Monday, April 29
Shadow

ভাইভা বোর্ডে ছিলেন তিনজন ২০ মিনিটে ১৪টি প্রশ্ন করেছেন

ভাইভা বোর্ডে

ভাইভা বোর্ডে ছিলেন তিনজন ২০ মিনিটে ১৪টি প্রশ্ন করেছেন

চাকরির সাক্ষাত্কার দিতে গিয়ে নানা অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন মো. রফিকুল ইসলাম। বর্তমানে তিনি মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট। তাঁর ভাইভা বোর্ডের মুখোমুখি হওয়ার গল্প-

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে অনার্স করি। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে এমবিএ (মার্কেটিং) শেষ করি।

 

জীবনে প্রথমবার বিসিএসে অংশ নিই ৩৪তম-তে।

তখন আমি অনার্স শেষ করে এমবিএ ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। প্রিলিমিনারি পাস করার পর বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা দেওয়া হয়নি।

জীবনের প্রথম ভাইভা দিই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএতে এমবিএ ভর্তির সময়।

এমবিএ ভর্তির প্রস্তুতির সময়ই ইংরেজি, গণিত ও মানসিক দক্ষতার ওপর চমত্কার প্রিপারেশন হয়ে যায়। এমবিএ পাস করার পর ব্যাংক সেক্টরে চাকরির জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত ছিলাম।

ঢাকা ব্যাংক, ইউসিবিএল, সাউথ ইস্ট ব্যাংক, ইবিএল, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকসহ ছয়টি ব্যাংকে ভাইভা দিই। প্রায় প্রতিটি ব্যাংকেই কিছু কমন প্রশ্ন করে। তারা প্রথমে আমার নাম জানতে চায়। পরে শিক্ষাজীবন সম্পর্কে প্রশ্ন করে। মাস্টার্স কোথায় করেছি। কোন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করছি। ব্যাংকে চাকরি আমার পছন্দ কেন। ব্যাংকে চাকরি পেলে করব কি না?

মার্কেটিং নিয়ে এমবিএ করেছি। এটা জানতে পেরে এর ওপর অনেক প্রশ্ন করেছে। একটি নতুন পণ্য বাজারে এলে এর মার্কেটিং পলিসি কেমন হবে। কী কী ধাপে নতুন পণ্য মার্কেটিংয়ে সফলতা পাওয়া যাবে।

একটি প্রাইভেট ব্যাংকে আমাকে পরিচিত এক স্যারের নাম উল্লেখ করে প্রশ্ন করা হয়—‘উনার ক্লাস করেছ? তিনি ক্লাসে কেমন পড়ান?’

প্রতিটি ব্যাংকেই চাকরি হয়।

 

ঢাকা ব্যাংকে প্রথম চাকরি হয়। সেখানে ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি অফিসার হিসেবে যোগ দিই। বিভিন্ন কারণে অন্য ব্যাংকগুলোয় আর চাকরি করা হয়নি। ঢাকা ব্যাংকে টানা আড়াই বছরের মতো চাকরি করেছি।

 

বিসিএস দেওয়ার জন্য পারিবারিক একটা চাপ ছিল। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার ছিল আমার প্রথম পছন্দ।

এর পর ৩৭তম বিসিএসের আবেদন করি। বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (বিপিএসসি) সিলেবাস ধরে বাংলা, সাধারণ জ্ঞান ও বিজ্ঞানের অংশটা ভালো করে আয়ত্ত করতে থাকি।

ওই সময় ‘এমপি থ্রি’ সিরিজের বইগুলো ফলো করেছি। প্রিলি ও লিখিত পরীক্ষার পর ভাইভা দেওয়ার সুযোগ হয়।

ভাইভার দিন কালো স্যুট, সাদা ফুলহাতা শার্ট, লাল টাই পরে গিয়েছিলাম। ভাইভা বোর্ডে তিনজন ছিলেন। আমাকে ২০ মিনিটে ১৪টির মতো প্রশ্ন

করা হয়েছিল। বেশির ভাগ প্রশ্ন ছিল ইরেজিতে। কয়েকটি প্রশ্ন বাংলায় থাকলেও আমি ইংরেজিতে উত্তর দিই। প্রশ্নগুলো বিভিন্ন ইস্যুভিত্তিক ছিল। জানা উত্তরগুলো ঠিকঠাক বলে দিই। আলোচনানির্ভর প্রশ্নের উত্তরগুলোতে নিজের মতামত তুলে ধরি। একপর্যায়ে আমাকে জিজ্ঞেস করা হলো—‘বার্সেলোনা স্বাধীনতা ঘোষণা ও আমাদের স্বাধীনতার মধ্যে কী কী মিল ও অমিল আছে, সেগুলো ব্যাখ্যা করো।’

আরো বলা হয়—‘জনসমক্ষে একুশে ফেব্রুয়ারির গুরুত্ব কিভাবে তুলে ধরবে?’ আমি বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে বুঝিয়ে দিই।

জানতে চাওয়া হয়, বর্তমানে আমি কী করছি। ব্যাংকে কেন কাজ করি। কী পদে আছি। পরিবারের কয়জন সদস্য। অন্য সদস্যরা কী করেন। ভাইভায় গণিত, আইসিটি, মানসিক দক্ষতার ওপর কোনো প্রশ্ন করেনি।

 

আমার কখনো ‘ভাইভা ভীতি’ ছিল না। তবে বিসিএসের ভাইভা দিতে গিয়ে একটু নার্ভাস ছিলাম। লিখিত পরীক্ষা ও ভাইভার জন্য আলাদা প্রস্তুতি নিয়েছি। তবে আশাবাদী ছিলাম ‘বিসিএস হবে’। ৩৭তম বিসিএসের ফল প্রকাশের পর দেখলাম ‘প্রশাসন ক্যাডার’ পেয়েছি। গেজেট প্রকাশ হলে আমি মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট  হিসেবে যোগদান করি।

 

নতুনদের উদ্দেশে বলব, ফরমাল পোশাকে ভাইভা বোর্ডে যাওয়াই ভালো। স্যুট পরতে পারলে আরো ভালো। ভাইভা বোর্ডে যেকোনো রকমের পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া লাগতে পারে।

কোনো পরিস্থিতিতে ঘাবড়ানো যাবে না। ঘাবড়ে না যাওয়াটাও কিন্তু একটা যোগ্যতা। সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে হবে। কথা বলার সময় বডি ল্যাঙ্গুয়েজ যেন ঠিক থাকে। প্রশ্নকর্তারা ইংরেজিতে প্রশ্ন করলে উত্তরও ইংরেজিতে দেওয়ার চেষ্টা করবেন।

https://www.youtube.com/watch?v=Geg0SPadJxM&feature=youtu.be&fbclid=IwAR38C73NHAfJQU4pPFvja5QLhRgotQcX5VbF-TVIm_-qPYYDVLr7UQvjm_I

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!

error: Content is protected !!