মতবিরোধ

মতবিরোধ হলেই এ সব করেন আপনি, তাহলে সতর্ক হোন

মতবিরোধ সামলানোর চেয়ে এড়িয়ে চলতেই পছন্দ করেন অনেকে। কারণ তাতে ঝামেলা কম৷ অনেকে আবার, বিশেষ করে যাঁদের ধৈর্য ও যুক্তির ভাঁড়ারে টান আছে, তাঁরা মতবিরোধের আভাসেই ঝগড়া করে ফেলেন বা নিজেকে ব্যাক সিটে নিয়ে গিয়ে যাবতীয় দায়ভার চাপিয়ে দেন অন্য মানুষটির উপর৷

তবে মনোবিদদের মতে, মতবিরোধ সামলাতে গেলে আগে খতিয়ে দেখতে হয় তা তৈরির কারণ। আর কারণের সঙ্গে তা সামাল দিতে গিয়ে কোন কোন পদক্ষেপ করছেন কে, তাও বুঝে নেওয়াটা খুবই জরুরি। আসলে বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের উপর নির্ভর করে তৈরি হয় বিভিন্ন পরিস্থিতি৷

এই পরিস্থিতিকে মেপেই চিকিৎসাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়, কিংবা কেউ যদি নিজে থেকেই চান, মতবিরোধের পরবর্তী সমস্যা মোকাবিলা  করবেন একা, তাঁর ক্ষেত্রেও এই সব পরিস্থিতি মাথায় রেখে এগোতে হয়। কেমন সে সব?

 

  • অশান্তি হবে বলে ব্যাপারটা নিয়ে ভাবা বন্ধ করে দেন কেউ৷ যেন এ রকম কোনও ব্যাপারই ঘটেনি৷
  • অন্যকে দোষারোপ করেন৷
  • দোষারোপ করেন না, কিন্তু এমন ভাব করেন যাতে অন্য জন অপরাধবোধে ভুগতে শুরু করেন৷
  • যাঁর সঙ্গে মতবিরোধ তাঁকে হেয় করেন৷
  • অন্য জনকে জোর করে নিজের মতে চালানোর চেষ্টা করেন৷
  • পরিস্থিতি খারাপ হবে বলে কথা বাড়ান না৷ কিন্তু কষ্ট পান৷
  • মতের অমিল আছে বলেই ভাবেন না৷
  • ধরে নেন ভাল সম্পর্কের অর্থ সবেতেই একমত হওয়া৷ কাজেই বিরোধ হচ্ছে মানে সম্পর্ক ঠিক নেই৷

দোষারোপ-পাল্টা দোষারোপের খেলায় মাতবেন না।

‘‘এই সব ভাবনার কোনওটাই ঠিক নয়৷’’ জানালেন মনোচিকিৎসক জিতুমন্যু মাইতি৷ আসলে এ ভাবে এগোলে ব্যাপারটা ধামাচাপা পড়ে যায়৷ ঠিক সমাধানে পৌঁছনো যায় না৷ আর তাতে টানাপড়েন তৈরি হয় সম্পর্কের মধ্যে৷ কখনও সম্পর্ক ভেঙেও যায়৷ মতবিরোধ সামলানোর কিছু অমোঘ নিদান দিচ্ছেন এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। দেখে নিন সে সব।

  • মতবিরোধ হলে উত্তেজিত না হয়ে শুনুন অন্যজন কী বলছেন৷ তাঁর বক্তব্য ভাল করে বোঝার আগে নিজে মুখ খুলবেন না৷
  • অপছন্দের কথা হলে চেষ্টা করুন রেগে না যেতে৷ খারাপ লাগতে পারে৷ কিন্তু কষ্ট করে হলেও মেনে নিন৷ কারণ আবেগে ভেসে গেলে যুক্তি হারিয়ে যাবে৷
  • কথা বলার আগে একটু সময় দিন নিজেকে৷ এই সময় সব রকম অবুঝপনা ও একগুঁয়েমি ঝেড়ে ফেলে অন্য মানুষটির দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করুন৷ প্ররোচনা থাকা সত্ত্বেও মাথা ঠান্ডা হওয়ার আগে মুখ খুলবেন না৷
  • ভাল করে ভেবে দেখুন আপনি যেভাবে বিষয়টাকে দেখছেন অন্য জন কী কী কারণে সেভাবে দেখতে পারছেন না৷ ভুলটা তাঁর হচ্ছে না আপনার? নাকি দুজনেই নিজের নিজের জায়গায় ঠিক?
  • সিদ্ধান্তে পৌঁছতে তাড়াহুড়ো করবেন না৷ যত ক্ষণ না ব্যাপারটাকে নিরপেক্ষ ভাবে ভেবে উঠতে পারবেন, সময় নিন৷
  • নির্দিষ্ট সময় এবং জায়গা ঠিক করে তাঁর সঙ্গে দেখা করে বলুন আপনি কী ভাবছেন এবং কী চাইছেন৷

 

রাগ বা অভিমান দিয়ে নয়, পরিস্থিতি সামলান বুদ্ধি খরচ করে।

  • তাঁর মাথা তখনও ঠান্ডা না হতে পারে৷ সে ক্ষেত্রে আপনিও মাথা গরম করলে ঝগড়া লাগার প্রবল সম্ভাবনা৷ কাজেই আগে থেকে ঠিক করে রাখুন, যাই হোক না কেন প্ররোচনায় পা দেবেন না৷
  • তাঁর বক্তব্য বোঝার চেষ্টা করুন৷ সব শুনে–বুঝে নিজের বক্তব্য বলুন৷ কোন রাস্তায় সমাধান হবে তা দু’জনের কাছেই স্পষ্ট হওয়া দরকার৷
  • আপনার তরফে ভুল হলে সেটুকুর জন্য ক্ষমা চেয়ে নিন৷ ক্ষমা চাইলে মানুষ ছোট হয়ে যায় এ রকম ভাবনা যদি থাকে, আপনার কিন্তু কাউন্সেলিং দরকার৷ তাঁর ভুলে সমস্যা হলে খোলা মনে মেনে নেওয়ার চেষ্টা করুন৷ তাঁকে অপরাধী করবেন না৷
  • দু’জন যুক্তিশীল মানুষের মধ্যে কোনও বিষয়ে মতবিরোধ হলে প্রায় সময়ই সেখান থেকে তৃতীয় একটা মত বেরিয়ে আসে৷ সেটা এক বড় পাওয়া৷ কাজেই এই ধরনের মতবিরোধকে স্বাগত জানান৷

https://www.youtube.com/watch?v=AoO_iZhlnGs&fbclid=IwAR0wo4oHDFt2Ftq6eDNB3U81AIR3a58Ng05TKNch3_n37ggZhoGPSWjYBaY