Saturday, April 27
Shadow

হার্টের অসুখে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা

হার্টের অসুখে

সংজ্ঞা ( Definition ) : ইহার অপর নাম নিউর্যালজিয়া অফ হার্ট । হঠাৎ হৃদপিণ্ড স্থানে অসহ্য ব্যথা এবং এই বেদনা ডানদিকের স্কন্ধ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে হাত পর্যন্ত নেমে আসে । প্রচণ্ড বেদনাবোধ, মুরচ্ছা, ঘাম, পা-হাত শীতল হয়ে আসে ।

কারণ ( Causation ) :

★ রক্তে ধাতব পদার্থের অভাব ।
★ রক্ত সঞ্চালনে ব্যাঘাত হেতু হৃদপেশীর পোষণাভাবে ফ্লেনিক ও নিউমোগ্যাস্ট্রি
ক স্নায়ুর ভাসোমোটর শাখার বিকৃত অবস্থা হয়ে থাকে ।
★ মানসিক উদ্বেগ, ভয়, পরিশ্রম ইত্যাদি হঠাৎ হৃদযন্ত্রের আক্ষেপিক বেদনার সৃষ্টি ।
★ হৃদপিণ্ডের বিবৃদ্ধি বা ধমনী কপাটের বিকৃত অবস্থার জন্য হতে পারে ।
★ মদ্যপান, ধূমপান, অনিয়মিত আহার, শরীরের উপর আত্যাচার, কোষ্ঠকাঠিন্য ।

হার্টের অসুখে লক্ষণ ( Signs and Symptoms ) :

★ শূলবিদ্ধ বেদনা, কষে ধরার মত বেদনা । বেদনা ধীরে ধীরে বুক হতে স্কন্ধ ও হাত পর্যন্ত প্রসারিত ।
★ বেদনা হঠাৎ আরম্ভ হয় এবং অস্থির হয়ে পড়ে ।
★ বেদনা দীর্ঘস্থায়ী হয় না, হঠাৎ আসে আবার ধীরে ধীরে চলে যায় । সাধারণত কাজের সময় হঠাৎ আসে আবার ধীরে ধীরে চলে যায় ।
★ সাধারণত কাজের সময় হঠাৎ বেদনা শুরু হয় । বুকের বাঁ দিকে বেদনা শুরু । সুস্থ শরীরে বিশ্রামের সময় সাধারণত দেখা যায় না ।
★ ব্যথা শুরু হলে রোগী নিশ্চল হয়ে দাড়িয়ে, বসে বাঁ শুয়ে পড়ে । নড়াচড়া করতে পারে না ।
★ কোন কোন সময় মাথা ব্যথা, বমিভাব, বেদনায় ছটফট করা, ঘনঘন প্রশ্বাস নেয়া, মনে হয় এখনি দম বন্ধ হয়ে যাবে ।
★ কোন কোন ক্ষেত্রে করোনারী আটারী আক্রান্ত হয়ে নানা রূপ জটিলতার সৃষ্টি করে ।
★ সাধারণত বেদনা ২/৩ মিনিট কখনও বা অধিকক্ষণ স্থায়ী হয় । নড়াচড়া করলে বেদনার বৃদ্ধি ।
জটিল উপসর্গ ( Complication ) :-
★ হৃদযন্ত্রের স্বাভাবিক অস্বাভাবিক রূপ লাভ করে উৎকৃষ্ট উপসর্গের সৃষ্টি হয় ।
★ করোনারী আর্টারী আক্রান্ত হয়ে স্ট্রোক হতে পারে ।
★ করোনারী থ্রাম্বোসিস হতে পারে ।
★ অনেক সময় হৃদযন্ত্রের কাজ বন্ধ হয়ে হার্টফেল করে ।

রোগ নির্ণয় ( Investigation ) :

নিন্মলিখিত পরীক্ষাগুলো প্রয়োজন হতে পারে ।
★ Haemogram,
Sugar
, Urea,
Cholesterol
, ECG,
Chest ( PA )

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ( Homoeopathic treatment ) :

নিন্মলিখিত ঔষধসমূহের মধ্য হইতে লক্ষণ সাদৃশ্যে ঔষধ নির্বাচন করে চিকিৎসা প্রদান করিলে অল্প সময়ে রোগী আরোগ্য হবে, তবে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঔষধ সেবন নিষেধ ।

একোনাইট ( Aconite Nap ) – হৃৎপিণ্ডের দ্রুত স্পন্দন, বাম স্কন্ধমুলে বেদনা । বুকে সূচীভেদ্য বেদনা । বুক ধড়ফড় করে । অবস্ননভাব, হাতের আঙ্গুলে ঝি ঝি ধরে । নাড়ী পূর্ণ, কঠিন শক্ত, লস্ফনশীল । বসলে সংঘস্থান ও গলাদেশের ধমনীর স্পন্ধন অনুভূত । ( 1x এক আউন্স Distilled water –এ ৮/১০ ফোঁটা ঔষধ মিশ্রিত করে শক্তি পরিবর্তিত নিয়মে এক চামচ করে দিনে ৫/৬ বার সেব্য ) ।

