Wednesday, May 15
Shadow

বৈঠকের আগেই আগুনে পুড়ে ছাই খিলগাঁও বাজার

আগুনে পুড়ে

রাজধানীতে একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা গ্রহণ প্রসঙ্গে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালেই বৈঠকে বসার কথা ছিল খিলগাঁও কাঁচাবাজার মালিক সমিতির। কিন্তু এর আগেই আগুনের লেলিহান শিখায় ছাই হয়ে গেছে বাজারটির অর্ধশতাধিক দোকান। বুধবার দিবাগত রাত সোয়া ৩টার দিকে লাগা আগুন দুই ঘণ্টার চেষ্টায় ভোর ৫টার দিকে নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিসের ১৫টি ইউনিট।

এ ঘটনায় বাজারের কেউ হতাহত না হলেও পথে বসেছেন অর্ধশতাধিক দোকান মালিক। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আগুনে পুড়ে তাদের লাখ লাখ টাকার মালামাল ছাই হয়ে গেছে। পহেলা বৈশাখ ও ঈদ সামনে রেখে দোকানগুলোতে মালামাল তুলেছিলেন তারা। এই ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে। ব্যবসায়ীদের ধারণা, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকেই আগুন লেগে থাকতে পারে। খিলগাঁও বাজারে আগুনের ঘটনায় এক ফায়ারকর্মীসহ দুজন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে তুষার নামে একজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

ফায়ারকর্মী মো. আবু মুসা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। খবর পেয়ে ভোরেই বাজারের সামনে জড়ো হন দোকানিরা। তাদের চোখেমুখে ছিল সর্বস্বান্ত হওয়ার হাহাকার; চোখেমুখে শুধুই হতাশা। কী করবেন, পরিবার নিয়ে কীভাবে বাঁচবেন কিছুই বুঝতে পারছেন না তারা। আবার ঘুরে দাঁড়ানোর পুঁজি কোথায় পাবেন সেই চিন্তাও ভর করেছে। বাজারের সামনে বসে বিলাপ করতে দেখা যায় অনেককে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের কান্না আর আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছিল এলাকাটি। ঢাকা জেলা প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তালিকা করেছে।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসন ছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে এসে আর কেউ দাঁড়ায়নি। পুড়ে যাওয়া একটি দোকানের মালিক ইলিয়াস বলেন, তার কাপড়ের দোকানের আয়েই কোনো রকমে সংসার চলত। বুধবার রাতে বাসায় গিয়ে খাবার খেয়ে মাত্র ঘুমাইছি। তখনই ফোন বেজে ওঠে। খবর পাই বাজারে আগুন লাগছে। সঙ্গে সঙ্গে লাফাইয়া উঠি। দৌড়াইয়া আইসা দেখি আমার দোকানের সব মাল পুড়ে ছাই। আমি এখন কী করব? আমার তো সব শেষ। আগুনে সর্বস্ব হারানো আরেক ব্যবসায়ী মো. মোশতাক আহমেদের দুটি দোকান রয়েছে খিলগাঁও বাজারে। তিনি বলেন, আগুনে আমার একটি দোকান সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। ভেতরের কোনো মালামালই অবশিষ্ট নেই। অন্য দোকানটি থেকে কিছু মালামাল বের করতে পারছি।

খিলগাঁও বাজার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মোকসেদ আলী সরদার বলেন, বাজারে অগ্নিনির্বাপণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা আছে কিনা তা নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে আমাদের সমিতির পক্ষ থেকে মিটিংয়ে বসার কথা ছিল। কিন্তু সেটির আর সুযোগ পেলাম না। সরকার যদি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়ায় তা হলে তারা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন। তা না হলে রাস্তায় নামতে হবে আমাদের। ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) দিলীপ কুমার ঘোষ জানান, রাত সোয়া ৩টার দিকে খিলগাঁও বাজারে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১৫টি ইউনিট দুই ঘণ্টা চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এই বাজারে ছোট ছোট প্রায় ১৩০০ দোকান ছিল। তার মধ্যে আনুমানিক অর্ধশতাধিক দোকান পুড়ে গেছে। আগুনের সূত্রপাত এবং ক্ষতির বিষয়ে তদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে।

ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক দেবাশীষ বর্ধন বলেন, যেখানে আগুন ধরেছে, সেখানে একই সঙ্গে কাপড়, হার্ডওয়্যার, চায়ের দোকান ও কামারপট্টিও রয়েছে। তিনি আরও বলেন, মার্কেটে কোথাও আগুন নেভানোর মতো কোনো ব্যবস্থা নেই। নেই পানির উৎস, ফায়ার এক্সটিংগুইসারও। দোকানে কোটি কোটি টাকার মালামাল তুলে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা, অথচ আগুন থেকে রক্ষার কোনো ব্যবস্থা রাখেননি।

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) মেজর শাকিল নেওয়াজ জানান, চুড়িহাট্টা ও বনানীর আগুন থেকে শিক্ষা নেওয়া হয়েছে। তাই খিলগাঁওয়ের আগুনের সংবাদ পেয়ে ১৫টি ইউনিট একসঙ্গে পাঠানো হয়। ফায়ার সার্ভিসের যত সক্ষমতা রয়েছে তার সবই নিয়ে যাওয়া হয়। গভীর রাতে রাস্তা ফাঁকা থাকায় খুব দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। একসঙ্গে সবগুলো ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছা আর ফ্লাইওভারে উঠে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করা- এই দুই কৌশলের কারণেই প্রাণহানি ছাড়া খিলগাঁওয়ের আগুন দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!

error: Content is protected !!