class="post-template-default single single-post postid-25047 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

গ্লুকোমা : লক্ষণগুলো কী কী? কী করবেন

চোখের রোগগুলোর মধ্যে গ্লুকোমা খুবই মারাত্মক। সময়মত চিকিৎসা না করালে বড় বিপদ হতে পারে। চোখের উচ্চচাপই এ রোগের মূল কারণ। বংশগত কারণেও অনেক সময় গ্লুকোমা হয়ে থাকে।

চোখের গ্লুকোমার লক্ষণ ও চিকিৎসা নিয়ে যুগান্তরের পাঠকদের পরামর্শ দিয়েছেন  জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের অধ্যাপক ও গ্লুকোমা বিভাগীয় প্রধান ডা. ইফতেখার মো. মুনির।

গ্লুকোমা কী

গ্লুকোমা চোখের একটি জটিল রোগ, যাতে চোখের স্নায়ু ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ধীরে ধীরে চোখের দৃষ্টি কমে যায়। এমনকি এতে এক সময় রোগী অন্ধত্ববরণ করতে বাধ্য হয়। সময়মতো ধৈর্য ধরে চিকিৎসা করলে এ অন্ধত্বের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে চোখের অভ্যন্তরীণ উচ্চ চাপ এর জন্য দায়ী।

গ্লুকোমা রোগের লক্ষণ কী

অনেক ক্ষেত্রেই রোগী এ রোগের কোনো লক্ষণ অনুধাবন করতে পারেন না। চশমা পরিবর্তনের সময় কিংবা নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষার সময় হঠাৎ করেই চিকিৎসক এ রোগ নির্ণয় করে থাকেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিম্নের লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে। যেমন-

* ঘন ঘন চশমার গ্লাস পরিবর্তন হওয়া।

* চোখে ঝাপসা দেখা বা আলোর চারপাশে রংধনুর মতো দেখা।

* ঘন ঘন মাথাব্যথা বা চোখে ব্যথা হওয়া।

* দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে কমে আসা বা দৃষ্টির পারিপার্শ্বিক ব্যাপ্তি কমে আসা। অনেক সময় চলতে গিয়ে দরজার পাশে বা অন্য কোনো পথচারীর গায়ে ধাক্কা লাগা।

* মৃদু আলোতে কাজ করলে চোখে ব্যথা অনুভূত হওয়া।

* ছোট ছোট বাচ্চাদের অথবা জন্মের পর চোখের কর্নিয়া ক্রমাগত বড় হয়ে যাওয়া বা চোখের কর্নিয়া সাদা হয়ে যাওয়া, চোখ লাল হওয়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি।

কেন এ রোগ হয়

সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া না গেলেও অদ্যাবধি চোখের উচ্চচাপই এ রোগের প্রধান কারণ বলে ধরে নেওয়া হয়। তবে স্বাভাবিক চাপেও এ রোগ হতে পারে।

সাধারণত: চোখের উচ্চচাপই ধীরে ধীরে চোখের স্নায়ুকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং দৃষ্টিকে ব্যাহত করে। কিছু কিছু রোগের সঙ্গে এ রোগের গভীর সম্পর্ক লক্ষ করা যায় এবং অন্যান্য কারণেও এ রোগ হতে পারে যেমন-

* পরিবারের অন্য কোনো নিকটাত্মীয়ের (মা, বাবা, দাদা, দাদি, নানা, নানি, চাচা, মামা, খালা, ফুপু) এ রোগ থাকা।

* ঊর্ধ্ব বয়স (চল্লিশ বা তদূর্ধ্ব)।

* ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্ত চাপ।

* মাইগ্রেন নামক মাথাব্যথা।

* রাত্রিকালীন উচ্চ রক্ত চাপের ওষুধ সেবন।

* স্টেরোয়েড নামক ওষুধ দীর্ঘদিন সেবন করা।

* চোখের ছানি অপারেশন না করলে বা দেরি করলে।

* চোখের অন্যান্য রোগের কারণে।

* জন্মগত চোখের ত্রুটি ইত্যাদি।

এগুলোর মধ্যে কেবল চোখের উচ্চ চাপই ওষুধ দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, যা গ্লুকোমা রোগের প্রধান কারণ বলে মনে করা হয়।

গ্লুকোমা নির্ণয়ে কাদের চক্ষু পরীক্ষা করা জরুরি

* যাদের পরিবারে নিকটাত্মীয়ের এ রোগ আছে।

* চল্লিশ ঊর্ধ্ব প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স, বিশেষ করে যাদের ঘন ঘন চশমা পরিবর্তন করতে হচ্ছে।

