হাসপাতালের জরুরী বিভাগে যে সমস্ত রোগী আসেন তাদের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ রোগী আসেন বুকে ব্যথা নিয়ে। বুকে ব্যথা হলেই আমরা সাধারনত মনে করি হার্ট অ্যাটাক বা হার্টের অসুখে ভোগছি। হার্টের অসুখে বা হার্ট অ্যাটাকের প্রধান লক্ষণ হলো বুকে ব্যথা – ইহা আমাদের সবারই মোটামুটি জানা। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে যে সকল বুকের ব্যথার কারনই হার্টের অসুখ নয়। আমেরিকান এক জরিপে দেখা গেছে, প্রতিবছর ৫ মিলিয়ন মানুষ চিকিৎসক এর শরণাপন্ন হন শুধুমাত্র বুকের ব্যথা নিয়ে। বুকে ব্যথা নানা কারনে হতে পারে, তাই বুকে ব্যথা হলেই সবসময় খুব আতংকগ্রস্ত হওয়া যাবে না ।
হার্ট অ্যাটাকের ব্যথা কিভাবে বুঝবেনঃ হার্ট অ্যাটাকের ব্যথা, তা সাধারণত বুকের বাম পাশ বা মধ্যখান থেকে শুরু হয়ে ক্রমশই বাম হাত, গলা বা চোয়ালে ছড়িয়ে পরে। ব্যথার ধরনটিও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অত্যন্ত তীব্র, চাপ দিয়ে ধরে রাখা বা বুকটা দুমড়েমুচড়ে যাওয়ার মতো। ব্যথার সাথে খুব শ্বাসকষ্ট এবং প্রচুর ঘাম হবে। বমি ভাব বা বমি, মাথা ঝিমঝিম করা, হূৎস্পন্দনে বা নাড়ির গতিতে অস্বাভাবিকতা ইত্যাদি ও লক্ষ্য করা যায়।সব রোগীদের সবগুলো লক্ষণ একই সাথে থাকে না। এই ধরনের যেকোন লক্ষনের ব্যাপারে সবসময় সতর্ক থাকতে হবে এবং এই রকম কোন উপসর্গ দেখা দিলে সাথে সাথে নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে। কিছু মানুষের উপরোক্ত কোনরূপ লক্ষণই প্রকাশ পায় না এবং নীরবে মারা যান যাকে মেডিকেল সাইন্সের ভাষায় নীরব হার্ট অ্যাটাক বা সাইলেন্ট মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন বলে। ইহা সাধারণত অতি বৃদ্ধদের হয়ে থাকে।
কারা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিতে আছেনঃ আমাদের মধ্যে যাদের পরিবারে হার্ট অ্যাটাকের ইতিহাস, যাদের উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও রক্তে উচ্চমাত্রার চর্বি আছে, ওজনাধিক্য, ধূমপান করার অভ্যাস রয়েছে তাদের এই রোগে আক্রান্ত হবার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে ।
কীভাবে প্রতিরোধ করবেনঃ নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস, বাড়িঘরের দৈনন্দিন কাজ নিজ হাতে করা, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, ভাজাপোড়া, রান্নায় তুলনামূলক কম তেলযুক্ত খাবার, কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার কম খাওয়া, স্যাচুরেটেড তেল, আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি খাওয়া, ট্রান্সফ্যাটে তৈরি খাবার না খাওয়া। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহন করলে হার্ট অ্যাটাক থেকে নিজেকে দূরে রাখা সম্ভব।
হার্টের সমস্যা ছাড়া আর কি কি কারনে বুকে ব্যাথা অনুভুত হতে পারে?
# আমাদের শ্বাসনালী এবং ফুসফুসের বিভিন্ন রোগে বুকে ব্যথা হতে পারে যেমন- নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস, টিঊবারকোলোসিস, প্লরাইটিস ইত্যাদি। তবে এই ধরনের রোগে কফ–কাশি, শ্বাসকষ্ট, বুকে কফ জমা, জ্বর, মাথাব্যথার পাশাপাশি বুকে ব্যথা থকে। এই বুকের ব্যথা যে হার্ট এর জন্য নয় তা রোগীরা সহজে বুঝতে পারে। তবে অনেক সময় ফুসফুসের অসুখের জন্য আমাদের হার্ট ফেইল করতে পারে– তখন ও কিন্তু বুকে ব্যথা হতে পারে। ধুলা, দূষিত বাতাস ও ধোঁয়া, ঠান্ডার হাত থেকে দূরে রাখা, জনাকীর্ণ জায়গা এড়িয়ে চলা এবং প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহনের মাধ্যমে ভাল থাকা যায় ।
# খাল্যনালীর বিভিন্ন সমস্যা যেমন হার্টবার্ণ এ বুকে জ্বালাপোড়ার পাশাপাশি বুকে ব্যথা নিয়ে দেখা দিতে পারে। অত্যাধিক পরিমান গ্যাস পেটে তৈরী হলে তা উপরের দিকে চাপ দেয় এবং বুকে ব্যথা হয়। এ ধরনের সমস্যা গুলো আজকাল মানুষের মধ্যে খুব দেখা যায়। অনিয়মিত খাদ্যগ্রহন, ঠিকমত ওষুধ না খাওয়া এই সমস্যার মূল কারন। নিয়ম মাফিক খাওয়া এই রোগ থেকে নিয়াময়ের একটি উওম পন্থা ।
# বুকে আঘাত পাওয়া যেমন কোন দুর্ঘটনার কারনে যা অত্যন্ত ব্যথার কারন হয়ে দাড়াতে পারে, এর পাশাপাশা বুকের পাঁজর ভেংগে যাওয়া বা কোন রূপ ইনফেকশন হওয়া বুক ব্যথার অন্যতম কারন। এই ধরনের সমস্যায় রোগীরা সাধারণত অনেকদিন ভুগে থাকেন এবং অনেক সময় স্থায়ী প্রতিবন্ধীতা তৈরী হয়ে থাকে। এর জন্য চিকিৎসক পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।
# কিছু সংখ্যক মানসিক রোগে রোগী বুকে ব্যথার কথা বলে থাকেন এবং তার কাছে মনে হয় যে তিনি বুকে ব্যথার জন্য মরে যাচ্ছেন, আসলে তার কোন রুপ বুকে কোন প্রবলেম নেই। তারা এই ব্যথা থেকে মুক্তি পাবার জন্য বিভিন্ন চিকিৎসক এর কাছে যেয়ে থাকেন। এইসব রোগিদের মানসিক চিকিৎসা দরকার হয়ে থাকে।
# মহিলাদের স্তনে ফোঁড়ার কারনে প্রচন্ড ব্যথা হয়ে থকে। এই সমস্যায় বুকের ব্যথাটি সাধারণত পুরো বুক জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। নিয়মিত স্তনের হাইজিন রক্ষা করলে এই সমস্যার প্রতিকার করা সম্ভব।
এছাড়াও আরো অনেক কারনে বুকে ব্যথা অনুভূত হতে পারে যেমন স্নায়ুতত্নের সমস্যা, মেটাবলিক প্রবলেম, ইত্যাদি। যে কারনেই বুকে ব্যথা হোক না হেলা ফেলা না করে তা গুরুত্বের সাথে নিতে হবে। যেকোনো অস্বাভাবিকতা, খারাপ লাগায় চিকিৎসক পরামর্শ নেওয়া উচিত।