Monday, December 23
Shadow

রোমান্টিক থ্রিলার গোয়েন্দা উপন্যাস: ছায়া এসে পড়ে পর্ব-৩

রোমান্টিক-থ্রিলার গোয়েন্দা উপন্যাস: ছায়া এসে পড়ে পর্ব-৩

রোমান্টিক থ্রিলার ঘরানার বইটি মধ্যবয়সী পুরুষ তৈয়ব আখন্দকে ঘিরে। জীবন সংসারের প্রতি খানিকটা উন্নাসিক কিন্তু বুদ্ধিমান এ মানুষটা পালিয়ে বেড়াতে চায়। কিন্তু আচমকা টাঙন নদী ঘেঁষা গ্রাম পদ্মলতায় এসে সে আটকা পড়ে চাঁদের আলোয় ঝুলতে থাকা একটা লাশ আর লাবনীর জালে। তৈয়ব নিজেকে বের করে আনার চেষ্টা করে। চলতে থাকে জড়িয়ে পড়া ও ছাড়িয়ে আনার মাঝে এক সমঝোতা।

রোমান্টিক প্রেমের গল্প ও একই সঙ্গে থ্রিলার স্বাদের উপন্যাস ছায়া এসে পড়ে । লেখক ধ্রুব নীল

কুরিয়ারে হার্ড কপি পেতে এই পেইজে অর্ডার করুন

 

ছায়া এসে পড়ে

ছায়া এসে পড়ে

ছায়া এসে পড়ে পর্ব -১  এর লিংক

ছায়া এসে পড়ে পর্ব -২  এর লিংক

 

 

সন্ধ্যা পর্যন্ত কিছুই ভাবলো না তৈয়ব। জ্বর একবার আসে একবার যায়। চোরা জ্বর। ঘাপটি মেরে বসে থাকে।

জ্বর গায়ে গ্রামে টোঁ টোঁ করতে ভালোই লাগছে। মিনু থাকলে বেশ হতো। দুই শ’টা প্রশ্ন করতো এতক্ষণে। তৈয়বও যা মনে আসে জবাব দেয়।

‘বাবা, হাঁসের পাখা আছে। হাঁস পাখির মতো ওড়ে না কেন?’

‘হাঁস মানুষের ভয়ে উড়ে না। হাঁস উড়তে জানলে মানুষ কী করবে শোন। হাঁসের গাড়ি বানাবে। একদল হাঁস উড়বে আর তার পেছনে দড়ি ধরে মানুষও উড়বে। পাখি ছোট, তাই পাখির গাড়ি বানাতে পারে না।’

চাষীকে ধান কাটতে দেখলে মিনু বলবে, ‘বাবা মানুষটা গাছ কেটে ফেলছে কেন?’

‘কারণ, ওগুলো গাছ নয়। এলিয়েন। ওদের অনেকগুলো মুণ্ডু। আমরা এলিয়েনের মুণ্ডু চিবিয়ে খাই।’

‘মুণ্ডু মানে কী?’

‘ডিকশনারির মতে, মুণ্ডু হলো ধনী লোকের মাথা। যেমন তোর নানা। তোর মায়েরও একটা মুুণ্ডু আছে। আমারটা হলো সাধারণ মাথা।’

খিল খিল করে হেসে উঠবে মিনু।

কল্পনায় মেয়ের সঙ্গে আলাপ বেশিক্ষণ চালানো গেলো না। বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে রেবেকারপ্রেমিক ছোকড়াটা।দুজনকে এ পর্যন্ত কয়েকবার একসঙ্গে দেখেছে। আপত্তিকর অবস্থায় অবশ্য দেখেনি। দেখেছে রেস্টুরেন্টে। রেবেকার মতো রাশভারী মেয়ে কেমন গা দুলিয়ে কথা বললো ছেলেটার সঙ্গে। অবাকই হয়েছে তৈয়ব। ছেলের চেহারা দেখেই তৈয়ব বুঝে নিয়েছিলএই ছেলে বায়োকেমিস্ট্রি কিংবা ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বড় ডিগ্রিওয়ালা হবে। রেবেকার চেয়ে কম করে হলেও পাঁচ বছরের ছোট হবে। আজকাল বেশি বয়সের মেয়েদের সঙ্গে ভাব জমানোটা ফ্যাশন হয়ে গেছে। তেমন কিছু হতে পারে।

