class="post-template-default single single-post postid-1177 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

যে কারণে ঈদের আগে ছাড়া পেলেন না খালেদা জিয়া

খালেদা জিয়া
খালেদা জিয়া

নিজের আইনজীবীদের ভুল ও অবহেলার কারণেই ঈদুল ফিতরের আগে কারাগার থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। যেসব মামলায় এখন খালেদা জিয়ার জামিন নেওয়ার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে, সেসব মামলার আগের ঘটনাবলি থেকেই বেরিয়ে আসছে আইনজীবীদের এই ভুল আর অবহেলার চিত্র। যদিও নিজেদের ভুল বা অবহেলার কথা স্বীকার করতে রাজি নন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। তাঁরা বলছেন, সরকার রাজনৈতিক কারণে উদ্দেশ্যমূলকভাবে খালেদা জিয়ার কারামুক্তি বিলম্বিত করছে। তবে সরকারপক্ষের আইনজীবীদের দাবি, এ ক্ষেত্রে সরকারের কোনো হাত নেই। নিজের আইনজীবীদের ভুলেই খালেদা জিয়া এখন কারাগারে। একাধিক মন্ত্রীও বিভিন্ন সময়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের ভুলের কথা বলেছেন।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের সাজা হলেও হাইকোর্ট জামিন দেওয়ার পর সেটি বহাল রেখে গত ১৬ মে রায় দেন আপিল বিভাগ। এই রায়ের কপি সোমবার দুপুরে প্রকাশিত হয়েছে। আর কোনো মামলায় গ্রেপ্তার না থাকলে ওই দিনই জামিননামা দাখিল করা হলে খালেদা জিয়ার কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু এখন আর তা হচ্ছে না। কারণ কুমিল্লার দুই মামলায় (হত্যা ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের) হাইকোর্টের দেওয়া জামিন গত ৩১ মে স্থগিত করেন আপিল বিভাগ। হাইকোর্টের জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষকে আগামী ২৪ জুনের মধ্যে নিয়মিত আপিল আবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। ২৪ জুন ওই আবেদনের ওপর শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের ওপর শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত হাইকোর্টের জামিনের ওপর স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে। ফলে এ মুহূর্তে খালেদা জিয়া মুক্তি পাচ্ছেন না।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ বিচার শেষে রায় দেন গত ৮ ফেব্রুয়ারি। ওই দিনই খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেওয়া হয়। ২০ ফেব্রুয়ারি আপিল আবেদন দাখিল করেন খালেদা জিয়া, যা ২২ ফেব্রুয়ারি গ্রহণ করে হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের দেওয়া জরিমানার রায় স্থগিত করেন। এ ছাড়া দুদক সাজা বাড়াতে আপিল করেছে। ওই আবেদন গ্রহণ করে রুল জারি করেছেন আদালত। উভয় আপিল একসঙ্গে শুনানির নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পরে গত ১২ মার্চ হাইকোর্ট খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন দেন। এর বিরুদ্ধে আপিল করে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৪ মার্চ আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত করেন। পরে ১৮ মার্চ জামিন স্থগিত করেন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ। ১৬ মের আগ পর্যন্ত ওই স্থগিতাদেশ ছিল। তবে ১৬ মে আপিল বিভাগ জামিন বহাল রেখে রায় দেন। কিন্তু অন্য মামলায় জামিন নেওয়ার প্রয়োজন পড়ায় খালেদা জিয়া কারাগার থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কুমিল্লার যে দুই মামলায় জামিন স্থগিত করা হয়েছে সেই দুই মামলায় খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগেই জামিন নিতে পারতেন। ২০১৭ সালের ৯ অক্টোবর খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। ঢাকার দুই মামলার মধ্যে একটিতে (১৫ আগস্ট জন্মদিন পালন) গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয় ২০১৬ সালের ১৭ নভেম্বর। আর জাতীয় পতাকা অবমাননার মামলায় গত বছর ১২ অক্টোবর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। এসব মামলায় যখন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয় তখন খালেদা জিয়া মুক্ত ছিলেন। তিনি তখনই এসব মামলায় জামিন নিতে পারতেন, যেমনটি জামিন নিয়েছেন জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলাসহ আরো কয়েকটি মামলায়। খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ৩৬টি মামলা হয়েছে, যার প্রায় সব কটিতেই তিনি জামিনে আছেন। এর ধারাবাহিকতায় কুমিল্লার মামলায় আগে থেকেই জামিনে থাকলে এখন আর তাঁকে কারাগারে থাকতে হতো না। কিন্তু যথাসময়ে ওই সব মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে থেকে জামিন চাইতে হচ্ছে। আর এ সুযোগে নিম্ন আদালতে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে। এ কারণে হাইকোর্টে জামিন চাইতে হচ্ছে খালেদা জিয়াকে। সরকারপক্ষও এর সুযোগ নিয়ে জামিন বাতিলের জন্য আপিল বিভাগে আবেদন করছে।

