Sunday, May 5
Shadow

হতে চাইলে রেডিও জকি

রেডিও জকি

নিজেকে রেডিও জকি (আরজে) হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলে কমপক্ষে এইচএসসি পাস হতে হয়। বেতারের বিভিন্ন অনুষ্ঠান শুনতে হয়। কখনো কখনো নিতে হয় প্রশিক্ষণ। আসুন জেনে নেই রেডিও জকি (আরজে) হওয়ার কায়দা-কানুন।

সময়কাল
রেডিও জকি (আরজে) প্রশিক্ষণ কোর্সগুলো সাধারণত ২ থেকে ৩ মাসের হয়ে থাকে।

প্রাক-টিভি আর ইন্টারনেট যুগে খবরের কাগজ আর খাতা-কলমের বাইরে রেডিয়োই ছিল মানুষের ঘরে-বসে-বিনোদন-এর একমাত্র মাধ্যম। আমাদের জীবনে টেলিভিশন ও ইন্টারনেটের এন্ট্রির পর রেডিয়ো তার আবেদন খানিকটা হারাল বটে, তবে খুব শিগগিরিই একাধিক বেসরকারি সংস্থা এফএম রেডিয়ো চালু করে তার হৃতগৌরব ফিরিয়ে আনলেন অনেকখানিই।

রেডিয়ো জকি হতে চাও?

অনন্য সেন্স অফ হিউমার আর প্রতিভা থাকলে এই পেশায় আসতে পার তুমিও। কীভাবে, জানাচ্ছে ১৯ ২০

প্রাক-টিভি আর ইন্টারনেট যুগে খবরের কাগজ আর খাতা-কলমের বাইরে রেডিয়োই ছিল মানুষের ঘরে-বসে-বিনোদন-এর একমাত্র মাধ্যম। আমাদের জীবনে টেলিভিশন ও ইন্টারনেটের এন্ট্রির পর রেডিয়ো তার আবেদন খানিকটা হারাল বটে, তবে খুব শিগগিরিই একাধিক বেসরকারি সংস্থা এফএম রেডিয়ো চালু করে তার হৃতগৌরব ফিরিয়ে আনলেন অনেকখানিই। সেই থেকে আজও, চড়াই-উৎরাই থাকলেও, রেডিয়ো তার স্বাভাবিক জৌলুস কখনওই হারায়নি বিশেষ। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে বলাই যায়, গানবাজনা যাদের প্যাশন, সেইসব ছেলে-মেয়েদের পক্ষে এই মুহূর্তে রেডিয়ো জকিইয়িংয়ের মতো এক্সাইটিং, প্রমিসিং এবং চ্যালেঞ্জিং কেরিয়ার খুব কমই আছে।

কাজটা কী?
রেডিয়ো জকি (সংক্ষেপে আর জে)-রা মূলত রেডিয়োয় সঙ্গীতানুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। শ্রোতারা যাতে গান শুনে এবং সঞ্চালকের বক্তব্য শুনে অনুষ্ঠানটা উপভোগ করেন, সেই পুরো দায়িত্বই থাকে একজন আর জে-র কাঁধে। রেডিয়ো মানে যেহেতু পুরোটাই কানে শোনা সংক্রান্ত ব্যাপার-স্যাপার, এই পেশায় তাই তোমার পরিচিতি (যদি কখনও হয়, তা হলে) হবে তোমার গলার স্বরে। অনুষ্ঠান পরিচালনার মধ্যে থাকে শ্রোতাদের অনুরোধ শুনে সেইমতো গান শোনানো, অতিথিদের ইন্টারভিউ নেওয়া, কনটেস্ট ম্যানেজ করা, গান সম্পর্কে শ্রোতাদের তথ্য দেওয়ার পাশাপাশি আবহাওয়া ও সেদিনের ট্র্যাফিক সম্পর্কে তাদের অবহিত করার মতো একগুচ্ছ কাজ। এই পেশায় মাথা ঠান্ডা রেখে অত্যন্ত সপ্রতিভ হয়ে কাজ করার ক্ষমতা তো চাই-ই চাই, উপরন্তু প্রয়োজন প্রচণ্ড খাটুনি করার মানসিকতা। এ তো গেল রেডিয়ো জকির পেশায় পা রাখার জন্য প্রয়োজনীয় গুণগুলোর কথা। তার পাশাপাশি এই পেশায় যদি নাম করতে চাও, সেক্ষেত্রে কিন্তু দরকার নিজস্ব স্বতন্ত্র ও অনন্য স্টাইল অফ কমিউনিকেশন। আদর্শ রেডিয়ো জকি সে-ই, যার সঙ্গে সত্যি-সত্যিই ‘কথায় পেরে ওঠা মুশকিল’। তা বলে শ্রোতাদের সঙ্গে কথা বলার সময়ও কি অন্যকে বলার সুযোগ না দিয়ে আর জে একাই বলে যাবে যা বলার? উত্তরটা, বলাই বাহুল্য, ‘না’! রেডিয়ো জকিকে তাই শ্রোতা বুঝে সেইমতো হতে হবে ব্যালেন্সড।

