বিয়েবাড়ির চক্করে পড়ে কয়েকদিন ধরেই টানা কবজি ডুবিয়ে খেয়েছে মিষ্টু। একমাস পরে যখন ওয়েট মেশিনে দাঁড়াল, ওর মাথা খারাপ হয়ে যাওয়ার জোগাড়। পাক্কা ছ’কেজি মুটিয়েছে ও! পরের দিন থেকেই জিম আর ডায়েট ! তা ডায়েট তো করবে জানি, কারণ ডায়েট করে রোগা হতে কে না চায় বলো! কিন্তু ক্র্যাশ ডায়েট করে একধাক্কায় হঠাৎ করে রোগা হয়ে যাওয়াটা মোটেও কাজের কথা নয়। ওর জন্য পরে নানা সমস্যাও হতে পারে। তাই এর জন্য দরকার ব্যালান্সড ডায়েট, দরকার নিয়ম মেনে ক্যালোরি ইনটেক। আজকে তোমাদের জন্য নিয়ে এল ব্যালান্সড ডায়েটের সুলুকসন্ধান।
কী-কী খাবে?
এমনিতে ঠিক করে ডায়েট করতে গেলে যা-ইচ্ছে-তাই খাওয়া আর অনিয়ম কিন্তু বন্ধ করতে হবে। নির্দিষ্ট সময় মেনে খাবে তো বটেই, তার সঙ্গে বন্ধ করতে হবে ফাস্ট ফুড আর স্ট্রিট ফুড খাওয়া। ডায়েট চার্ট থেকে অতিরিক্ত ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার বাদ দিয়ে দাও। ভিটামিন আর মিনারেলস যুক্ত খাবার বেশি করে খেতে চেষ্টা করো।
ফল: ফলে যেমন প্রয়োজনীয় ক্যালোরি থাকে, তেমনই থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন। সিজ়নাল ফ্রুট বেশি করে খাও। যারা রোগা হওয়ার চেষ্টা করছ, তাদের ডায়েটে ফল থাকা মাস্ট। পাতিলেবু, কমলালেবু, মুসম্বি, বাতাবি লেবু ইত্যাদি সাইট্রাস জাতীয় ফল ছাড়াও ডায়েটে থাক নানা জাতীয় বেরি, তরমুজ, কিউয়ি, পিচ ইত্যাদি। আপেল, কলা ইত্যাদি ফলে প্রচুর পরিমাণে এনার্জি থাকে, তাই নিয়ম করে সেগুলোও খেতে পারো। গরমকালে আম, লিচু, জাম ইত্যাদি খেতে পারো। তা ছাড়া নানা রকম ফল একসঙ্গে মিশিয়ে ফ্রুট স্যালাড বানিয়েও খেতে পারো।
আরো পড়ুন : বন্ধ হচ্ছে ২৫ কোটি সিম!
সবজি: ডায়েট করছ, কিন্তু সবজি বাদ দিয়ে, এটা হয় না। ডায়েট চার্টে সবজি, বিশেষ করে সবুজ পাতাযুক্ত সবজি, শাক ইত্যাদি থাকা খুবই দরকার। কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন আর মিনারেলস থাকে। পালংশাক, সবুজ বিনস, বরবটি, ব্রকোলি রাখো চার্টে। সেই সঙ্গে গাজর, পটল, বাঁধাকপি, ঢ্যাঁড়স ইত্যাদি সবজিও থাক। সবজি সেদ্ধ করে স্টু বানিয়েও খেতে পারো। তবে যারা রোগা হতে চাইছ, তারা ডায়েট থেকে আলুটাকে বাদ রাখতেই পারো।
কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার, গ্রেন: রোগা হওয়ার জন্য যারা ডায়েট চার্ট থেকে কার্বোহাইড্রেট এক্কেবারে বাদ দিয়ে দেয়, তারা কিন্তু কাজটা মোটেই ভাল করে না। একবেলা ভাত খেয়ে বাকি একবেলা রুটি খাও। সম্ভব হলে ব্রাউন রাইস খেতে পারো। কারণ এমনি সাধারণ চালের থেকে ব্রাউন রাইস অনেক বেশি উপকারি, আর তাতে ফাইবারও থাকে বেশি। ময়দা বাদ দিয়ে আটা খাও। ব্রেকফাস্টে ব্রাউন ব্রেড, ওটস, মুয়েসলি, মালটিগ্রেন ব্রেড ইত্যাদি রাখতে পারো। রাতের ডিনার তাড়াতাড়ি করে ফেলতে চেষ্টা করো, রাতের খাবারও কম খাবে।
প্রোটিন: ঠিকঠাক ফিগার পাওয়ার জন্য ডায়েটে প্রোটিন রাখা মাস্ট। মাংস, মাছ, নানারকম ডাল, বিনস নিয়ম করে খাও। শরীরকে ঠিক করে পুষ্টি দিতে আর নিউট্রিয়েন্টসের যোগান দিতে প্রোটিন এক্কেবারে পারফেক্ট। কম ফ্যাট যুক্ত লিন মিট যেমন, চিকেন, মাছ খাও। একদিন ছাড়া একদিন ডিম খেতে পারো। পাঁঠার মাংস বা অন্যান্য রেড মিট এড়িয়ে চলাই ভাল হবে।
বাদাম ও অন্যান্য: নিয়ম করে আমন্ড, সানফ্লাওয়ার বীজ, আখরোট ইত্যাদি রাখার চেষ্টা করো। রোজ সকালে উঠে ভেজানো আমন্ড খেতে পারো। এছাড়া ছোলা ভেজানো ছোলাও কিন্তু শরীরের পক্ষে উপকারী। ডায়েটে রাখতে পারো ছাতুও।
ডেয়ারি প্রডাক্ট: ক্যালশিয়াম, ভিটামিন ডি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের জন্য দুধ ও দুগ্ধজাত নানা পদার্থ তোমাকে খেতেই হবে। ছানা, পনির খাও। তবে চিজ়, ক্রিম, মাখন ইত্যাদি এড়িয়ে যাওয়াই ভাল। মিষ্টি খেতে যতই ভালবাসো না কেন, বেশি মিষ্টি খেয়ো না।
তেল: আজ্ঞে হ্যাঁ, যতই মশলাদার আর রিচ খাবার খেতে পছন্দ করো না কেন, রান্নাবান্নায় তেল এড়িয়ে যাও। আর বাইরের খাবার খাওয়া বন্ধ করো।
এড়িয়ে চলো: অ্যালকোহল, ফ্যাট, কাঁচা নুন, চিনি, কেক, প্রসেস করা মাংস, বেকন, চিজ়, কুকিজ়, কোল্ড ড্রিঙ্কস, প্যাকেট করা ফলের রস, আইস ক্রিম, পিৎজ়া ইত্যাদি।