তৈয়বের মনে সূক্ষ্ম সন্দেহ, ছেলেটা রেবেকাকে পটিয়ে পাটিয়ে বিদেশ নিয়ে যাবে। সঙ্গে মিনুকেও নিয়ে যাবে? কী করতে পারবে তৈয়ব। বোধহয় কিছুই না।

চায়ের দোকান দেখে বসে পড়লো। চা দিয়ে বিস্কিট খাবে। গ্রামে এসেছে অনেক দিন পর। সামান্য আদিখ্যেতা দেখানো যাক। বেঞ্চে এক টিঙটিঙে বুড়ো তার দিকে নিষ্পাপ হাসি দিল। তৈয়ব চিনতে পারলো না। সেগ্রামের অনেককেই ভুলে গেছে। ডায়াবেটিসের সাইড এফেক্ট। গ্রামের লোকজনের এসব রোগ হয় কম। তারা সহজে কাউকে ভোলে না।

‘আমারে চিনো নাই? চাকরি বাকরি করো, মনে থাকার কথা না। এত মনে রাখতে গেলে দেশ দুনিয়া চলবে না।’

‘আমি দেশ দুনিয়া চালাই না চাচা।’

‘কতদিন থাকবা?’

‘যাব না। গ্রামেই থাকবো।’

বুড়ো বিরক্ত হলো। থুথু ফেলল একদলা।

‘গেরামেআকাম কুকাম বেশি।থাকতে পারবা না। লোকমানের ভাইডা গলায় ফাঁস দিয়া দিল। কী কেলেঙ্কারি কও দেহি।’

‘জ্বি দেখেছি। গলায় ফাঁস দেয় নাই। তারে খুন করা হইসে।’

‘কও কিতা।’

হাসলো তৈয়ব।

‘কিডা এ কাম করসে?’

তৈয়ব জবাব দিল না। কৌতুহল যত বাড়বে, তত বিশ্বাসযোগ্য হবে তার বানানো কথা।

‘আরে মিয়া আমারে কও। আমি তোমার চাচা লাগি।’

‘এই কান ওই কানে শোনা কথা। আমি বিশ্বাস করি নাই। ভাইয়ে ভাইয়ে কী জানি হইসে শুনলাম।’

বুড়ো গভীর মনযোগে কী যেন ভাবলো। এরপর মাথা ঝাঁকাল এবং খুনের সঙ্গে জায়গাজমির একটা যোগাযোগ ঘটানোর চেষ্টাও করে ফেলল এর মধ্যে। এরপর আরও অনেককে কথাটা বলবে সে। বলার সময় আরেকটু রঙ মাখাবে। মাখাতে মাখাতে এমন পর্যায়ে যাবে যে লোকমান মিয়া চোখে অন্ধকার দেখবে।

নিজেকে ইবলিশ শয়তানের মতো মনে হলো তৈয়বের। অবশ্য শয়তানকে ঠেকাতে কিছু শয়তানি করার দরকার আছে। তা ছাড়া তৈয়ব নিজেও নিজেকেসদ্য ভূমিষ্টর মতো নিষ্পাপ ভাবে না।

 