এই পেশায় পুঁথিগত লেখাপড়ার চেয়ে অনেক বেশি কদর করা হয় আর জে হিসেবে প্রার্থীর প্রতিভার। তবে, প্রথাগত শিক্ষাকে গুরুত্ব না দেওয়া হলেও একখানা গ্র্যাজুয়েশন কিংবা অন্তত উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডিটুকুও না পেরলে কিন্তু কাজ পাওয়া চাপের।
একজন রেডিয়ো জকির পক্ষে সবচেয়ে জরুরি হল বিভিন্ন অকেশন অনুযায়ী কণ্ঠস্বর ও বাচনভঙ্গি পালটে-পালটে ফেলা। তা বাদে একজন আর জে-র উচ্চারণ স্পষ্ট হওয়া উচিত, যে ভাষায় সে কথা বলছে, তার উপর তার যথেষ্ট দখল এবং অনর্গল কথা বলে যেতে পারার ক্ষমতা, চাই এসবও।
রেডিয়ো এমন এক প্ল্যাটফর্ম, যেখানে একজন আর জে-কে সাত থেকে সত্তর, যে কারও সঙ্গেই ইন্টার‌্যাক্ট করতে হতে পারে। এই কথাটা মাথায় রেখে ইন্ডিভিজুয়াল শ্রোতার সঙ্গে আর জে-কে মিশতে হয় এক্কেবারে আলাদা-আলাদা রকম ভাবে। সফল ও বিখ্যাত আর জে মানেই তার সেন্স অফ হিউমার হওয়া চাই সবার সেরা। এবাদে রেডিয়ো জকিকে হতে হয় ঠান্ডা মাথার। উলটোদিকের শ্রোতার কাছ থেকে যত প্ররোচনাই আসুক, মেজাজ হারিয়ে একবার বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়লেই আর জে হিসেবে তোমার গ্রহণযোগ্যতাও মানুষের মনে কমতে বাধ্য!

কী ধরনের কাজ পাওয়া যায়?
যে অনুষ্ঠান সঞ্চালনার দায়িত্ব কোনও রেডিয়ো জকিকে দেওয়া হচ্ছে, তার প্রকৃতির উপর নির্ভর করে রেডিয়ো জকিকে নিজেকে পালটে-পালটে, ভেঙেচুরে আবার নতুন করে সাজাতে হয়। কোনও এক রেডিয়ো জকির নির্দিষ্ট অনুষ্ঠান মানুষের কতটা পছন্দ হবে, তা কিন্তু প্রায় পুরোটাই নির্ভর করে একান্তভাবে সেই আর জে-র দক্ষতার উপর।
আশপাশের দিন-দুনিয়ায় কোথায় কী হচ্ছে, রাজনীতি থেকে খেলাধুলো, বিনোদন থেকে বিজ্ঞাপন, সবটা সম্পর্কেই একজন আর জে-কে হতে হয় ওয়াকিবহাল। আর জে-র একটা গুরুদায়িত্ব যেহেতু শ্রোতাদের জন্য গান বাজানো, তাই মিউজ়িক্যাল ইন্সট্রুমেন্ট এবং কম্পিউটারেও তাদের হতে হয় স্বচ্ছন্দ।

কাজটা পাব কী করে?
আর জে হিসেবে কাজ পাওয়া যেতে পারে এ আই আর (অল ইন্ডিয়া রেডিয়ো) থেকে শুরু করে দেশজোড়া আরও একাধিক রেডিয়ো স্টেশনের যে কোনওটিতেই। কাজ পেতে হলে আবেদন করার উপায় দুটো। হয় রেডিয়ো স্টেশনের ডাকে অডিশনে গিয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে হবে, নইলে যোগাযোগ করতে রেডিয়ো সফ্‌টওয়্যার প্রোডিউসার কোম্পানির সঙ্গে। অনেক রেডিয়ো স্টেশনেরই নিজস্ব ওয়েবসাইটে রিক্রুটমেন্টের নিজস্ব পরিসর থাকে। আবেদন করা যায় সেখানে গিয়েও। একবার কাজে ঢুকে পড়ার পর দু’-তিনবছরের অভিজ্ঞতা অর্জন করে নিতে পারলে তারপর টেলিভিশন এবং রেডিয়োর বিজ্ঞাপনে ডাবিং করে দু’ পয়সা উপার্জন করা যায়। তা বাদে আর জে-র কাজ করতে-করতে কথাবার্তায় যত তুমি চোস্ত হবে, বিভিন্ন লাইভ শো-এ অ্যাঙ্করিংয়ের সুযোগও ততই ছুটে-ছুটে আসবে তোমার সামনে।

ব্যস, এই। আর কী। রেডিয়ো জকিইয়িং নিয়ে লেখাপড়া করা যেতেই পারে চাইলে। দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এই বিষয়ে নানারকম ছোট-বড় কোর্স করানো হয়। সেসবের খোঁজ এই লেখায় থাকল না এই কারণেই যে, আর জে হতে চাইলে ওই কোর্সগুলো কখনওই বাধ্যতামূলক নয়। একান্তই যদি তোমার প্রতিভা থাকে আর থাকে সফল আর জে হওয়ার জন্য অসম্ভব জেদ, তা হলেই এই পেশায় তোমার যুগপৎ এন্ট্রি ও উন্নতি কেউ ঠেকায় সাধ্যি কী!

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!

error: Content is protected !!