class="post-template-default single single-post postid-17450 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

শিশুদের রুটিন স্ক্রিনিং : পিজির ডাক্তার মোহাম্মদ সহিদুল্লা

শিশুদের

রোগ না হলেও আগেভাগে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে শিশুদের সম্ভাব্য রোগ শনাক্ত করে ব্যবস্থাপত্র দেওয়া যায়। শিশুদেরও রয়েছে এ রকম কিছু স্ক্রিনিং। কিছু পরীক্ষা রয়েছে, যা সন্তান মায়ের পেটে থাকা অবস্থায় মাকে করাতে হয়। আবার কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা রয়েছে, যা জন্মের পর করাতে হয়।

 

গর্ভাবস্থায় কিছু পরীক্ষা

অ্যানোম্যালি স্ক্যান : গর্ভস্থ সন্তানের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বড় ধরনের ত্রুটি রয়েছে কি না তা শনাক্ত করা যায় অ্যানোম্যালি স্ক্যানের মাধ্যমে। একে মধ্য-গর্ভ অবস্থার স্ক্যানও বলা হয়। এর মাধ্যমে মাকে এবং গর্ভস্থ শিশুকে পরীক্ষা করা যায়। সাধারণ আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যান থেকে আরো উন্নত ও স্পষ্ট প্রতিচ্ছবি তৈরি করার পদ্ধতি অ্যানোম্যালি স্ক্যান। এতে চিকিৎসকরা শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি, গর্ভফুলের (প্ল্যাসেন্টা) গতিবিধির ওপর নজর রাখেন। পরীক্ষাটি করার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় গর্ভাবস্থার ১৬ থেকে ২০ সপ্তাহ। তাই সব গর্ভবতী মায়ের উচিত এই সময়ের মধ্যে পরীক্ষাটি করা। শিশুদের

 

আরো কিছু টেস্ট : গর্ভবতী মায়ের রক্তের সুগার পরীক্ষা করা উচিত। রক্তের সিবিসি করে মায়ের হিমোগ্লোবিন দেখা দরকার। সিবিসিতে রক্তের মাত্রা কম থাকলে পরবর্তী সময় সন্তানের সমস্যা হতে পারে। এইচবিএসএজি করে হেপাটাইটিস পজিটিভ হলে সতর্ক হয়ে চিকিৎসা নিলে শিশুর মধ্যে হেপাটাইটিস সংক্রমণেরও আশঙ্কা থাকে না। যৌন সংক্রামক রোগ আছে কি না তা জানতে ভিডিআরএল পরীক্ষাটিও করা হয়।

 

হিমোগ্লোবিনোপ্যাথিস : আগের শিশু থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হলে হিমোগ্লোবিনোপ্যাথিস পরীক্ষাটি করে জানা দরকার, অনাগত শিশুও থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে কি না। এটা গর্ভের আট থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে করতে হয়। এই পরীক্ষায় যদি দেখা যায় থ্যালাসেমিয়া নেই, তবে শিশুর জন্ম নিতে কোনো অসুবিধা নেই, এমনকি থ্যালাসেমিয়া মাইনর হলেও সমস্যা নেই। কিন্তু থ্যালাসেমিয়া মেজর হলে তখন পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত, আদৌ থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশু নেবেন কি না।

 

জন্মের পর পরীক্ষা

নিউ বর্ন স্ক্রিনিং : জন্মের পর নবজাতককে আপাতত সুস্থ মনে হলেও তাদের দেহে নানা রোগ থাকতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলে ‘ইনবর্ন এরর অব মেটাবলিজম’। অথচ নবজাতকের এসব রোগের অনেকগুলোই নিরাময়যোগ্য। আগেভাগে জেনে সঠিক চিকিৎসা দিলে সুস্থ করে তোলা যায়। এ জন্য জন্মের পরপরই নিউ বর্ন স্ক্রিনিং (এনবিএস) বা নবজাতকের স্ক্রিনিং জরুরি। এটা গুরুত্বপূর্ণ রুটিন চেক আপের মধ্যে পড়ে, যা বিশ্বের ৯৫ থেকে ৯৮ শতাংশ দেশেই রয়েছে। বাংলাদেশে সেভাবে করানো না হলেও অনেক স্থানে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে এরই মধ্যে এটা শুরু হয়েছে।

 

জন্মগত হাইপোথাইরয়েডিজম : শিশুর মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতার অন্যতম কারণ জন্মগত হাইপোথাইরয়েডিজম। তবে এটি প্রতিকারযোগ্য, যদি আগেভাগে জেনে চিকিৎসা দেওয়া যায়। জন্মের সাত থেকে ১০ দিনের মধ্যে নবজাতকের গোড়ালি থেকে দুই ফোঁটা রক্ত নিয়ে FT4 এবং TSH পরীক্ষা করে এই রোগ নির্ণয় করা হয়। রিপোর্ট ভালো হলে সমস্যা নেই; কিন্তু খারাপ কিছু পেলে আগেভাগে চিকিৎসায় সারিয়ে তোলা যায়।

 

সিবিসি : এক বছর বয়সেই শিশুর মধ্যে যদি ফ্যাকাসে ভাব দেখা যায়, তবে কম্প্লিট ব্লাড কাউন্ট বা সিবিসি পরীক্ষা করে রক্তের মাত্রা দেখা উচিত। পরীক্ষায় হিমোগ্লোবিনের মাত্রা সঠিক থাকলে ভালো, নচেৎ খাদ্যের মাধ্যমে বা কখনো কখনো আয়রন বা ফলিক এসিড সাপ্লিমেন্ট দিয়ে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ানোর চিকিৎসা দেওয়া হয়।

 

চক্ষু পরীক্ষা : শিশুদের চোখে সমস্যা দেখা দিলে চক্ষু পরীক্ষা করে চিকিৎসা করা হয়। কিন্তু চোখ ভালো রাখতে শিশুর বয়স তিন বছর হলেই চোখের স্ক্রিনিং বা চোখের রুটিন পরীক্ষা করা উচিত। দৃষ্টিজনিত সমস্যা থাকলে ছয় মাস অন্তর চোখের পরীক্ষা করা দরকার।

 

কানের পরীক্ষা : শিশু ঠিকমতো শুনতে পায় কি না বা তার ভেতর কোনো বধিরতা রয়েছে কি না এটা জানতে ইএনটি বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হয়ে কিছু পরীক্ষা করা দরকার।

 

হার্টের পরীক্ষা : অনেক সময় শিশুর হার্টে জন্মগত ত্রুটি (এএসডি বা ভিএসডি) থাকে। কিন্তু লক্ষণ দেখে এসব সমস্যা পরিষ্কার বোঝা যায় না। সে জন্য শিশুর হার্টের সমস্যা জানতে ইকোকার্ডিওগ্রাম (ইকো) করা যেতে পারে।

লেখক : চেয়ারম্যান, নবজাতক বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!