class="post-template-default single single-post postid-49276 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

রোমান্টিক গল্প : মিথ্যার আশ্রয়

লেখক: মিশক আল মারুফ

রোমান্টিক গল্প মিথ্যার আশ্রয়

আমার নতুন গার্লফ্রেন্ড তিথির সাথে আজ দেখা করতে যাচ্ছি। এই নিয়ে আমার উত্তেজনার শেষ নেই কেননা এখন পর্যন্ত যতগুলো মেয়েকে পটিয়েছি তার থেকে তিথির মতো সুন্দরী মেয়ে আর দুটো নেই।

তিথির সাথে আমার পরিচয়টা গত একমাস যাবৎ ফেইসবুকের কল্যাণেই। মূলত আমার ফেইক আইডি দিয়েই ওর সাথে পরিচয়। এখন অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে যে আসল প্রোফাইল বাদ দিয়ে কেনো আমি ভুয়া আইডি দিয়ে প্রেম করছি? এর উত্তরটাও বেশ সহজ, মূলত আমার চেহারা তেমন একটা ভালো না তাছাড়া গায়ের রংটা কালো না হলেও বেশ শ্যামবর্ণের। অপরদিকে তিথির প্রোফাইল ঘেটে আমি ওর যতগুলো ছবি দেখেছি তাতে আমার মনে হয়েছে ওর চেহারায় একটু খানি তামিল নায়িকাদের রেশ বয়ে গেছে। যেমনি ধবল সুন্দর ওর শরীর তেমনি চেহারার সুনিপুণ কারুকার্য।

অপরদিকে আমার প্রোফাইলে দেওয়া ছিল এক সুদর্শন পুরুষের বেশ কয়েকটি ছবি। আমার যতটুকু ধারণা তিথিও আমার এসব ভুয়া ছবি দেখেই হয়তো প্রেমে পরেছে।

