Saturday, June 14

শ্বেতকণিকার মাধ্যমে ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় জীবাণু ধ্বংসের ধাপ

মনোসাইট শ্বেতকণিকার মাধ্যমে ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় জীবাণু ধ্বংসের ধাপগুলো সহজ, ধারাবাহিক এবং মজার উদাহরণসহ দেওয়া হলো। সেইসঙ্গে পুরো প্রক্রিয়াটি সহজে মনে রাখার একটি ট্রিকসও আছে।

ফ্যাগোসাইটোসিস

উদাহরণ দিয়ে শুরু করা যাক:

ধরে নাও, তোমার শরীর হলো একটা রাজ্য — শরীরপুর। শরীরপুরে একদল সৈনিক আছে যাদের কাজ হলো শত্রু (জীবাণু) দেখামাত্র ধ্বংস করে ফেলা। এদেরই একজন মনোসাইট — একদম চুপচাপ কিন্তু দারুণ এক গুপ্তচর যোদ্ধা! এখন দেখা যাক, মনোসাইট কীভাবে এই ফ্যাগোসাইটোসিস নামক অস্ত্র ব্যবহার করে জীবাণু ধ্বংস করে:

ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ার ধাপসমূহ (মনোসাইটের ভূমিকা):

১. শত্রুকে চিনে ফেলা (Detection & Recognition):

মনোসাইট চারপাশে টহল দিচ্ছে। হঠাৎ সে দেখতে পেল এক দুষ্টু জীবাণু রাজ্যে ঢুকে পড়েছে! জীবাণুর শরীরে থাকে এক ধরনের ‘পরিচয়পত্র’ বা অ্যান্টিজেন। মনোসাইট সেটা বুঝে ফেলে — “আরে, এই তো শত্রু!”

উদাহরণ: সিকিউরিটি গার্ডের হাতে থাকা ফেস রিকগনিশন ক্যামেরা — অপরিচিত মুখ দেখলেই বাজবে অ্যালার্ম!

২. আবদ্ধ করা (Engulfment):

মনোসাইট তার চারপাশের ঝিল্লির মতো হাত বাড়িয়ে জীবাণুকে ঘিরে ফেলে — একেবারে জ্যান্ত গিলে ফেলে, কিন্তু নিজের শরীরের ভেতরে! এই অবস্থাকে বলে ফ্যাগোজোম (phagosome) তৈরি হওয়া।

উদাহরণ: তুমি একটা মশা ধরে ফেলেছো গ্লাস দিয়ে — এখন সে গ্লাসের ভেতরে বন্দি।

৩. হজমযন্ত্র সংযুক্ত করা (Formation of Phagolysosome):

এবার মনোসাইট তার শরীরের ভেতর থেকে লাইসোজোম নামের একধরনের শক্তিশালী রাসায়নিক বোমা আনল, আর সেই বোমার ভেতর থাকা এনজাইম (lytic enzymes) ফ্যাগোজোমের সঙ্গে যুক্ত হলো। তখন এটা হয়ে গেল ফ্যাগোলাইসোজোম — যুদ্ধক্ষেত্র প্রস্তুত!

উদাহরণ: এটা যেন আপনি গ্লাসের ভেতরে ধরা মশাটার ওপর কীটনাশক স্প্রে করলেন!

৪. ধ্বংস করা (Digestion):

লাইসোজোমের শক্তিশালী এনজাইম জীবাণুকে একেবারে গলিয়ে ফেলে — তার প্রোটিন, চর্বি, ডিএনএ সবকিছু ভেঙে ফেলা হয়।

উদাহরণ: এটা যেন মশাটাকে স্প্রে দিয়ে এমনভাবে মেরে ফেললেন, তার কিছুই আর চেনার মতো রইল না!

৫. বর্জ্য বের করে দেওয়া (Exocytosis):

সবকিছু ধ্বংস করার পর যা কিছু অপচনশীল বা অপ্রয়োজনীয় থাকে, সেগুলো মনোসাইট নিজের শরীরের বাইরে বের করে দেয়।

উদাহরণ: মশা মারা শেষে গ্লাসটা ধুয়ে বাইরে রেখে দিলেন।

সংক্ষেপে মনে রাখার কৌশল (Mnemonic):

চা-আ-লা-ধ্বা-বর্জ

  • চা = চিনে ফেলা
  • = আবদ্ধ করা
  • লা = লাইসোজোম যুক্ত করা
  • ধ্বা = ধ্বংস করা
  • বর্জ = বর্জ্য ফেলা

আরও তথ্য:

  • মনোসাইট রক্তে থাকে অল্প সময়, পরে শরীরের টিস্যুতে চলে গিয়ে ম্যাক্রোফেজে রূপ নেয় — তখন তার ফ্যাগোসাইটোসিস ক্ষমতা আরও বেড়ে যায়!
  • এটি শুধু জীবাণু নয়, মৃত কোষ বা কোষাবশেষও পরিষ্কার করে — একেবারে শরীরের ঝাড়ুদার!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!