সন্ধ্যায় ঠিক করলো বাজারে যাবে। লাবনীর কথা ভাবছে। মেয়েটাকি মৃত্যুভয়েশঙ্কিত? রূপবতী একটা মেয়ে খুন হওয়ার আতঙ্কে ঘুরে বেড়াচ্ছে,ব্যাপারটা অস্বস্তিকর লাগছে তৈয়বের। লাবনীকে পুলিশে ধরিয়ে দেবে? ধরা পড়লেশাস্তি হবে। জেলে থাকা লাগবে অনেক দিন। সহজে জামিনও পাবে না। শাস্তি হতে পারে যাবজ্জীবন। আবার ভাসুর তাকে ধর্ষণ করেছে এটা প্রমাণও করতে পারবে না লাবনী। করলেও লাভ হবে না। তৈয়বের মনের একটা অংশ বলছে, নাহ, মামলা না করে ঠিক কাজ করেছে। এসব কেইস টানাটানি সবাইকে দিয়ে হয় না। সমাধান হলো ডাইরেক্ট খুন।

‘আপনি তৈয়ব আখন্দ?’

মেঘ না চাইতে ঝুম বর্ষা। সামনে পুলিশ। নেমপ্লেটে ডাক নাম শামীম। এসআই শামীম।

‘জি শামীম ভাই, আমি তৈয়ব আখন্দ।’

‘আমার সঙ্গে চলুন।’

‘এখনই? বাড়িতে বাজার দিয়ে আসি?’

‘চলুন, আমিও যাই। বাজার দেবেন। পানি খাবেন, দরকার হলে রান্না করে খাবেন। তারপর একটা সিগারেটও খেতে পারেন। আমি বসে থাকবো। অর্ডার আছে। এরপর জামা কাপড় গোছাবেন, তারপর আমার সঙ্গে মোটরসাইকেলে উঠবেন।’

পরিষ্কার হয়ে গেলো ঘটনা। চিন্তা কেটে গেলেও বিরক্ত ভাবটা গেল না। পুলিশ এসেছে তাকে ঢাকায় নিয়ে যেতে, গ্রেফতার করতে নয়।

মিনু নিশ্চয়ই কান্নাকাটি শুরু করেছিল। রেবেকা এখন মেয়ের কাছে তার ক্ষমতা জাহির করবে। ইশারায় বোঝাবে, দেখলি তো! তোর বাবা পালাতে চেয়েছিল। কান ধরে সুর সুর করে নিয়ে এসেছি।

এরপর কী করবে তৈয়ব? সং সেজে বাড়িতে বসে থাকবে? নাকি আশপাশে একটা রুম ভাড়া করে দেবে রেবেকা?সপ্তাহে সপ্তাহে মেয়ের সঙ্গে দেখা করার পারমিশন পাবে তৈয়ব?ডিভোর্স যে হবে এতে সন্দেহ নেই। রেবেকার সঙ্গে তার মনের তার ছিড়ে গেছে। কখনও জোড়া ছিল না, মনেও পড়ে না তৈয়বের। হয়তো ছিল। তৈয়বেরই ভুল। রেবেকার প্রেমে সাড়া দেওয়াটা মোটেও উচিৎ কাজ হয়নি। সে এখন তার ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আরেকটা ছেলের সঙ্গে ঘুরে-বেড়াচ্ছে। ছেলেটার চোখের দৃষ্টিও সুবিধার মনে হয়নি তৈয়বের কাছে।

এসআই শামীমকে দেখে মনে হচ্ছে ডিউটিতে যাওয়ার আগে কেউ তার মাথায় সরিষার তেল ঢেলে চুল আঁচড়ে দিয়েছে। সুবোধ বালক। হয়তো সে এমনই। পুলিশ সুবোধ বালক হবে না এমন তো কথা নেই।

তৈয়ব বলল, ‘চলুন, হাতে যেহেতু অনেক সময়, আরেক কাপ চা খাই। গ্রামের লাকড়ির চুলার চা অনেক দিন খাই না।’

‘চলুন। আমারও খিদা লাগসে। দুপুরেও খাইনাই। সারাটা দিন মোবাইলে একে ওকে আপনার ছবি দেখাতে হয়েছে। আপনার নিজের গ্রাম। অথচ কেউ আপনারে চিনে না। আজব ঘটনা।’

‘লাবনীকে দেখালে সঙ্গে সঙ্গে চিনে ফেলতো।’

‘উনি কে?’

