Monday, December 23
Shadow

প্রতিদিন তারা ৫-৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ছুটে যাচ্ছে স্কুলে

দাঁড়ায়

প্রতিদিন তারা ৫-৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ছুটে যাচ্ছে স্কুলে

চৈত্রের খাঁ খাঁ রোদ, ঝড়-বৃষ্টি কিংবা তীব্র শীত কোনো কিছুই থামিয়ে রাখতে পারেনি ঠাকুরগাঁওয়ের সাইকেল বালিকাদের অগ্রযাত্রা। শিক্ষার আলো পেতে প্রতিদিন তারা ৫-৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ছুটে যাচ্ছে স্কুলে ।

ঠাকুরগাঁও প্রত্যান্ত অঞ্চলের মেয়েরা অনেকেই বাইসাইকেলে করে স্কুলে যাওয়া আসা করছে নিয়মিত। এরা সবাই সাইকেল বালিকা নামে পরিচিত সবার কাছে। তাদের সাইকেলের বহর যখন চলতে শুরু করে, পথচারীরা সেই দৃশ্য গভীর মনোযোগের সঙ্গে অবলোকন করে। অনেকে এই দৃশ্যের মাঝে ফিরে পান নিজের ছোট বেলাকে।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার প্রতিটি বিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু কিংবা শেষ হলে এমন মনোরম দৃশ্য চোখে পড়ে। বিশেষ করে গিলাবাড়ী, জামালপুর, ভাউলার হাট, সালন্দর, আকঁচা, খোচাবাড়ি, চিলারং, আউলিয়াপুর ইউনিয়ন থেকেও বাইসাইকেলে স্কুল-কলেজে আসে মেয়েরা।

তবে এসব কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পেছনের কাহিনী সুখকর নয়। শুধু শিক্ষার আলো পেতে প্রতিদিন এত দূরের পথ পাড়ি দিচ্ছে তারা। ওরা কেউই ধনী পরিবারের সন্তান নয়। তাদের বাবা-মার কেউ শ্রমিক, কেউ দিনমজুর। আবার কারও অভিভাবক স্থানীয় সঞ্চয় সমিতি থেকে কিস্তিতে টাকা নিয়ে মেয়েদের পড়াশোনার জন্য বাইসাইকেল কিনে দিয়েছেন।

সদর উপজেলার গিলাবাড়ী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী আশরাফি ফাইমদা জানায়, পড়াশোনার অনেক খরচ। তবু তাদের পড়াশোনা করে অনেক বড় হতে হবে। তাদের এলাকা থেকে স্কুলে আসতে গাড়ি কিংবা রিকশা পাওয়া যায় না। পেলেও আসতে যেতে প্রতিদিন ৪০-৫০ টাকা ভাড়া দিতে হয়। তাই বাইসাকেল কিনে দিয়েছেন তার বাবা-মা।

একই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী সামিয়া আক্তার বলে, বিদ্যালয়ে আসতে যেতে প্রথম প্রথম বখাটে ছেলেদের উৎপাতসহ ছোট খাটো অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটতো। বিশেষ করে কাঁচা রাস্তা থাকায় বর্ষা মৌসুমে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটে। তবে এখন সবই সয়ে গেছে।

নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী উর্মী কুন্ডু বলে, আগে সাইকেল চালালে গ্রামের মানুষ বিভিন্ন কথা বলতো। এখন আর কেউ কিছু বলে না। কম সময়ে বিদ্যালয়ে যাওয়া আসা করতে পারায় বাকি সময়টা পড়ার টেবিলে দিতে পারি।

সদর উপজেলার গিলাবাড়ী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান-ই-হাবিব বলেন, গ্রামঞ্চলের মেয়ের আর পিছিয়ে নেই। তারাও এখন শিক্ষায় এগিয়ে গেছে। তারা সাইকেল চালিয়ে বিদ্যালয়ে আসে। নানা রকম সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ করছে। স্কুল শেষে পবিরারের বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করছে।

তিনি বলেন, মেয়েরা সাইকেল চালিয়ে বিদ্যালয়ে আসা শুরুর প্রথম দিকে রাস্তায় বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিত, মানুষ হাসাহাসি করত। এখন আর কোন সমস্যা হয় না। মেয়েরা যখন দলবদ্ধ হয়ে আসা-যাওয়া করে, তখন পথচারীরা রাস্তা ছেড়ে দাঁড়ায়।

ঠাকুরগাঁও সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর লায়লা আরজুমান্দ বানু বলেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে এখন গ্রামাঞ্চলের মেয়েরা অনেক এগিয়ে। তারা বাইসাইকেল চালিয়ে স্কুল কলেজে যাওয়া-আসা করছে। এতে শিক্ষার্থীদের সময় নষ্ট হচ্ছে না। পাশাপাশি বখাটেদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে। তবে বাইসাইকেল চালক শিক্ষার্থীদের বেশি করে পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে, তাদের পুষ্টির অভাব না হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!