এমিল নাইট্রোসাম ( Amyl Nitrosum ) –

ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধমনী ও কৈশিক নাড়ীসমূহ প্রসারিত । মুখমণ্ডল লাল, মাথা গরম, মাথার মধ্যে দপদপ করে । ধমনীগুলোতে রক্তাধিক্য, বুক ধড়ফড় করে । মৃগী রোগের লক্ষণ, হৃদযন্ত্রের অস্বাভাবিক স্পন্দন । ( 3/6 একমাত্রা করে দিনে ৩ বার সেব্য ) ।

ক্যাকটাস গ্র্যান্ডি ( Cactus Grandi ) –

বৃত্তাকার কৈশিক তন্তু সমূহের উপর ক্রিয়া । হৃদপিণ্ড ও ধমনীর উপর অধিক ক্রিয়া । হৃদপিণ্ড সজোরে চেপে ধরার ন্যায় বোধ । হৃদপিণ্ডে সংকোচন, ধমনীর প্রসারণ, নিন্মরক্তচাপ । ( Q , Distilled water –এ ঔষধ মিশ্রণ করে পরিবর্তিত নিয়মে এক চামচ করে দিনে ৪/৫ বার সেব্য ) ।

ক্র্যাটিগাস ( Crataegus Oxyacantha ) –

মাথা ধরা, নাড়ীর গতি কমে যাওয়া, রক্তচাপ কম । নিদ্রাহীনতা, রক্তস্বল্পতা, শোথভাব, শীত ভাব । ধমনীগুলো প্রসারিত, হৃদপিণ্ডের মেদাপকর্ষ । হৃদশূল, শীত শীত ভাব, হাত পায়ের আঙ্গুল নীলবর্ণ । ( Q , Distilled water –এ ঔষধ মিশ্রণ করে পরিবর্তিত নিয়মে এক চামচ করে দিনে ৩/৪ বার সেব্য ) ।
অন্যান্য প্রয়োজনীয় ঔষধ ( Other important medicines ) :-

★ আর্সেনিক এ্যালবাম 3/6
★ আর্সেনিক আয়োডেটাম 3x চূর্
★ অরাম মেট 3x
★ ব্রায়োনিয়া 3/6
★ হাইড্রোসায়ানিক এসিড 6
★ ল্যাকেসিস 6/30
★ স্পাইজেলিয়া 6/30 ইত্যাদি ঔষধ সমূহ ।

বায়োকেমিক ঔষধ ঃ

ম্যাগ্নেসিয়া ফস 6x :- হৃদশূলজনিত বুকে আক্ষেপিক বা স্নায়বিক বেদনা । ফলস এঞ্জিনার জন্য খুব ভাল ঔষধ । চারটি করে বড়ি গরম জলের সহিত দিনে তিনবার সেব্য ।
ফেরাম ফস 6x, 12x :- রক্তিম মুখমণ্ডল, জ্বালাপোড়াযুক্ত উত্তাপ, মস্তকে রক্ত সঞ্চালন । ২/৩ বড়ি সামান্য গরম জল সহ দিনে চারবার সেব্য ।
★★ পথ্য ও আনুসাঙ্গিক ব্যবস্থা ( Diet and management ) :-

লঘু অথচ পুষ্টিকর খাদ্য । ডিম, মাছ, মাংস, ফলের রস । ডিম এবং দুধ হজম করতে পারলে দিবেন নতুবা নয় । গুরুপাক দ্রব্য যদি না দেওয়া যায় তবে ভাল । উগ্রমস্ললাযুক্ত খাদ্য, রাত জাগরণ, খারাপ নেশা বর্জন করতে হবে । প্রত্যহ সকাল বিকাল উম্মুক্ত বাতাসে হালকা ভাবে ভ্রমণ । হৃদযন্ত্রের উপর ফ্লানেল দিয়ে গরম সেক । পূর্ণ বিশ্রাম । রোগ আক্রমণের সময় হাঁটু পর্যন্ত গরম জলে ডুবিয়ে ১০/১৫ মিনিট রেখে ভাল করে মুছে মর্দন করে দিলে উপকার । হাত পায়ে গরম সেক এবং এমিল নাইট্রেটের ঘ্রান নেয়া । সময়মত স্নানাহার, ঘুম, বিশ্রাম, সাধারণ স্বাস্থ্য নিয়ম পালন ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!

error: Content is protected !!