‘আরে আপনি পুলিশ। আর খবর জানেন না?’

‘ঘটনা কী?’

‘ওই যে, গলায় ফাঁস দিল লোকমানের ভাই। কী যে নাম? মিজান আলী। ওই ঘটনার এক নম্বর সাসপেক্ট লাবনী। সবার ধারণা লাবনী তার ভাসুরকে এক হাতে গাছে তুলে গড়ায় দড়ি পেঁচিয়ে মেরেছে। মেয়েটার সঙ্গে নাকি জিন থাকে।’

‘বলেন কি। লাশ তো মর্গে। সুইসাইড কেইস। সাসপেক্ট আসলো কই থেকে। জিনভূত এখন আছে নাকি। অবশ্য থাকলে থাকতে পারে। আমার বউ নাকি দেখসে একবার।’

দীর্ঘশ্বাস ফেলে আকাশের দিকে তাকালো তৈয়ব। ঝড় আসি আসি করছে। বাতাস ছুটলে চায়ের দোকানের চালা উড়িয়ে নিতে পারে। দৃশ্যটা দেখতে পারলে মন্দ হতো না।

‘এই বৃষ্টি বাদলায় আমাকে নিয়ে আবার কোথায় যাবেন? রাতে হাজতে থাকতে হবে?’

‘ছি!কী যে বলেন। বাড়িতে রাতটা থাকলেন। সকালে আমি আপনাকে গাড়িতে তুলে দেব। টিকিট কাটা আছে। এখন আবার বাস বন্ধ। ওসি সাবের গাড়িটাও গ্যারেজে।’

‘টিকিট কে কাটলো। টাকা দিতে হবে?’

‘ওসি স্যার নিজে দিয়েছেন। উনি বলেছেন আপনার সঙ্গে যেতে। কিন্তু এতদূর আসা-যাওয়া, বুঝেনই তো। বউ আবার একা থাকে।’

‘আমি যদি ঢাকা না যাই? মাঝপথে নেমে আবার পালাই?’

এসআই শামীম বিব্রত হওয়ার মতো হাসলো। তার কি ধারণা তৈয়ব এমন কাজ করবে না? আবার এমনও হতে পারে সে তৈয়বের সঙ্গে না গেলেও দেখা যাবে তৈয়বকে পাহারা দিতে অন্য কাউকে বাসে উঠিয়ে দেবে।

‘নিজেকে আসামি আসামি লাগছে। মনে হচ্ছে অদৃশ্য হাতকড়া পরে আছি। আর কটাদিন গ্রামে থাকলে একটা কেইসের সমাধান করতে পারতাম।’

‘ছি ছি। স্যার। আসামি হবেন কেন? আপনি আজমল সাহেবের মেয়ের জামাই। স্যার কি ম্যাডামের লগে ঝগড়াটগড়া করসেন নাকি? আমার বউয়ের লগে আমার আবার কিছু হয় না। আমি যা কই, সে দেখি সব শোনে। কী যে একটা অবস্থা।’

কথাটা বলার সময় এক ধরনের অসহায়ত্ব ফুটে উঠল এসআই শামীমের চেহারায়। স্ত্রী তার সব কথা শোনে, বিষয়টা তার মোটেও পছন্দ না।

‘আর কেইস টেইস নিয়ে আপনার ভাবনা কী স্যার। আমারে বলেন। আমি ঠিক করে দিচ্ছি।’

‘এক কাজ করেন। ওসিকে বলেন, আমাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আপনি আমার সঙ্গে চলেন।চাচী মুরগি রান্না করেছে। অসম্ভব ঝাল তরকারি। দুপুরে তো খান নাই। বাসায় গিয়ে গরম গরম খিচুড়ি রান্না হবে। ঝড়-বাদলার দিন। তারপর দুজনে গপসপও করবো। দাবা খেলতে পারেন?’

