সময় পেশাগত আচরণ করবেন।

২. শুটিংসহ যাবতীয় কাজে যথাসময়ে উপস্থিত থাকার চেষ্টা করবেন।

৩. প্রেম বা বিয়ে করলে জানিয়ে করবেন।

সূত্র : প্রথম আলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!

error: Content is protected !!