আইনজ্ঞরা বলছেন, স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় অন্য সব মামলায় আগে থেকে জামিনে থাকলে শুধু জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় জামিন নিলেই কারাগার থেকে মুক্তির পথ খুলত। সে ক্ষেত্রে খালেদা জিয়াকে কারাগারে রাখতে হলে অন্য মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখাতে হতো। এক মামলায় জামিন হওয়ার পর অন্য মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলে দোষটা সরকারের ওপরই পড়ত। এতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতো। বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারকে দোষারোপ করার একটা সুযোগ থাকত। কিন্তু আগে জামিন না নিয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা যে ভুল করেছেন, সে কারণে তাঁর কারামুক্তি বিলম্বিত হচ্ছে।

খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল অবশ্য কালের কণ্ঠকে বলেন, আইনজীবীদের কোনো ভুল নেই, অবহেলাও নেই। আইনজীবীরা সঠিক সময়েই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন করছেন। এরই মধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সুপ্রিম কোর্ট থেকে জামিনও মিলেছে। কিন্তু সরকার রাজনৈতিক কারণে খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটকে রেখেছে। এ ক্ষেত্রে আদালতকে ব্যবহার করে সরকার খালেদা জিয়ার মুক্তিতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাঁরা বলছেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কুমিল্লা বা অন্য যেসব জায়গায় মামলা দেওয়া হয়েছে, তা মিথ্যা। কুমিল্লার মামলা যে সময় দেওয়া হয়েছে সে সময় সরকারের দেওয়া ব্যারিকেডে খালেদা জিয়া গুলশানে নিজ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ ছিলেন। অথচ সেই মামলায় তাঁকে আটকে রাখা হয়েছে। হাইকোর্ট জামিন দিলেও সরকার আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালতে গিয়ে স্থগিতাদেশ নিয়েছে। ফলে খালেদা জিয়া কারাগার থেকে বের হতে পারছেন না।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের বক্তব্যের বিরোধিতা করে বলেন, ‘যেসব মামলায় এখন তাঁকে জামিন চাইতে হচ্ছে সেসব মামলায় তিনি আগেই জামিন চাইতে পারতেন। তিনি তো তখন মুক্ত ছিলেন। এখন কারাগারে থাকায় প্রচলিত নিয়মের বাইরে গিয়ে তাঁর আইনজীবীরা দায়রা জজ আদালতে জামিন না চেয়ে সরাসরি হাইকোর্টে জামিন আবেদন করছেন, যা ঠিক নয়। আইনি প্রথার ব্যত্যয় ঘটিয়ে ভিন্ন পথে আসার কারণেই সরকার এর বিরোধিতা করছে। খালেদা জিয়া বলে নয়, আইনের স্বাভাবিক ধারা ধরে রাখার জন্যই সরকার হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেছে। এভাবে যদি দায়রা জজ আদালতে জামিন না চেয়ে হাইকোর্টে সরাসরি চলে আসে তাহলে তো আর দায়রা জজ আদালত রাখার প্রয়োজন নেই। সবই সরাসরি হাইকোর্টে চলে আসবে, যা খারাপ নজির হয়ে থাকবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!