class="post-template-default single single-post postid-1379 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

স্পেনকে জিততে দিল না রোনালদোর হ্যাটট্রিক

 

মাঠের মাঝবৃত্তে দাঁড়িয়ে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো চাইলে পেশি ফুলিয়ে, শরীর বাঁকিয়ে গ্লাডিয়েটরের ভঙ্গিমায় হাঁক দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি এখানে সহখেলোয়াড়দের সবার বড় ভাই। সবাইকে বুকে টেনে নিচ্ছেন, নিজে থেকেই গিয়ে আলিঙ্গন করছেন। পিট চাপড়ে দিচ্ছেন। যোগ্য নেতা, লড়াইয়ের অসাধারণ সেনাপতি। তা একটু আগে ছয় গোলের যে লড়াইটা কোনো দলের দিকেই ঝুঁকল না, তা পুরোপুরিই রোনালদোর কারণে। অসাধারণ এক হ্যাটট্রিক করে স্পেনকে একাই জিততে দিলেন না সিআর-৭। এটাও বলা যেতে পারে স্পেনের মুখের গ্রাস কেড়ে নিলেন তিনিই।

মাঝখানে ফুটি ফুটি কিছু সাদা। স্পেনের অ্যাওয়ে জার্সি পরে এসেছে কেউ কেউ। এমনিতেই কিছু সাদা টি-শার্ট পরা নিরপেক্ষ সমর্থক। তা ছাড়া তো সোচির ফিশত্‌ স্টেডিয়াম লাল সমুদ্র। স্পেনের লালের মধ্যে হলুদ রেখা, পর্তুগালের লালের মধ্যে সবুজের ছিটে। লাল সমুদ্র গজরাতে গজরাতে সোচির কৃষ্ণসাগরে উপসাগরে তো নয়, যেন থামল ইবিজা সাগরের নিরপেক্ষ জলসীমায়। যেখানে স্পেন-পর্তুগাল কারওরই অধিকার নেই।
গত ২০১০ বিশ্বকাপে পর্তুগালকেই দ্বিতীয় রাউন্ডে ভিয়ার গোলে হারিয়ে আরও তিন পা এগিয়ে বিশ্বমুকুট পরেছিল স্পেন। এবার আর পর্তুগালকে হারাতে পারল না স্পেন। তবে হারাতে না পারলেও ম্যাচটিতে স্পেনেরই আধিপত্য ছিল। হঠাৎ কোচ নিয়ে ওঠা ঝড়ের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই এভাবে একটা দল সামলে উঠল বা পুনর্বাসিত হলো, এটা কম কথা নয়।
২০১০ বিশ্বকাপটা স্পেন শুরু করেছিল সুইজারল্যান্ডের কাছে হেরে, সেই তুলনায় ইবেরিয়ান প্রতিদ্বন্দ্বী পর্তুগালের সঙ্গে ড্র করা তো ভালো ফল। জিততেই পারত, পারল না অসম্ভব মানসিক শক্তির অধিকারী একজন রোনালদো তাদের নেই বলে।

চার মিনিটেই রোনালদো পেনাল্টি থেকে গোল করে এগিয়ে দেন পর্তুগালকে। ২৪ মিনিটে বুসকেটসের লম্বা পাসে বল পেয়ে সেটি ফিরিয় দেন ডিয়েগো কস্তা। রোনালদো ৪৪ মিনিটে তাঁর দ্বিতীয় গোল করে এগিয়ে নেন দলকে। বিরতির পর আবারও বুসকেটস-কস্তা সমন্বয়ে সমতা ফেরায় স্পেন। এই গোলটির তিন মিনিট পর নাচো অসাধারণ এক গোল করে স্খালন করলেন তাঁর অপরাধ। তখন স্টেডিয়ামে লাল রোহাদের নাচন, কারণ পর্তুগালকে তখন কোনঠাসা করে ফেলেছ ইনিয়েস্তা-বুসকেটস-কোকে-ইসকোদের বল প্লে। ওদের পা থেকে বলই তো কাড়া যায় না, কী করবে আর পর্তুগাল। করল এবং সেটি করলেন রোনালদো। প্রতি আক্রমণে বল পেয়ে ছুটলেন স্পেনের রক্ষণব্যূহে, পিকে তাঁকে আটকাতে গিয়ে ফেলে দিলেন। ফ্রি-কিক, আর সেই ফ্রি-কিককে রংধনু বানিয়ে পাঠিয়ে দিলেন স্পেনের গোলপোস্টে। আগের ভুলের মাশুল দিতে এই গোল বাঁচাতে পারতেন ডি গেয়া, যদি তাঁর বাজপাখির ডানা থাকত।
নাচোর অপরাধ এবং ডি গেয়ার ভুলটা একটু বলা যাক।

নাচো রোনালদোকে পেনাল্টি বক্সে আটকাতে গিয়ে ফাউল করেছিলেন, যে জন্য পেনাল্টি পায় পর্তুগাল। আর ডি গেয়া যে ভুল করেছেন, তা শিশুরাও করবে না। রোনালদোর শট পা দিয়ে ঠেকিয়েও যেন কই মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। বল ফাঁকি দিয়ে চলে যায় জালে। ৪৪ মিনিটের এই গোলেই পর্তুগাল এগিয়ে যায় ২-১ গোলে। স্পেন বিরতির সমতা ফিরিয়ে এগিয়েও গিয়েছিল। জয়ের দুয়ারেও দাঁড়িয়ে গিয়েছিল, কিন্তু ২ মিনিট আগে রোনালদোর ওই ফ্রি-কিক।
রোনালদো, রোনালদো এবং রোনালদো। এই ম্যাচ রিপোর্ট লেখার সময় স্টেডিয়াম সমুদ্রের গর্জন মতো তুলছে। রোনালদো, রোনালদো, রোনালদো। স্পেনের একজন রোনালদো নেই, তাই তারা জিততে পারল না। পর্তুগালের একজন রোনালদো আছে, তাই তারা পরাজয়ের কিনারায় গিয়েও ম্যাচ ড্র করে ফেলল।

আগের তিন বিশ্বকাপ মিলিয়ে তিন গোল করেছেন। এবার প্রথম ম্যাচেই করলেন তিন গোল। সবাই মেসি-নেইমার, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা বা জার্মানি-স্পেন নিয়ে পড়ে থাকবেন না। রোনালদোর কথাও একটু ভাবুন। পর্তুগালের কথাও ভাবুন। রোনালদো বিশ্বের দুই সেরা খেলোয়াড়ের একজন। পর্তুগাল ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন।
কথাটা এই প্রতিবেদকের নয়। কয়েকজন পর্তুগিজ সাংবাদিকের। ম্যাচ শেষে যখন উত্তেজনা একেবারেই যখন সদ্য রান্না করা ভাতের হাঁড়ি থেকে ভাপ ওঠার মতো ধোঁয়া ছড়াচ্ছে তখনকার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!