‘এই তো হে হে। টুকটাক আর কি।’

‘চলবে। দাবা খেলা শেষে খাওয়া দাওয়া হবে। তারপর আমরা একটা খুনি ধরতে যাবো।’

‘হা হা হা। ভালো বুদ্ধি। চলেন।’

‘দেশি ঝুঁটিওয়ালা মোরগের তরকারি। চলেন। দেরি করলে তুফানে পড়বো আবার।’

 

বাসায় মুরগি রান্না আছে। তবে শরবানু চাচী নেই। রান্না করেছে লাবনী।শরবানু চাচীর ভাই এসে তাকে বগলদাবা করে নিয়ে গেছে। তিনি নাকি মাঝে মাঝে এ বাড়িতে শোক পালন করতে পালিয়ে আসেন। তৈয়বের মনে হলো, সেও তার চাচীর মতো এ বাড়িতে এসেছে শোক পালন করতে।

লাবনীকে দেখে চমকে গেলো তৈয়ব।

‘তুমি তো দেখছি রাসসুন্দরী দেবী সেজে বসে আছো।’

‘উনি কে? পুরান আমলের নায়িকা?’

‘উনি লেখক। ভারতবর্ষের প্রথম মহিলা যিনি নিজের জীবনকাহিনি লিখেছেন।’

‘জীবনকাহিনি লিখে কী হবে? মেয়েদের আবার জীবন আছে নাকি।’

তৈয়বের পেছনে উঁকি দিল এসআই শামীম। মুখে সলজ্জ হাসি। ঘাবড়ে গেলেও দ্রুত সামলে নিল লাবনী। মাথা নিচু করে ভেতরে হাঁটা দিল।

 

তৈয়ব আর শামীম দাবা খেলছে। এর মধ্যে দুই দফা চা শেষ। প্রথম দুই মিনিটেই মন্ত্রী হারিয়েছে শামীম। তবে খেলায় উত্তেজনায় আছে। সেটা টিকিয়ে রেখেছে তৈয়ব। ভাবখানা এমন যে মন্ত্রী খেয়েও তার চিন্তা কাটছে না।

পাঁচ মিনিটের মধ্যে নিজের বানানো ফাঁদে পা দিলো তৈয়ব। উত্তেজনায় চকচক করে উঠলো শামীমের চোখ। খপ করে হাতির চালে চেক দিয়ে জিতে গেল হারতে থাকা খেলাটা। তৈয়ব চট করে উঠে গেলো রান্নাঘরের দিকে।

লাবনী খিচুড়ি বসিয়েছে। সে খিচুড়ি রান্না দেখছে। এসআই শামীম একা একা কিছুক্ষণ আত্মতুষ্টিতে ভুগতে থাকুক। সত্যিকারের দাবার চাল যে তৈয়ব দিয়েছে এটা ধরতে দেওয়া যাবে না।

‘তৈয়ব ভাই। খাওয়া শেষে আরেক দান। এইবার আপনিই জিতবেন মনে হইতেসে। আপনের ভিতরে পাওয়ার আছে।’

‘নাহ.. আজকে আর না। আপনি আপনার স্ত্রীর কাছে যান। তুফান আসতেসে। গিয়ে বলবেন, শোনো তোমার সঙ্গে কথা আছে। তারপর তাকে ছাদে নিয়ে যাবেন।’

‘ছাদ তো নাই। টিনের একচালা ঘর।’

‘তা হলে উঠানে নিয়ে যাবেন। ঝড় হলে ঝড়ের মধ্যেই বলবেন।

‘কী বলবো?’

‘বলবেন, তোমাকে আমার আর ভালো লাগে না বউ। ঠিক করেছি আরেকটা প্রেম করবো। তোমার সঙ্গে সংসার করলেও প্রেম করবো আরেকজনের সঙ্গে।’

‘এসব কী বলেন! পাগল হইসি আমি?’

হাসল তৈয়ব। কিছু বললো না। অমৃতের মতো ঝাল মুরগি দিয়ে গোগ্রাসে খেলো শামীম। তৈয়ব চা বানালো। তবে চায়ের জন্য বসলো না শামীম।

‘সকাল কয়টায় আসবেন তাহলে। আমাকে ধরে নিয়ে যেতে?’

