কখনো কি ভেবে দেখেছেন, আগের যুগের মানুষের তুলনায় কেন আমরা এত অল্প সময় বেঁচে থাকি? আর যেটুকু সময় বেঁচে থাকি তাও কেনো কাটে রোগে জর্জরিত অবস্থায়? কেন আমাদের এই অবস্থা? অনেকগুলো কারণের মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হলো বসে বসে কাজ করা।
নতুন নতুন প্রযুক্তিতে পরিপূর্ণ এই আধুনিক যুগে আজ আমাদের সব কাজই বসে বসে। প্রযুক্তি যেমন আমাদের কাজ সহজ করে দিয়েছে তেমনি আমাদের শারীরিক পরিশ্রম করার অভ্যাসটিকেও কমিয়ে দিয়েছে।
স্কুল, কলেজ, অফিস বা বাসা প্রায় সব জায়গাতেই বেশিরভাগ সময় আমরা বসেই থাকি। চলুন জেনে নেই সারা দিন বসে বসে কাজ করার ফলে আমাদের কী কী ক্ষতি সাধিত হয় এবং এর থেকে নিস্তার পাবার উপায়-
সারা দিন বসে বসে কাজ করার অপকারিতা
একটি জরিপ থেকে দেখা গেছে যে, গড়ে প্রতিদিন আমরা প্রায় ৯.৩ ঘণ্টা বসে থাকি। এটা আমাদের শরীরের জন্য স্বাভাবিক না এবং এভাবে চলতে থাকলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ সঠিক নিয়মে কাজ করা বন্ধ করে দিতে থাকে।
যারা দিনে ৬ ঘণ্টার বেশি বসে থাকে তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি যারা দিনে ৩ ঘণ্টার কম সময় বসে থাকে তাদের চেয়ে প্রায় ৪০% বেশি হয়।
বসে থাকার কারণে আমাদের শরীরের ফ্যাটও বৃদ্ধি পায়। একই পরিমাণ খাবার গ্রহণ ও ব্যায়াম করার পরও একজনের ওজন কমে আর একজন মোটা হতেই থাকে। এর প্রধান কারণ অতিরিক্ত বসে থাকা।
বসার সাথে সাথে পায়ের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। প্রতি মিনিটে ক্যালরি ক্ষয়ের পরিমাণ ১ ক্যালরিতে নেমে আসে। যে সকল এনজাইম শরীরের ফ্যাট কমিয়ে আনতে সাহায্য করে সেগুলো নিঃসরণের পরিমাণও ৯০% কমে আসে।
একটি গবেষণা থেকে দেখা গেছে, যারা বসে বসে কাজ করে তাদের হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি অন্যদের থেকে প্রায় দ্বিগুণ বেশি।
অন্য একটি গবেষণা থেকে দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন ৩ ঘন্টার বেশি বসে বসে টেলিভিশন দেখে তাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ৬৪% বৃদ্ধি পায় এবং তারা ব্যায়াম করেও শরীরের ফ্যাট কমাতে পারেন না।
এর উপর আরও সময় ধরে বসে থাকলে প্রতি এক ঘণ্টায় মৃত্যুর ঝুঁকি ১১% করে বৃদ্ধি পায়।
এর থেকে বাঁচার উপায়
আমাদের অনেকেরই প্রতিনিয়ত প্রায় ৮ ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। এভাবে বসে থাকার পর ৩০ মিনিট ব্যায়াম করলেও খুব একটা উপকার হয় না। তাই যখনই সময় পাবেন চেয়ার থেকে উঠে পড়ুন। হালকা স্ট্রেচিং করুন বা হেঁটে আসুন।
সামনের দিকে ঝুঁকে বসা বা সোজা হয়ে বসার থেকে ১৩৫ ডিগ্রী অ্যাঙ্গেল বা হেলান দিয়ে বসলে মেরুদণ্ডের উপর চাপ কম পড়ে। এভাবে বসার চেষ্টা করুন। এতে করে কোমরে এবং ঘাড়ের ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।