হাই প্রেসার কী? লক্ষণ! নিয়ন্ত্রণে করণীয়
উচ্চ রক্তচাপ বর্তমান সময়ে সবচেয়ে আলোচিত এক জটিল শারীরিক সমস্যার নাম। এটা কোনো রোগ নয়, রোগের উপসর্গ মাত্র। বর্তমান বিশ্বে এটি মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের অনেক ব্যক্তি এই রোগ বহন করে চলছেন।
হঠাৎ করেই যেকোন মুহুর্তে এটি মানুষকে মৃত্যুর মুখে ফেলতে পারে। তাই এই রোগটি সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যে ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি এই রোগের জটিলতা ও চিকিৎসা সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে অবগত করার উদ্দেশ্যেই প্রতি বছর ১৭ই মে “বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস” হিসেবে পালন করা হয়।
হাই প্রেসার কী:
দেহ ও মনের স্বাভাবিক অবস্থায় রক্তচাপ যদি বয়সের জন্য নির্ধারিত মাত্রার উপরে অবস্থান করতে থাকলে তাকে উচ্চ রক্তচাপ বলে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির বেলায় যখন ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ ৯০মি.মি.পারদ চাপের এবং সিস্টোলিক রক্তচাপ ১৪০মি.মি.পারদ চাপের বেশি হলে উচ্চরক্তচাপ চিহ্নিত করা হয়। বয়স এবং লিঙ্গভেদে রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রার বেশি হলে তাকে উচ্চ রক্তচাপ এবং কম হলে তাকে নিম্ন রক্তচাপ বলে।
তবে হঠাৎ করে সাধারণ নিয়মের অতিরিক্ত রক্তচাপ বাড়লেই তাকে উচ্চরক্তচাপ হিসেবে ধরা যাবে না। রাতে ভালো ও পরিমিত ঘুমের পর যদি ভোরে বিছানায় শোয়া অবস্থায় পরপর তিন দিন রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রার বেশি পাওয়া যায় তখন তাকে উচ্চরক্তচাপ বলা যাবে। কারণ অতিরিক্ত চিন্তা, পরিশ্রম, মানসিক অশান্তিতে বা উত্তেজনার কারণে ক্ষণিকের জন্য সিস্টোলিক রক্তচাপ বাড়তে পারে। কিন্তু ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রার অতিরিক্ত হওয়া মানেই রোগীর উচ্চরক্তচাপ রয়েছে।
হাই প্রেসার যাদের হতে পারে:
সাধারণত ৪০-৪৫ বৎসর বয়সের মহিলাদের চেয়ে পুরুষদের উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বেশি। ৪৫ বৎসরের পরে গিয়ে পুরুষ-মহিলা উভয়েরই এই উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে এই ডায়বেটিস এর ক্ষেত্রে এর সম্ভবনা আরও বেড়ে যায়। এছাড়া পরিবারের অন্য কারো উচ্চ রক্তচাপ থাকলে অন্যদেরও উচ্চ রক্তচাপের ঝুকি বেড়ে যায়।
উচ্চরক্তচাপ চার প্রকারঃ
সিস্টোলিক রক্তচাপঃ-সীমা -১০০-১৪০মিমি পারদ, গড় -১২০মিমি পারদ
ডায়াস্টোলিক রক্তচাপঃ- সীমা-৬০-৯০মিমি পারদ, গড়-৮০মিমি পারদ
পালস রক্তচাপঃ- সীমা-৩০-৪০মিমি পারদ
গড় রক্তচাপঃ- সীমা-৭৮-৯৮মিমি পারদ
লক্ষণ:
যাদের মধ্যে সকালে ঘুম থেকে উঠলে মাথাব্যাথা, চোখে ঝাপসা দেখা, ঘাড় ব্যাথা, রাতে ঠিকমত ঘুমাতে না পারা, সর্বদা মেজাজ খিটখিটে থাকা প্রভৃতি বিষয় পরিলক্ষিত হয় তাদের যথাশীঘ্র চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা শুরু করা দরকার।
উচ্চ রক্তচাপের ক্ষতিকর দিক:
উচ্চ রক্তচাপ জনিত কারণে স্ট্রোক, হাইপারটেনসিভ, এনসেফালোপ্যাথি, প্যারালাইসিস, মস্তিষ্কে জটিলতা, মস্তিষ্কের সাবঅ্যারাকনয়েড স্পেসে রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে।
এছাড়া হৃৎপিন্ড বড় হয়ে যাওয়া, হার্ট অ্যাটাক ও ফেইলিউর, করোনারি হার্ট ডিজিজ প্রভৃতি। এটি চোখেরও বিভিন্ন ক্ষতি করে থাকে। যেমন – হাইপারটেনসিভ, রেটিনোপ্যাথি, দৃষ্টিশক্তির ব্যাঘাত, প্যাপিলিওডিমা।
প্রতিরোধ:
শরীরের ওজন সীমার মধ্যে রাখতে হবে।
হাঁটা,খেলাধূলা বা শারীরিক পরিশ্রমের অভ্যাস করতে হবে।
ধুমপান থেকে বিরত থাকা।
কাঁচা লবণ খাওয়া থেকে বিরত থাকা।
জীবনধারার পরিবর্তনঃ দুশ্চিন্তা পরিহার করা, অতিরিক্ত চিন্তা পরিহার করে সহজ-সরল স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে হবে, সকাল অথবা বিকেলে হালকা ব্যায়াম, হাঁটাহাঁটির অভ্যাস করতে হবে।
চিকিৎসাঃ
এসিই ইনহিবিটরঃ – ক্যাপটোপ্রিল,অ্যানালেপ্রিল, লিসিনোপ্রিল
এনজিওটেন্সিন রিসেপ্টর ব্লকার
আলফা ব্লকারঃ প্রাজোসিন
বিটা ব্লকারঃ প্রোপ্রানোলল, অ্যাটেনোলল
ডাইইউরেটিকসঃ থায়াজাইড্, ফ্রুসেমাইড্, অ্যামিলোরাইড
ক্যালসিয়া চ্যানেল ব্লকারঃ নিফেডিপিন, অ্যামলোডিপিন, ভেরাপামিল সাধারণত ডাইইউরেটিকস উচ্চ রক্তচাপের প্রাথমিক চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত হয়। তবে যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের ক্ষেত্রে এসিই ইনহবিটর ব্যবহার করা হয়। এজন্য চিকিসকের পরামর্শ ব্যতিত মেডিসিন সেবন করা যাবেনা।
নিয়ন্ত্রণ:
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এলে এবং নিয়মকানুন মেনে চললে যেকোনো মানুষ সাধারণ জীবনযাপন করতে পারে। সর্বশেষ একমাত্র সচেতনতাই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনা যায় এবং প্রতিরোধ করা যায়। তাই সবাই সচেতন হোন এ ব্যাপারে।
https://www.youtube.com/watch?v=Geg0SPadJxM&feature=youtu.be&fbclid=IwAR3_ZoKFZ4nJ9APbqnxu6Xmmi0zhbFLukoYvgP0jgcDql8UVgbhJ4-Gxi3k