Monday, December 23
Shadow

ব্লাড ক্যান্সার বা লিউকেমিয়া : কারণ, প্রকারভেদ, ঝুঁকি এবং চিকিৎসা

ব্লাড ক্যান্সার

 

লিউকেমিয়া বা লিউকিমিয়া ব্লাড ক্যান্সার হিসাবেই আমাদের কাছে বেশি পরিচিত। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এর প্রধান লক্ষণ রক্তকণিকার, সাধারণত শ্বেত রক্তকণিকার অস্বাভাবিক সংখ্যাবৃদ্ধি। এই সব অতিরিক্ত শ্বেত রক্তকণিকার সঠিক কাজ করতে ব্যর্থ হয়। এর ফলে সমস্যার সৃষ্টি হয়।

লিউকেমিয়া সাধারণত শিশুদের অবস্থা হিসাবে চিহ্নিত করা হলেও এটি প্রাপ্তবয়স্কদেরই বেশি হয়। লিউকেমিয়া সাধারণত মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের বেশি হয় এবং আফ্রিকান-আমেরিকানদের তুলনায় সাদা চামড়াদের মানুষের মধ্যে বেশি দেখা যায়।

লিউকেমিয়া বা ব্লাড ক্যান্সার কী?

রক্তের তিন ধরনের কোষ আছে:
1. শ্বেত রক্ত কনিকাঃ যা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
2. লোহিত রক্ত কণিকাঃ যা অক্সিজেন বহন করে।
3. অণুচক্রিকাঃ যা রক্তপাত হলে রক্ত জমাট বাধতে সাহায্য করে।

 

প্রতিদিন কোটি কোটি নতুন রক্ত কোষ অস্থিমজ্জাতে তৈরি হয় – এদের অধিকাংশই লোহিত রক্ত কণিকা। কিন্তু লিউকেমিয়ায় প্রয়োজনের চেয়ে বেশি শ্বেত রক্ত কনিকা তৈরি হয়।

 

শরীরের দুটি প্রধান ধরনের শ্বেত রক্ত কনিকা আছে: লিম্ফয়েড (lymphoid) কনিকা/কোষ এবং মায়েলয়েড (myeloid) কনিকা/কোষ। লিউকেমিয়া এর যে কোনো একটি ক্ষেত্রে ঘটতে পারে। এইসব লিউকেমিয়ার শ্বেত রক্ত কনিকা স্বাভাবিক শ্বেত রক্ত কনিকার মতো সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে না। উপরন্তু অতিরিক্ত শ্বেত রক্ত কনিকা আপনার শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য প্রয়োজনীয় লোহিত রক্ত কণিকা এবং অণুচক্রিকা গুলিকে সরিয়ে দেয়। ফলে অক্সিজেন সরবরাহের জন্য পর্যাপ্ত লোহিত রক্ত কণিকা থাকেনা, রক্ত জমাট করার জন্য যথেষ্ট অণুচক্রিকা, বা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য যথেষ্ট স্বাভাবিক শ্বেত রক্ত কনিকারও কমতি দেখা যায়।

 

লিউকেমিয়া বা ব্লাড ক্যান্সার কিভাবে ঘটে?

লিউকেমিয়ার প্রকৃত কারণ অজানা। বিভিন্ন লিউকেমিয়ার কারণ বিভিন্ন হতে পারে। বংশগত এবং পরিবেশগত উভয় কারণই এর সাথে সংশ্লিষ্ট হতে পারে। ঝুঁকির কারণের মধ্যে রয়েছে ধূমপান, তেজস্ক্রিয়তা, কিছু কেমিক্যাল যেমন বেনজিন ইত্যাদি। যেসকল ব্যক্তির লিউকেমিয়ার পারিবারিক ইতিহাস রয়েছে, তারাও উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।

 

কাদের ঝুঁকি বেশি?

যাদের লিউকেমিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেশি তারা হলেন:
1. যাদের আগে কিছু নির্দিষ্ট ধরণের কেমোথেরাপী ও রেডিয়েশন থেরাপী দেয়া হয়েছে
2. বংশগত কোন রোগ যেমন ডাউন সিনড্রোম (Down Syndrome) থাকলে
3. রক্তের কোন অস্বাভাবিক অবস্থা যেমন মায়োলোডিসপ্লাস্টিক সিনড্রোমস (Myelodysplastic syndromes) হলে
4. উচ্চমাত্রার রেডিয়েশন দ্বারা প্রভাবিত হলে
5. কোন রাসায়নিক বস্তু যেমন বেনজিন দ্বারা প্রভাবিত হলে
6. পরিবারের কারো লিউকেমিয়া থাকলে
7. ধূমপায়ী

 

লিউকেমিয়ার ধরণ

লিউকেমিয়া দুটি উপায়ে শ্রেণীভুক্ত করা হয়:

১. কত দ্রুত বিকশিত হয় এবং খারাপ হয়ে যায় (তথাঃ অ্যাকিউট লিউকেমিয়া এবং ক্রনিক লিউকেমিয়া)।

২. কোন ধরণের শ্বেত রক্ত কণিকা জড়িত (তথাঃ লিম্ফোসাইটিক বা লসিকাকোষীয় লিউকেমিয়া এবং মায়েলজেনাস লিউকেমিয়া)।