রেস্টুরেন্টে বেশ কিছুক্ষণ যাবৎ বসে আছি। আমি ভাবছি যে তিথি যদি আমার এমন কুৎসিত চেহারা দেখে কিংবা আমি যে ওর সাথে প্রেম করার সময় মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছি সেটা যদি জানতে পারে তবে ওর প্রতিক্রিয়া কেমন হবে? ও কি আমাকে অপমান করে কিংবা থাপ্পর মেরে প্রস্থান করবে? নাহ! যতই অপমান করুক আমি ভেবে রেখেছি দরকার হলে ওর পায়ে পরে ক্ষমা চাইবো তবুও ওকে যেতে দিবো না এতো সহজে। তাছাড়া তিথি নিজেই আমাকে একদিন মেসেঞ্জারে বলেছিল যে মোবাইলে ও যতটা সুন্দর বাস্তবে ততটা নয় তাই যদি সামন-সামনি আমাদের দেখা হয় তখন যেনো ওকে আমি অপছন্দ না করি। আমিও তখন হাসিমুখে কথা দিয়েছিলাম কক্ষনোই ওকে আমি অপছন্দ করবো না। যদিও সেই ঘটনার পর আমি ফেইসবুক থেকে ওর ছবিগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছিলাম এবং আমার বেশ কিছু বিশেষজ্ঞ বন্ধুকেও ওর ছবি দেখিয়েছি। সবাই বলেছে পিকচার যতই এডিট করুক না কেন মেয়েটার চেহারার যে সৌন্দর্য্য তা কোনো অংশেই কম নয়।
রেস্টুরেন্টে বসে এতোসব ভাবনার মাঝে হঠাৎই মোবাইলে রিং বেজে উঠলো। রিং বাজতেই আমার বুকে ধুঁক করে একটি প্রকম্পন অনুভূত হয়। বেশ সাবধানতার সাথে ফোনটি হাতে নিয়েই রিসিভ করলাম। ওপাশ থেকে তিথি বেশ ইতঃস্তত ভঙ্গিতে বললো,
“কি ব্যাপার কই তুমি? আমিতো রেস্টুরেন্টের বাহিরে।”
আমিও বেশ থতমত খেয়ে বলি,
“ও আচ্ছা! হ্যাঁ তাহলে ভিতরে চলে আসো। আমি ভিতরেই বসা আছি।”
“আচ্ছা আসতেছি।”
এই বলেই কলটি ওপাশ থেকে কেটে দেয়।
রোমান্টিক গল্প : মিথ্যার আশ্রয়
আমি অধীর আগ্রহ নিয়ে রেস্টুরেন্টের গেটের দিকে তাকিয়ে আছি আমার প্রাণপ্রিয় প্রেয়সীকে এক নজর সামনাসামনি দেখার জন্য। কিন্তু দু’মিনিট চলে যাওয়ার পরও তিথির আশার নাম নেই। আমার উত্তেজনার রেশ যেন কোনোভাবেই থামছে না। হঠাৎই দুজন কপোত-কপোতী রেস্টুরেন্টের গেট দিয়ে প্রবেশ করে। সীমিত সময়ের জন্য আমি নিরাশ হই বটে কিন্তু তার পরক্ষণেই আরো একটি মেয়ে রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করে। ভালোভাবে খেয়াল করতেই বুঝতে পারি এতো আমার তিথি নয়, পুনরায় নিরাশ হই ঠিকই তবে মেয়েটিকে দেখে কেমন যেনো চেনা চেনা লাগছে। আরে এতো আমাদের পাশের ফ্ল্যাটের মেয়েটা যে সারাদিন রূপচর্চা নিয়ে ব্যস্ত থাকে কিন্তু চেহারার চ-ও নেই। বাহিরে বের হলে কতধরণের মেকআপ যে মুখে ব্যবহার করে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। মাঝেমধ্যে আমার মনে হয় কোদাল দিয়ে যদি ওর গালে একটা ঘষা দেই তাহলে নিশ্চিত এককেজি ময়দা কোদালের মাথায় চলে আসবে।
মেয়েটি এসেই এদিক ওদিক তাকাচ্ছে, আমাকে দুই একনজর দেখেও পরক্ষণেই মুখ ঘুরিয়ে ফেললো। আমিও তেমন ওকে পাত্তা দিচ্ছি না কিন্তু এদিকে তিথির আসার উত্তেজনায় আমার প্রসাবে খানিকটা চাপ দেওয়া শুরু করেছে।
তর সইতে না পেরে তখনি তিথির নাম্বারে কল দিলাম। কিন্তু ওপাশ থেকে কলটি ব্যস্ত দেখাচ্ছে, মনে হয় তিথিও আমাকে কল দিয়েছে। পুনরায় আবার যখন কল দেই সেবারও ব্যস্ত কিন্তু একটি বিষয় খেয়াল করলাম যে আমি যখন কল দিচ্ছি তখন সেই মেকআপ সুন্দরীও কাউকে কল দিয়ে নিরাশ হচ্ছে, হয়তো ওর বয়ফ্রেন্ড কল ধরছে না। কি মনে করে যেন কৌতূহলবসত আমি আর তৃতীয়বার কল দিলাম না উল্টো সেই মেয়েটির দিকে আমি তাকিয়ে আছি। মেয়েটিও কেমন যেন কিছুক্ষণ পর পর আড়চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছে। তৃতীয়বারে মেয়েটি যখন কাউকে কল দিলো তখন অনাকাঙ্ক্ষিত কারণ বসত আমার মোবাইলেই রিং বেজে উঠলো। মোবাইলে রিং বাজতেই মেয়েটি অবাক হয়ে একবার আমার দিকে তাকাচ্ছে আবার ওর মোবাইলের দিকে তাকাচ্ছে।

তিথি আমার সামনে নিশ্চুপে বসে আছে আর আমিও নিশ্চুপ। কারো মুখেই কোনো কথা নেই, হ্যাঁ ঠিকই ভাবছেন তিথি আর কেউ নয় বরং পাশের ফ্ল্যাটের সেই মেকআপ সুন্দরী মেয়েটিই। আমি আজকে তিন হাজার টাকা বাসা থেকে নিয়ে এসেছিলাম এই ভেবে যে আজকে আমার সুন্দরী প্রেমিকাকে ইচ্ছেমতো খুশি করবো যাতে ও আমার চেহারা দেখে নিরাশ হলেও ওকে এটা ওটা খাইয়ে খুশি করতে পারি। কিন্তু আমার সেই তিথিও যে আমার মতোই ফেইক এটা জানলে তিন হাজার কেনো তিন টাকাও নিয়ে আসতাম না। তবে নিজের দিক ভাবলে চলবে না সেটাও ঠিক, কারণ ওর মনেও যে আমার মনের মতোই আগুন জ্বলছে তাও অস্বীকার করার সুযোগ নেই।

কিছুক্ষণ পর ওয়েটার এসে বললো,

“স্যার! আপনাদের জন্য কি অর্ডার করবো?”

