মনোসাইট শ্বেতকণিকার মাধ্যমে ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় জীবাণু ধ্বংসের ধাপগুলো সহজ, ধারাবাহিক এবং মজার উদাহরণসহ দেওয়া হলো। সেইসঙ্গে পুরো প্রক্রিয়াটি সহজে মনে রাখার একটি ট্রিকসও আছে।

উদাহরণ দিয়ে শুরু করা যাক:
ধরে নাও, তোমার শরীর হলো একটা রাজ্য — শরীরপুর। শরীরপুরে একদল সৈনিক আছে যাদের কাজ হলো শত্রু (জীবাণু) দেখামাত্র ধ্বংস করে ফেলা। এদেরই একজন মনোসাইট — একদম চুপচাপ কিন্তু দারুণ এক গুপ্তচর যোদ্ধা! এখন দেখা যাক, মনোসাইট কীভাবে এই ফ্যাগোসাইটোসিস নামক অস্ত্র ব্যবহার করে জীবাণু ধ্বংস করে:
ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ার ধাপসমূহ (মনোসাইটের ভূমিকা):
১. শত্রুকে চিনে ফেলা (Detection & Recognition):
মনোসাইট চারপাশে টহল দিচ্ছে। হঠাৎ সে দেখতে পেল এক দুষ্টু জীবাণু রাজ্যে ঢুকে পড়েছে! জীবাণুর শরীরে থাকে এক ধরনের ‘পরিচয়পত্র’ বা অ্যান্টিজেন। মনোসাইট সেটা বুঝে ফেলে — “আরে, এই তো শত্রু!”
উদাহরণ: সিকিউরিটি গার্ডের হাতে থাকা ফেস রিকগনিশন ক্যামেরা — অপরিচিত মুখ দেখলেই বাজবে অ্যালার্ম!
২. আবদ্ধ করা (Engulfment):
মনোসাইট তার চারপাশের ঝিল্লির মতো হাত বাড়িয়ে জীবাণুকে ঘিরে ফেলে — একেবারে জ্যান্ত গিলে ফেলে, কিন্তু নিজের শরীরের ভেতরে! এই অবস্থাকে বলে ফ্যাগোজোম (phagosome) তৈরি হওয়া।
উদাহরণ: তুমি একটা মশা ধরে ফেলেছো গ্লাস দিয়ে — এখন সে গ্লাসের ভেতরে বন্দি।
৩. হজমযন্ত্র সংযুক্ত করা (Formation of Phagolysosome):
এবার মনোসাইট তার শরীরের ভেতর থেকে লাইসোজোম নামের একধরনের শক্তিশালী রাসায়নিক বোমা আনল, আর সেই বোমার ভেতর থাকা এনজাইম (lytic enzymes) ফ্যাগোজোমের সঙ্গে যুক্ত হলো। তখন এটা হয়ে গেল ফ্যাগোলাইসোজোম — যুদ্ধক্ষেত্র প্রস্তুত!
উদাহরণ: এটা যেন আপনি গ্লাসের ভেতরে ধরা মশাটার ওপর কীটনাশক স্প্রে করলেন!
৪. ধ্বংস করা (Digestion):
লাইসোজোমের শক্তিশালী এনজাইম জীবাণুকে একেবারে গলিয়ে ফেলে — তার প্রোটিন, চর্বি, ডিএনএ সবকিছু ভেঙে ফেলা হয়।
উদাহরণ: এটা যেন মশাটাকে স্প্রে দিয়ে এমনভাবে মেরে ফেললেন, তার কিছুই আর চেনার মতো রইল না!
৫. বর্জ্য বের করে দেওয়া (Exocytosis):
সবকিছু ধ্বংস করার পর যা কিছু অপচনশীল বা অপ্রয়োজনীয় থাকে, সেগুলো মনোসাইট নিজের শরীরের বাইরে বের করে দেয়।
উদাহরণ: মশা মারা শেষে গ্লাসটা ধুয়ে বাইরে রেখে দিলেন।
সংক্ষেপে মনে রাখার কৌশল (Mnemonic):
চা-আ-লা-ধ্বা-বর্জ
- চা = চিনে ফেলা
- আ = আবদ্ধ করা
- লা = লাইসোজোম যুক্ত করা
- ধ্বা = ধ্বংস করা
- বর্জ = বর্জ্য ফেলা
আরও তথ্য:
- মনোসাইট রক্তে থাকে অল্প সময়, পরে শরীরের টিস্যুতে চলে গিয়ে ম্যাক্রোফেজে রূপ নেয় — তখন তার ফ্যাগোসাইটোসিস ক্ষমতা আরও বেড়ে যায়!
- এটি শুধু জীবাণু নয়, মৃত কোষ বা কোষাবশেষও পরিষ্কার করে — একেবারে শরীরের ঝাড়ুদার!