class="post-template-default single single-post postid-12092 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

বুজুর্গদের গোপনে আমল করার হেকমত

গোপনে গোপনে আমল করা ইখলাসের নিদর্শন। আর উত্তম প্রতিদান লাভের বুনিয়াদও গোপন আমল। আমাদের পূর্বসূরি মনীষীগণ কীভাবে নিজেদের নেক আমলের বিষয় লুকিয়ে রাখতেন এবং কতো নিষ্ঠার সঙ্গে ইবাদত করতেন- জীবনী গ্রন্থাদিতে এসব কথা পড়লে, জানলে এবং অনুসরণ করতে পারলে আমাদের জীবনও হতো সফল ও সার্থক। এখানে সংক্ষিপ্ত ক’টি বিক্ষিপ্ত তথ্য পাঠক সমীপে উদ্ধৃত করা হলো-

এক. হাম্মাদ ইবনে জায়দ বলেন, তাবেয়ি আইয়ুব সাখতিয়ানি (রহ.) যখন হাদিস বর্ণনা করতেন, অনেক সময় তাঁর হৃদয় বিগলিত হয়ে কান্না চলে আসতো। কিন্তু তিনি সেটা বোঝতে দিতেন না। ভিন্ন দিকে মুখ ফিরিয়ে নিতেন এবং হাঁচি দেয়ার মতো করে শব্দ করতেন। আর বলতেন, খুব বেশি সর্দি! (আল ইলাল; ইমাম আহমাদ [আবদুল্লাহ এর সূত্রে], ১/২১২)

দুই. ইবরাহিম ইবনে আদহাম (রহ.) সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে যে, কখনো তাঁকে খাওয়ার জন্য দাওয়াত করা হতো অথচ তিনি (নফল) রোজা রাখছেন। লোকদেরকে বোঝতে না দিতে তিনি খেয়ে নিতেন (এবং পরে কাজা করে নিতেন), কিন্তু নফল আমলের কথা বলে বেড়াতেন না। (হিলয়াতুল আউলিয়া ও তাবাকাতুল আসফিয়া; আবু নুয়াইম, ৮/১০)

তিন. মুহাম্মাদ ইবনে ওয়াসি’ (রহ.) বলেন, আমি এমন বহু পুণ্যাত্মা দেখেছি; যারা আল্লাহর ক্ষমা ও দয়া লাভের আশায় এবং শাস্তির ভয়ে অশ্রু ঝরাতেন। এমন হতো যে, স্ত্রীর সঙ্গে একই বিছানায় রাত্রিযাপন করছেন আর তার গাল বেয়ে অশ্রু ঝরছে তবু স্ত্রীকে টের পেতে দিতেন না। একই কাতারে নামাজ পড়ছেন আর অজোরে কাঁদছেন কিন্তু পাশে দাঁড়ানো মুসলি¬ টেরও পাচ্ছে না। (প্রাগুক্ত, ২/৩৪৭)

চার. আ’মাশ বর্ণনা করেন, আমি স্বীয় শায়খ ইবরাহিম নাখায়ি (রহ.) এর সান্নিধ্যে ছিলাম। তিনি তখন কোরআন তেলাওয়াত করছিলেন। ইত্যবসরে জনৈক ব্যক্তি এসে ঘরে প্রবেশ করার অনুমতি চাইলো। ইবরাহিম নাখায়ি তখন মুসহাফ (কোরআনের কপি) ঢেকে দিলেন। কারণ হিসেবে বললেন, আমি চাই না লোকটি আমাকে কোরআন পড়তে দেখুক আর মনে করে বসুক যে, আমি সবসময় কোরআন তেলাওয়াত করতে থাকি! (প্রাগুক্ত, ৪/২২০)

এমন ঘটনা রাবি ইবনে (খায়সাম রহ.) এর সম্পর্কেও বর্ণিত হয়েছে। কোনো আগন্তুক দেখলে তেলাওয়াত বন্ধ করে দিতেন, মুসহাফ লুকিয়ে ফেলতেন এবং নিজে (নফল) ইবাদতে মশগুল থাকেন- সেটা বোঝতে দিতেন না। উল্লেখ্য, কেউ লুকিয়ে আমল করার পরও তা যদি প্রকাশ পেয়ে যায় তবে কোনো সমস্যা নেই। বরং ক্ষেত্রবিশেষ সেটা উত্তমও হতে পারে; যাতে অপরাপর লোকজন উৎসাহী হয়।

কোরআন ও হাদিসে উভয়দিকেই ইঙ্গিত রয়েছে। বস্তুতঃ গোপনে আমল আর প্রকাশ্যে আমল দুটিরই ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্র ও প্রসঙ্গ রয়েছে। তবে একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, কোনো ব্যক্তি যদি এমনভাবে আমল করে যে, তার আমল প্রকাশ পেয়ে যাক এমন আকাঙ্খা করে থাকে; অথবা অন্য কোনো উপায়ে তা প্রকাশ করার চেষ্টা করে; এ ধরনের আমল ইখলাসের পরিপন্থী কাজ। আর তা যদি হয় রিয়া বা লোক দেখানো ইবাদত। তবে তাতে রয়েছে ভয়াবহ ক্ষতি। ওই লোক দেখানো আমলকারীর কোনো আমলই গ্রহণযোগ্য হবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!