* চোখে যারা মাঝে মাঝে ঝাপসা দেখেন বা ঘন ঘন চোখ ব্যথা বা লাল হওয়া অনুভব করেন।

* যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, মাইগ্রেন ইত্যাদি রোগ আছে।

* যারা চোখে দূরের জন্য মাইনাস গ্লাস ব্যবহার করেন।

গ্লুকোমা রোগের চিকিৎসা

গ্লুকোমা রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব; কিন্তু নিরাময় সম্ভব নয়। এ রোগে দৃষ্টি যতটুকু হ্রাস পেয়েছে তা আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। দৃষ্টি যাতে আর কমে না যায়, তার জন্য আমাদের চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে।

গ্লুকোমা সম্পর্কে জানা কেন জরুরি

* আমাদের দেশে এবং পৃথিবীব্যাপী অন্ধত্বের দ্বিতীয় প্রধান কারণ হলো চোখের গ্লুকোমা।

* অনেক ক্ষেত্রে এ রোগের লক্ষণ রোগী বুঝতে পারার আগেই চোখের স্নায়ু অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে।

* এ রোগে দৃষ্টির পরিসীমা বা ব্যাপ্তি ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে আসে এবং কেন্দ্রীয় দৃষ্টি শক্তি অনেকদিন ঠিক থাকে বিধায়, রোগী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে অনেক দেরি করে ফেলেন।

* গ্লুকোমা চোখের অনিরাময়যোগ্য অন্ধত্ব তৈরি করে। তাই একবার দৃষ্টি যতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তা আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।

* চোখের গ্লুকোমা রোগ হলে রোগীকে সারাজীবন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকতে হয়। অনেকেই শেষ পর্যন্ত চিকিৎসকের সংস্পর্শে থাকেন না বা ওষুধ ঠিকমতো ব্যবহার করেন না। ফলে এ রোগ নীরবে ক্ষতি করে অন্ধত্বের দিকে নিয়ে যায়।

প্রচলিত তিন ধরনের চিকিৎসা রয়েছে-

* ওষুধের দ্বারা চিকিৎসা

* লেজার চিকিৎসা

* শৈল্য চিকিৎসা বা সার্জারি

যেহেতু চোখের উচ্চচাপ এ রোগের প্রধান কারণ, তাই ওষুধের দ্বারা চোখের চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। একটি ওষুধ দ্বারা নিয়ন্ত্রণে রাখা না গেলে একাধিক ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। তদুপরি তিন মাস অন্তর অন্তর চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে এ রোগের নিয়মিত কতগুলো পরীক্ষা করিয়ে দেখতে হবে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা। যেমন-

* দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা

* চোখের চাপ পরীক্ষা

* দৃষ্টি ব্যাপ্তি বা ভিজুয়্যাল ফিল্ড পরীক্ষা

* চোখের নার্ভ পরীক্ষা

এ রোগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো নিয়মিত ওষুধ ব্যবহার করা এবং সময়মতো চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে চক্ষু পরীক্ষা ও তার পরামর্শ মেনে চলা।

রোগীর করণীয়

* চিকিৎসক রোগীর চক্ষু পরীক্ষা করে তার চোখের চাপের মাত্রা নির্ণয় করে তা নিয়ন্ত্রণের জন্য যে ওষুধের মাত্রা নির্ধারণ করে দেবেন তা নিয়মিত ব্যবহার করা।

* দীর্ঘদিন একটি ওষুধ ব্যবহারের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে; তাই নিয়মিত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া।

* সময়মতো চোখের বিভিন্ন পরীক্ষা (যা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে) করিয়ে দেখা, তার গ্লুকোমা নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা।

* পরিবারের সবার চোখ পরীক্ষা করিয়ে গ্লুকোমা আছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া।

এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা। ঠিকমতো ওষুধ ব্যবহার করে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চললে গ্লুকোমা রোগী তার স্বাভাবিক দৃষ্টি নিয়ে বাকি জীবন সুন্দরভাবে অতিবাহিত করতে পারেন।

গ্লুকোমা অন্ধত্বের অন্যতম প্রধান কারণ যার কোনো প্রতিকার নেই। প্রতিরোধই একমাত্র উপায়। চল্লিশোর্ধ্ব বয়সে আপনার চক্ষু পরীক্ষা করে চোখের চাপ জেনে নিন। চক্ষু চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হোন আপনার বা পরিবারের কারও গ্লুকোমা আছে কিনা। গ্লুকোমা প্রতিরোধ করুন, অন্ধত্বের অভিশাপ থেকে বেঁচে থাকুন। আপনার পরিবারের সবাইকে নিয়ে সুন্দর দৃষ্টিশক্তি নিয়ে পৃথিবীর সৌন্দর্য উপভোগ করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!