‘সুদর্শন চক্র’-এর মতো বনবন করে অসম্ভব জোরে ঘুরছে পাগলাটে একটি ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বর। লাট্টুর মতো তা ঘুরছে নিজের চার পাশেই। এর আগে আর কোনও ব্ল্যাক হোলে লাট্টুর মতো এত জোর ঘূর্ণি (স্পিন) দেখা যায়নি।
অসম্ভব রকমের পাগলাটে এই ব্ল্যাক হোলটির আভাস মিলেছিল নাসার মহাকাশযান চন্দ্র এক্স-রে অবজারভেটরির পাঠানো তথ্যে। পরে তা জোরালো ভাবে সমর্থিত হয়েছে বছর তিনেক আগে ইসরোর পাঠানো উপগ্রহ ‘অ্যাস্ট্রোস্যাট’-এর সিগন্যালেও। এই প্রথম ইসরো ও নাসা হাত মিলিয়ে কোনও ব্ল্যাক হোলের রহস্য উদ্ঘাটন করল।
গবেষকদলের প্রধান মুম্বইয়ের টাটা ইনস্টিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ (টিআইএফআর)-এর অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর সুদীপ ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘এই ব্ল্যাক হোলটি রয়েছে দু’টি তারার একটি নক্ষত্রমণ্ডল বা বাইনারি সিস্টেমে। যেখানে আমাদের সূর্যের মতো রয়েছে দু’টি নক্ষত্র। তারা একে অন্যকে প্রদক্ষিণ করতে করতে উত্তরোত্তর কাছে চলে আসছে। আর ওই ব্ল্যাক হোলটি একটি নক্ষত্রের শরীরের অংশ গোগ্রাসে গিলে ফেলছে।’’
কত জোরে ঘুরছে এই পাগলাটে ব্ল্যাক হোল?
গবেষকরা জানিয়েছেন, যত জোরে ঘোরা সম্ভব (ম্যাক্সিমাম পসিবল রেট) কোনও ব্ল্যাক হোলের, এই পাগলাটে মহাজাগতিক বস্তুটির ঘূর্ণি তার খুব কাছাকাছি। এর আগে যে সব ব্ল্যাক হোলের হদিশ মিলেছে, তাদের কোনওটিকেই এত অসম্ভব জোরে ঘুরতে দেখা যায়নি।
কেন এত জোরে ঘুরছে এই পাগলাটে ব্ল্যাক হোল?
সুদীপ বলেছেন, ‘‘ওই বাইনারি সিস্টেমের যে নক্ষত্রটির আয়ু প্রায় শেষ হয়ে আসছে, তাকে ব্ল্যাক হোলটির গোগ্রাসে গিলে খাওয়ার সময় অভিকর্ষ বলের টান এতটাই জোরালো হচ্ছে, যে ওই মৃত্যুর মুখে দাঁড়ানো তারাটির শরীরের অংশগুলি একটি বিন্দুতে এসে জমা হচ্ছে। তারই জন্য ওই পাগলাটে ব্ল্যাক হোলের এই অসম্ভব জোর ঘূর্ণি।’’
এই আবিষ্কারে আমাদের ‘অ্যাস্ট্রোস্যাট’-এর অবদান কী?
গবেষকরা জানাচ্ছেন, কোনও ব্ল্যাক হোলের ভর আর ঘূর্ণিটাই মাপা হয় তার চরিত্রের খুঁটিনাটি জানতে। কিন্তু কোনও ব্ল্যাক হোলের ঘূর্ণি (স্পিন) মাপাটাই সবচেয়ে কঠিন কাজ। অ্যাস্ট্রোস্যাট সেই কঠিন কাজটাকেই সহজ করেছে।