ওয়েটারের কথা শুনে আমি মেয়েটার দিকে একনজর তাকালাম এমনকি সেও তাকালো। আমি হাত কচলাতে কচলাতে হাসিমুখে ওয়েটার কে বললাম,

“আচ্ছা আমরা একটু পরে অর্ডার দিচ্ছি। আপনাকে ডাক দিবো কিছু লাগলে।”

“জ্বী স্যার! ঠিক আছে।”

এই বলেই সে প্রস্থান করলো।

মনে মনে ভাবছি মেয়েটিকে কিছুক্ষণ ঝাড়ি দিয়ে বাসায় চলে যাই, কারণ এমন মেয়েকে ঝাড়ি দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। যখনি নিরবতা ঠেলে কিছু বলতে যাবো ঠিক তখনি তিথি অর্থাৎ আমার ফেইক গার্লফ্রেন্ড অস্ফুট স্বরে ইতঃস্তত ভঙ্গিতে বললো,

“আমি আসলে খুবই দুঃখিত আপনার সাথে এরকম একটি মিথ্যার আশ্রয় নেওয়ার জন্য। আসলে কি বলবো আমারো সুন্দরী হতে ইচ্ছে হয় কিন্তু আমি জানতামনা এসব কৃত্রিম জিনিস দিয়ে কখনো সুন্দরী হওয়া যায় না। বান্ধবীরা যখন নিজেদের গায়ের চামড়া দেখিয়ে একসাথে পাঁচ-ছয়টা প্রেম করতো তখন আমার খুব আফসোস হতো। কারণ এই কৃত্রিম সুন্দরী মেয়ের দিকে কোনো ছেলে ঘুরেও তাকাতো না। অথচ আমি চাইতাম জীবনে আমাকে যদি কোনো ছেলে ভালোবাসে তাহলে আমি তার হাতটি সবসময় আগলে ধরে রাখবো, বান্ধবীদের মতো এতোগুলো ছেলের সাথে মিথ্যা প্রেমের অভিনয় কখনোই করবো না। কিন্তু কে জানতো এসব মিথ্যা দিয়ে কখনো ভালোবাসা হয়না এবং চেহারা সুন্দর না হলে কোনো ছেলে ঘুরেও তাকায় না। আর আমি এও জানতাম এতো কিছু করে আমি যার সাথেই দেখা করতে আসি না কেনো সে আমাকে কখনোই পছন্দ করবে না, তবুও এটা ছিল একটুখানি মনের প্রশান্তি খোঁজার চেষ্টা।”

এই বলেই মেয়েটির দুচোখ থেকে দুফোঁটা অশ্রু ওর গাল বেয়ে গড়িয়ে পরলো এবং মেকআপের আস্তরণকেও সামান্য ধুয়ে দিয়ে গেলো। আমি একদমই চুপচাপ, মুখ থেকে সামান্য টু শব্দটিও বের করলাম না। পরক্ষণেই তিথি নিজের চোখের অশ্রুটুকু মুছে বললো,

রোমান্টিক গল্প : মিথ্যার আশ্রয়

“আপনিও যে আমার মতোই সেইম কাজ করেছেন সেটা আমি বুঝতে পেরেছি। তবে আপনাকে আমার বেশ ভালোই লেগেছে। যাইহোক আপনার সাথে এরকম কাজ করার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত, ক্ষমা করবেন। আজ তাহলে আসি।”

এই বলেই যখন তিথি ভ্যানিটি ব্যাগটি নিয়ে প্রস্থান করতে যাবে তখনি পেছন থেকে আমি ওর ব্যাগটি টান দিয়ে ধরে ফেলি। কৌতূহল বসত ও পেছনে ফিরে তাকাতেই আমি বললাম,

“তুমি না ওয়াদা করেছিলে আমাকে সামনাসামনি দেখে তুমি চলে যাবেনা? এমনকি তুমিও বলেছিলে তোমাকে দেখে যেনো আমি চলে না যাই। তাহলে এখন কেনো আমাকে রেখে চলে যাচ্ছো? হয়তো আমরা দুজনেই ধোঁকাবাজির আশ্রয় নিয়েছি কিন্তু চাইলেই আমরা নতুনভাবে শুরু করতে পারি। তোমার উপরটা কালো হলেও ভিতরটা যে কতটা সুন্দর সেটা আমি তোমার কথাগুলো না শুনলে হয়তো বুঝতে পারতাম না। এক্ষুণি বসো এখান থেকে এক পাও নড়বে না।”

তখনি আমি ওয়েটার কে ডাক দিয়ে একসাথে আট টা দামী আইটেম অর্ডার দিলাম। মেয়েটি আমার এমন কান্ডে হয়তো অবাক হয়েছে তবে আমি একটা জিনিস উপলব্ধি করতে পারছি যে মেয়েটিকে যদি আমি বিয়ে করি তবে প্রকৃত ভালোবাসার মর্মটা আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পারবো যেটা হয়তো সব মেয়েদের মধ্যে পাওয়া যাবে না। মিথ্যা থেকে যদি ভালো কিছুর সূচনা হয় তাহলে দোষ কি তাতে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!