 

এগুলোর উপর ভিক্তি করে লিউকেমিয়া কয়েক ধরণের হয়। যথা:
ক. অ্যাকিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া (ALL) : শিশুদের সবচেয়ে বেশি হয়। এটি প্রাপ্ত বয়স্কদেরও হয়, বিশেষ করে ৬৫ বছর বা তদুর্ধ। এদের কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি দেয়া হয়। বয়সভেদে বেঁচে থাকার হারের তারতম্য ঘটে – ৮৫% (শিশু) ও ৫০% (প্রাপ্তবয়স্ক)।

খ. ক্রনিক লিম্ফোসাইটিক লিউকেমিয়া (CLL): ৫৫ বছরের উপরের ব্যক্তিদের বেশি হয়। এটি কম বয়স্কদের হতে পারে, কিন্তু শিশুদের প্রায় হয় না বললেই চলে। আক্রান্তের দুই তৃতীয়াংশই পুরুষ। ৫ বছর বেঁচে থাকার হার ৭৫%। এটি অনিরাময়যোগ্য, কিন্তু কিছু ফলপ্রসূ চিকিৎসা রয়েছে।

গ. অ্যাকিউট মায়েলয়েড লিউকেমিয়া (AML): প্রধানত প্রাপ্ত বয়স্কদের হয়, খুব অল্পই শিশুদের হয়, আক্রান্তের অধিকাংশই নারী। এটি কেমোথেরাপি দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। পাঁচ বছর বেঁচে থাকার হার ৪০%।

ঘ. ক্রনিক মায়েলয়েড লিউকেমিয়া (CML): প্রধানত প্রাপ্ত বয়স্কদের হয়, খুব অল্পই শিশুদের হয়। ৫ বছর বেঁচে থাকার হার ৯০%।

 

লিউকেমিয়ার উপসর্গ

স্বাভাবিক রক্ত উৎপাদন ব্যাহত হবার ফলে নানা রকম রক্তকণিকার অভাবজনিত উপসর্গ দেখা দেখা দেয়- যেমন:

  • অণুচক্রিকার অভাবে রক্ত তঞ্চন ব্যাহত হয় ও স্বল্প চোটে রক্তপাত হতে থাকে:
    • চামড়ার নিচে কালো রক্ত জমা ছোপ দেখা যেতে পারে।
    • মাড়ি ফুলে থাকতে পারে।
    • চোখের সাদা অংশে লাল জমাট বাঁধা রক্ত দেখা যেতে পারে।
  • শ্বেত রক্ত কণিকার অভাবে নানা রকম সংক্রামক ব্যাধি হতে পারে:
    • জ্বর, কাঁপুনি ইত্যাদি।
    • নানা জায়গায় পুঁজ যুক্ত ক্ষত হওয়া।
  • লোহিত রক্তকণিকার অভাবে রক্তাল্পতা (অ্যানিমিয়া) হতে পারে:
    • দুর্বলতা, হৃৎকম্প, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি হতে পারে।
  • যকৃৎ ও প্লীহা বৃদ্ধি পেতে পারে।
  • হাড়ে চাপ দিলে ব্যাথা অনুভব হতে পারে।

শনাক্তকরণ/পরীক্ষা-নিরীক্ষা

পরিপূর্ণ রক্ত পরীক্ষা (CBC) এবং অস্থি মজ্জা পরীক্ষার মাধ্যমে লিউকেমিয়া শনাক্ত করা যায়, যদিও কিছু দুর্লভ কেসে রোগীর রক্ত পরীক্ষায় লিউকেমিয়া ধরা পড়ে না, কারণ লিউকেমিয়া প্রাথমিক অবস্থায় থাকে। লিউকেমিয়ার উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হলে চিকিৎসক এক্স রে, MRI, আল্ট্রাসনোগ্রাফি ইত্যাদি পরীক্ষা করতে দিতে পারেন। শেষে, বুকের লসিকা গ্রন্থি পরীক্ষার জন্য সিটি স্ক্যান করা যেতে পারে, তবে তা খুবই কম। কখনো-কখনো জেনেটিক সিকুয়েন্সিং এর মাধ্যমে জিনে মিউটেশন পরীক্ষা করা হয়।

 

চিকিৎসা

লিউকেমিয়ার চিকিৎসা নির্ভর করে লিউকেমিয়ার প্রকারভেদ, কতটুকু বিস্তার লাভ করেছে এবং আপনি কতটা স্বাস্থ্যবান তার উপর। চিকিৎসার প্রধান উপায়গুলো হল:

  • কেমো-থেরাপি
  • স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্ট (সোজা কথায় বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট)
  • বিকিরণ-থেরাপি/রেডিও-থেরাপি
  • জীববিদ্যা থেরাপি
  • টার্গেট থেরাপি।

https://www.youtube.com/watch?v=r0t64gzuqtg&t=6s&fbclid=IwAR0WVRUNXVp_-TYp3Xz7j-Dcd-IF-boMqXmp2Gm_ETi4JufiAcoD8frtnyw

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!