‘আবারও শরমিন্দা করলেন ভাই। থাকেন না আর কিসুদিন। আমার বউয়ের হাতের রান্না তো খান নাই। দুইজনে মিলে একটু ঘোরাঘুরিও করলাম।’

‘ঠিক আছে। যান। বউকে কথাটা বইলেন। আর ঘটনা কী ঘটে সেটা আমাকে জানাইবেন। ঠিক আছে?’

‘ঠিক আছে মানে! দুই শ বার ঠিক আছে!’

 

এসআই শামীমের মোটরসাইকেল স্টার্ট দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তৈয়বের হাত চেপে ধরলো লাবনী। খানিকটা সিঁটিয়ে গেলো তৈয়ব।

‘আপনার মতলব কী কন তো? ইচ্ছা কইরা খেলায় হারলেন। বাড়িতে পুলিশ নিয়া আসছেন।’

‘বেচারা দুপুরে না খেয়ে সারাদিন আমাকে খুঁজেছে। আমার নিজেকে বিরাট এক লোক মনে হয়েছে। তাকে একটু আপ্যায়ন করবো না! এবার বলো তোমার মতলব কী। তুমি এখানে কী করো?’

‘লোকমান মিয়া আমার গলা টিপ্পা ধরবে কইসে। আমার কল্লা কাইট্টা সে থানায় নিয়া যাবে। পুলিশে ধরায়া দিবে।এই কাম করলে তার নাকি ফাঁসি হইব না। পাগল মনে কইরা তারে নাকি যাবজ্জীবন দিবে।’

‘সে তো দেখি আইন-কানুন সব গিলে বসে আছে। হঠাৎ এত খেপলো কেন?’

‘আমি নাকি সবাইরে কইয়া বেড়াইতেসি, সে তার ভাইরেখুন করাইসে।’

তৈয়বের মাথায় দাবার নতুন চাল শুরু হলো। প্রথম চাল কাজে লেগেছে।

‘তুমি এখানেই থাকবে?’

‘যামু কই। রাইতে তো আর জঙ্গলে ঘাপটি দিয়া থাকন যাইব না। চিন্তা কইরেন না। রুম দুইটা আছে। আমি দরজা ভেজাইয়া থাকমু একটায়। আপনের মশারি টাঙাইয়া দিয়া যাই?’

‘আমার মনে হয় দেরি করা ঠিক হবে না। তোমার স্বামীরএকটা বিহিত করা লাগবে। তুমি চলো আমার সঙ্গে। দুইজনে মিলে তারে খুন করে ফেলি। তারপর ওই লোকের মতো সেও ঝুলতে থাকুক অশথের ডালে।’

‘অশথ আবার কোনটা? ওইটা তো পিপল গাছ।’

‘একই কথা। যাহা অশ্বথ তাহাই পিপল।’

‘এখন তো তুফান আসতাসে। যামু কেমনে?’

লাবনী ভয় পাচ্ছে কিনা বোঝার চেষ্টা করছে। অবশ্য মিথ্যে বলেনি। জানালার কপাট বাড়ি খেতে শুরু করেছে। এমন সময় গেলো বিদ্যুৎ। রাতে আর আসবে বলে মনে হলো না।

এমন ঘনঘোর বরষায় রবীন্দ্রনাথ থাকলে দুচারটা গান লিখতেন। নজরুল বলতেন, বাতায়ন আটকে দিও।

তৈয়ব কবি না। সে এখন রাসসুন্দরীর প্রেমে মজে আছে। বজ্রপাত হচ্ছে ঘন ঘন। দুজন নিঃশ্বাস দূরত্বে আসার পর মনে হলো খুন করার জন্য হাতে এখনও পুরো রাত পড়ে আছে।

 

ছায়া এসে পড়ে পর্ব -৪  এর লিংক

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!